রানা থারু রমণী-রুপালি সাদা উজ্জ্বল পোষাক এবং কালো শালে তাদের অসাধারণ সুন্দর দেখাচ্ছে। ছবি সোলভেগ বোরগেন-এর । অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।
একদা সমৃদ্ধ ভূমি মালিক রানা থারু সম্প্রদায়, যারা নেপালের সুদূর পশ্চিমের কাইলালাই এবং কাঞ্চনপুর জেলার আদিবাসী- তারা লুটপাট, বল পূর্বক দখল এলাকা এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
তাদের বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোতে ডাকাতরা এসে নিয়মিত লুটপাট করে নিয়ে গেছে। যখন শুকলা পান্থ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকা পরিধি আরো বিস্তৃত করা হয় তখন তারা উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে এবং ভূমি বন্দোবস্ত কর্মসূচির আওতায় তারা তাদের পুর্ব পুরুষের অনেক ভূমি হারিয়েছে। যখন চিতওয়ান-এর থারুসদের এলাকায় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এক ডিডিটি ছিটানো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তখন তাদের গৃহের আশেপাশের নিজস্ব এলাকা দখল হয়ে যায়, ফলে তাদের নিজস্ব ভূমি কমে কেবল ১৪ শতাংশে পরিণত হয়। এর আগে এই এলাকার ৯০ শতাংশ জমি তাদের দখলে ছিল।
যেহেতু তারা এক সময় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাস করত, এই কারণে তাদের সম্বন্ধে কোন লিখিত তথ্য পাওয়া কঠিন, এই কথাটি লিখেছে বিক্রম রানা তার ব্লগে:
ভারতে খিহিরি এবং নৈনিতালের রানা সম্প্রদায় আদিবাসী তফসিলী সম্প্রদায়ের তালিকা ভুক্ত। নেপালের ক্ষেত্রে সেখানে বাস করা রানা থারুসদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে তারা ১৬ শতক থেকে কাইলালি এবং কাঞ্চনপুরের বসতি গড়ে এবং তারা হচ্ছে এই দুটি জেলার বসতি স্থাপন করা প্রথম সম্প্রদায় পরবর্তীতে যাদের সাথে ডাঙ্গ সম্প্রদায়ের ডাঙ্গুরার যোগ দেয় এবং ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি এবং পঞ্চায়েত শাসন ব্যবস্থায় বসতি পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনার অধীনে খাসিয়া নামের সম্প্রদায় এদের সাথে যোগ দেয়।
তবে সকল বৈপরীত্য সত্ত্বেও তারা তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ভুলে যায়নি। তাদের জীবন যাপন এখনো আলাদা এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক এবং অলঙ্কার প্রতিটি ফটোগ্রাফার এবং ডিজাইনারকে পুলকিত করে।
সলভেগ বোয়েরগেন হচ্ছেন এক জার্মান ফটোগ্রাফার যিনি জাপানে বাস করেন এবং সেখানে কাজ করেন। তিনি রানা থারুদের দৈনন্দিন জীবনের চালচিত্র ধারণ করার জন্য পশ্চিম নেপালের কাঞ্চনপুর জেলা ভ্রমণ করেন। ভদ্রমহিলা সেখানে যা দেখতে পেয়েছেন এখানে তা তুলে ধরা হল:
কাদামাটি দিয়ে তৈরি ঘর আর তার জানালা দিয়ে সূর্য উঁকি দিচ্ছে, রানা সম্প্রদায়ের এক প্রবীণ নারী পরিবারের রান্নার জন্য ব্যস্ত। সূর্যের শক্তিশালী কিরণ চারপাশকে আলোকিত করেছে এবং রান্নাঘরের অন্ধকার যেন কোন এক গেরুয়া রঙের তৈলচিত্রে পরিণত হয়েছে।
সকালের গৃহস্থালিতে প্রথম কাজ হচ্ছে আগের দিনের সকল জঞ্জাল পরিষ্কার করা এবং গবাদিপশুকে মাঠে চড়াতে নিয়ে যাওয়া।
সকালের গৃহস্থালীর কাজ হচ্ছে আগের দিনের সকল জঞ্জাল পরিষ্কার করা এবং গবাদিপশুকে মাঠে চড়াতে নিয়ে যাওয়া।
যার বয়স অপেক্ষাকৃত কম, সে ছাগল দেখাশোনায় সাহায্য করে এবং প্রাণীগুলোর জন্য ঘাস নিয়ে আসে।
উজ্জ্বল ব্লাউজ পড়া নারী একটি রশি দিয়ে বানানো খাটে বসে কাঁদা দিয়ে পুতুল বানাচ্ছে যা দিয়ে আগামী উৎসবে তার নাতি নাতনীরা খেলবে। তিনি প্রকৃতির থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেন, তার বাহুতে যে উল্কি এবং তার ব্লাউজের উজ্জ্বল রঙ, যা তিনি প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এঁকেছেন/পড়েছেন।
উইলিয়াম ওয়ার্ডসওর্থের ধান কাটা নিঃসঙ্গ কৃষাণ কন্যার মত, এই মেয়েটি শস্য কাটছে। তার উজ্জ্বল পোষাক হলুদ এক সমুদ্রের মাঝে নিজের অবস্থান তুলে ধরছে।
যখন মেয়েটির বান্ধবী তার সাথে যোগ দেয় তখন মনে হয় যেন তার পরিহিত ঐতিহ্যবাহী পোষাক এবং তার সঙ্গীর পরিহিত আধুনিক পোষাকের মাঝে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এই হলুদ মাঠে দুজনের উজ্জ্বল রঙ আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরার জন্য সম্প্রদায়ের এক সাথে মাছ ধরতে আসা দেখার মত এক বিষয়
একসাথে কাজ করা এবং ধরা পড়া মাছগুলো সবাইকে বিতরণ করা- তাদের কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
যা মাছ উঠেছে তা সবার জন্য যথেষ্ট
এখন বিবাহের কাল আর মেয়েরা তাদের গয়না প্রদর্শন করছে
আয়না! আয়না! বলত সবচেয়ে সুন্দরী কে?
বল যদি আমি সুন্দরী না হই
এমনকি তারা তাদের পা দুটি গয়না দিয়ে ঢেকে রাখতে বাদ রাখে না। তাদের পা রুপালী অলঙ্কারে ঢেকে আছে।
তাদের পোষাকে করা সুন্দর কারুকাজের মত রানারা যে সমস্ত রঙ বেছে নেয় তা প্রকৃতির থেকে অনুপ্রাণিত এবং বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ।
শিশুরা ভয়ডর হীন এবং কাউকে তোয়াক্কা করে না, তারা সারা গায়ে খেলা করে এবং ঘুরে বেড়ায়। তাদের হাসি মূল্যবান এবং নিষ্পাপ।
ভবিষ্যৎ নির্ধারন করবে কিশোররা তাদের পূর্ব পুরুষের পথ ধরে এগিয়ে যাবে কিনা এবং তাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সংরক্ষণ করবে কিনা
সকল ছবি অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে। ভয়েস অফ থারুস নামক ব্লগে এই প্রবন্ধের কে সংস্কার প্রকাশিত হয়েছিল।