গত সপ্তাহের অবিরাম বৃষ্টিপাত মায়ানমারের উত্তরের এলাকা বন্যার সৃষ্টি করে যা উক্ত এলাকার ১১০,০০০ জন নাগরিককে আক্রান্ত করেছে [2]। অনেকে ধীরে এই বিষয়ে সাড়া দেওয়ায় এবং দেশে জরুরী অবস্থা জারি করতে দেরি করায় সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বৃষ্টি এবং বন্যায় যে সমস্ত এলাকা দারুণ ভাবে আক্রান্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে সাগাইন, মাগওয়ে, চীন রাখাইন এবং শান প্রদেশ। জুলাই-এর ২৯ তারিখ পর্যন্ত ইতোমধ্যে বন্যার কারণে ২০ জন নাগরিকের মৃত্যু ঘটেছে [3]। মায়ানমারের চীন প্রদেশের অনেক রাস্তা এবং সেতু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ [4] হয়েছে। এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ক্রমাগত এই ভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে তা কৃষি প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ফেলতে পারে [5]।
এদিকে, যখন ঘূর্ণিঝড় কোমেন প্রতিবেশী বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে [6], সে সময় মায়ানমারের পশ্চিম অংশ এবং বদ্বীপ অঞ্চলে অকস্মাৎ এক বন্যা আঘাত হানে [7]।
একদিকে যখন ক্রমাগত বৃষ্টি পড়ছে [8], তখন মায়ানমারের উদ্বিগ্ন নাগরিকরা দেশটিতে সংঘঠিত বন্যার ছবি পোষ্ট করছে এবং বন্যায় আক্রান্ত নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে:
মাগওয়ে জেলার বন্যার প্রভাব নিয়ে ওলার মাগওয়ে লিখেছে [9]
অতীব জরুরী
আমরা কেবল ফোনের মাধ্যমে সিডোকাটায়কা যোগাযোগ করতে পারছি।
৪/৫টি শহর পানিতে ডুবে আছে এবং আমাদের আশ্রয়, পানি এবং খাবারের প্রয়োজন।
পুরো শহর অন্ধকার ডুবে আছে আর একটানা বৃষ্টি পড়ছে।
পুরো শহর অন্ধকারে ছেয়ে এবং অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
উল্লেখ্য- পিউইন্ট পুফইয়ু শহর বন্যায় বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পতিত হয়েছে।
সিডোকাটায়াতে আটকে পড়া নাগরিকদের বিমানের সাহায্যে ত্রাণ প্রদান করা প্রয়োজন।
স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং নাগরিক প্রচার মাধ্যমে বন্যায় আক্রান্ত বিভিন্ন শহরের ছবি ফেসবুকে তুলে ধরেছে।
বন্যা সমস্যা প্রতি সরকারের যে ভাবে ধীরে সাড়া দিচ্ছে কিংবা কোন কোন স্থানে তার ত্রাণ কার্যের পুরোপুরি অভাব বিপরীতে দেখা যাচ্ছে সুশীল সমাজের বিভিন্ন দল অথবা স্বেচ্ছাসেবকদের ত্রাণ প্রচেষ্টা।
ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং একটিভিস্ট থিয়েননেই ওও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন [16] যেন সরকার বন্যা আক্রান্ত এলাকায় আরো বেশী পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করে। তিনি বলছেন যে জনতা এবং কর্তৃপক্ষ যেন ২০০৮ সালে সংগঠিত নার্গিস [17] নামক ঘূর্ণিঝড়ের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে:
আমাদের উচিত নার্গিসের ঘটনা থেকে ঘটা শিক্ষা স্মরণ করা। কারণ সে সময় উদ্ধার তৎপরতা শুরু হতে দেরি হয়েছিল, এর ফলে আমাদের এক বিশাল ক্ষতি হয়ে যায়। এখনো আমরা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা খাতগুলোকে পুনর্বাসনে সক্ষম হতে পারিনি। কেবলমাত্র ইরাওয়ার্দি এলাকা পুনর্গঠনে আমাদের পাঁচ বছর লেগে গেছে আর এবার এই বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে এবং বিভাগে। সাধারণ নাগরিকদের জীবনহানি এবং সম্পদের ধ্বংস এক জাতীয় ক্ষতি।
রাজনৈতিক একটিভিস্ট নেই মাইয়ো কেওয়াইয়ো একই সাথে সরকারের সমর্থন এর অভাবের বিষয়ে তার চিন্তা তুলে ধরেছে [18]:
যখন কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে, এটা কেবল একজন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে না, এটা অন্তত একটা পুরো শহর অথবা একটা পুরো রাষ্ট্র অথবা জাতিকে আক্রান্ত করে। যদি সুশীল সমাজ অথবা মাঠ পর্যায়ের সংগঠন বিপর্যয় ঝুঁকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তাহলে সেটা হবে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে। কিন্তু এখানে যে সবচেয়ে দায়িত্বশীল সে হচ্ছে সরকার। যখন নাগরিকরা এ রকম সমস্যায় পড়ে এবং সরকার সাহায্য করতে অনিচ্ছুক, তার মানে হচ্ছে কর্তৃপক্ষ তার দায়িত্ব পালন করছে না।
প্রখ্যাত আবহাওয়াবিদ উ তুন লুউইন–এর মতে বন্যার ছড়িয়ে পড়ার প্রথম তিন দিনের মধ্যে সরকারের উচিত ছিল জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা [19]। তিনি ২৯ জুলাই এই বিবৃতি [20] প্রদান করেন। ঘটনাক্রমে সরকার ৩১ জুলাই-এর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানিক ভাবে জরুরী অবস্থা জারির [21] কথা ঘোষণা করে।
বর্তমান এই বন্যার জন্য পরিবেশবিদরা দেশের বন উজাড় করাকেই [23] দায়ী করেছে। তারা সতর্ক করে দিচ্ছে যে দেশের বনাঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে হতে সেটা দেশের মোট ভূমির ২০ শতাংশ পরিণত হয়েছে। তারা বলছে যে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা উচিত।