নভেম্বর ৮-এর সাধারণ নির্বাচন সংক্রান্ত যত সামাজিক বিষয় প্রতিফলিত হয় এমন সকল রাজনৈতিক কার্টুন মায়ানমারের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সক্রিয়ভাবে প্রদর্শন করছে।
২০১০ সালে দেশটি গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে দেশটির দ্বিতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে শাসক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি নামক দলটির, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়িনী অং সান সূচি ।
এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই নির্বাচন নির্ধারণ করবে যে সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকার দেশটিতে আরো গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না।
গত পাঁচ দশক ধরে, মায়ানমার এক সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে, যে শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দেশটিতে সামরিক শাসন এবং সমাজতান্ত্রিক সরকারের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬২ সালে যখন, জেনারেল নে উইন এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। ১৯৮৮ সালের এক বড় ধরনের গণ জাগরণের দুই বছর পর মায়ানমারে (সে সময় দেশটিকে বার্মা নামে অভিহিত করা হত) এক সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু সরকার এই নির্বাচনে অং সান সূচির নেতৃত্বে বিপুল ভোটে বিজয়ী এনএলডিকে এই বিজয়কে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং সুচিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয় এদিকে জেনারেল থান শোয়ে নতুন করে আবার সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। .
২০১০ সালে সামরিক শাসকের বদলে এক বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, কিন্তু সামরিক বাহিনী সংসদের ((হুলটাওয়া) ২৫ শতাংশ আসন তাদের হাতে রেখে দেয়। এছাড়াও বিগত পাঁচ বছরের অগ্রগতি ক্রমশ বাড়তে থাকা সাম্প্রদায়িক সংঘাত-এর ঘটনা, সশস্ত্র সংঘাত, ভূমি নিয়ে প্রতিবাদ, অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো বাক্য, সাংবাদিকদের বিচার করা, ছাত্রদের হয়রানি করা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উত্থান দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
এমন কি যখন মায়ানমার এক কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্র, তখনও কার্টুন দেশটির রাজনৈতিক বিষয়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এক জনপ্রিয় মাধ্যম। এদিকে দেশটিতে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দেশটির অভ্যন্তরে কি ঘটছে সে বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে কার্টুন এক আলোচিত ধারায় পরিণত হয়েছে। ফেসবুক পাতা “মস্তিষ্ক তরঙ্গ” (নায়ান হিলিয়ান) এই ধরনের কিছু কার্টুনের নমুনা তুলে ধরেছে।
এই সমস্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় কার্টুন এবং সামাজিক বিষয়ের দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে নিন, যা সামাজিক প্রচার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা
নির্বাচনের পূর্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয় হচ্ছে সারা দেশ জুড়ে থাকা ত্রুটিপূর্ণ সরকারি ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করা। অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে বৈধ ভোটাররা নির্বাচনের দিন ভোট দিতে সমর্থ হবে না, যার ফলে বিভিন্ন দল নির্বাচন বিষয়ক সচেতনা নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। “আসুন ভোটার তালিকা যাচাই করি” নামক অনলাইন সাইটের মাধ্যমে ভোটারদের-কে নিজেদের নাম নিবন্ধনের বিষয়টি যাচাই করতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।
কার্টুনিস্ট থিহা (সা খান থিট) এই সংবাদের বিষয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার দেশজুড়ে এক সমস্যা:
এই কার্টুনে লেখা আছে, যেহেতু দেশের প্রতিটি শহরের ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ, তার প্রেক্ষাপটে বলা যায় এটা কি জাতীয় ষড়যন্ত্রের প্রমাণ নয়?
প্রাক নির্বাচনী প্রচারণা
নির্বাচনের সময় কয়েকটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচারণার সময়কার আচরণ নিয়ে কয়েকজন কার্টুনিস্ট কার্টুন এঁকেছে। কার হলুয় পিয়ে এক প্রতীকী কার্টুনের মাধ্যমে দেশটিতে যে একতার অভাব রয়েছে সে বিষয়টি এঁকেছে, যা ফেসবুকে ৩,৬০০ টি লাইক পেয়েছে ১,০০০ বার শেয়ার করা হয়েছে:
এখানে লেখা আছে, ওহে… যদিও এটা সত্য যে যদি আমরা একসাথে ধাক্কা দেই তাহলে সামনে এগুতে পারব, কিন্তু যে ভাবে আমরা কাজ করি, এটা সেটা নয়।
কার্টুনিস্ট মিন হেতেত লু ভোটারদের প্রভাবিত করার সরকারি প্রচেষ্টার বিষয়ে নাগরিকদের অনুভুতি তার কার্টুনে তুলে ধরেছে:
এই কার্টুনে লেখা আছেঃ [তারা] সত্যই খুব ভালঃ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, তারা রাস্তা, বিদ্যালয়, কুয়া, ইত্যাদি ঠিকঠাক করে দিচ্ছে। একমাত্র যে জিনিসটা তারা পরিবর্তন করছে না তা হচ্ছে তাদের অভ্যাস।
[অনুবাদকের ভাষ্যঃ বার্মিজ ভাষায় একটি শব্দ দিয়ে ঠিক করে দেওয়া, এবং পরিবর্তন দুটোই বোঝানো হয়ে থাকে।]
রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় দফা সংস্কার
রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছে নিয়ে করা মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে কার্টুনিস্টরা হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে এই বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করছেঃ
বামে লেখা রয়েছেঃ রাষ্ট্রপতি বলছে যদি জনগণ চায় তাহলে তিনি দ্বিতীয় দফা রাষ্ট্রপতি হতে ইচ্ছুক।
ডানে লেখা রয়েছেঃ বেশ … তাহলে তিনি [ফেসবুকে] নীচের মন্তব্য পাঠ করে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
কার্টুনিস্ট থাউরা-এর মটে, অনেক নাগরিক রাষ্ট্রপতির এই বিবৃতির অনুকূলে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেনি:
বামে লেখা রয়েছেঃ রাষ্ট্রপতি- আমার দ্বিতীয় দফা মেয়াদের বিষয়ে, যদি জনগণ চায়, তাহলে সত্যিকার ভাবে আবার রাষ্ট্রপতির হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কথা বিবেচনা করব।
ডানে লেখা আছে” ওহ ঈশ্বর… ইতোমধ্যে চলে গেছে!
কার্টুন এমজি এমজি ফাউন্টেন –এর আঁকা, ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে প্রদর্শিত হয়েছে:
একেবারে ডানেঃ যদি [আমরা] পুনরায় পরবর্তী পাঁচ বছরের দেশ শাসনের সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে দেশে আর গরিব থাকবে না।
উপরের একেবারে ডান (মানচিত্র)ঃ আমার বেলায় কি হবে? আমি কি তখনও আমার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে।
বামে লেখা রয়েছেঃ আপনি জানেন কি, যদি কোন প্রকল্প, বাজেট, বিদেশী বিনিয়োগ না থাকে, কোন সরকারি হামলা এবং আমাদের মত গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তি যদি না থাকে?!!?
বামে লেখা রয়েছেঃ তাহলে এটা হচ্ছে জনতার চাওয়া।
তারা একই সাথে সরাসরি সামরিক শাসন ফিরে আসার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই বিষয়ে আঁকা থিহা (সা খান থিট)-এর কার্টুন ফেসবুকে ৮,০০০ লাইক পেয়েছে:
বামে লেখা আছে সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে দেশটিতে যতদিন স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে ততদিন দেশে অভ্যুত্থান ঘটবে না।
ডানে লেখা আছেঃ নাগরিকরা উদ্বিগ্ন যে [ তারা] অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য দেশে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করবে।