ফিলিপাইনে টাইফুনের সময় আবার ঘনিয়ে আসার পরেও গত বছরের টাইফুনে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া পরিবার এখনো স্থায়ী আশ্রয়ের অপেক্ষায়

Some of the 200 people that have been living in a public gym for the past 7 months in Catbalogan. Photo by Taisa Sganzerla

কাটবালোগান এলাকায় প্রায় ১৫০ জন এর বেশী নাগরিক সর্ব সাধারণের জন্য নির্মিত ব্যায়ামাগারে সাত মাস ধরে বসবাস করছে। ছবি তাইশা সাগনাগজেরলা-এর।

ফিলিপাইনের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল কাটবালোগান এলাকার প্রাদেশিক রাজধানী সামারেনেয়া শহরের কোন এক এলাকা, যা এক সহজে চোখে পড়ে না এমন এক অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত এক পাহাড়ের ঢালে পরিত্যাক্ত ফিলিপাইনের নিজস্ব পদ্ধতিতে বাঁশ ও খড় দিয়ে বানানো কুটির (ফিলিপাইনের নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরী এই কুটির নিপা কুটির নামে পরিচিত) এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে, কাঠের টুকরো এবং খড়ের মাদুর (বানিগ) দিয়ে তৈরী এই সকল ঘর, বিভিন্ন ঝোপের মাঝে উঁকি দিচ্ছে, এটা হচ্ছে এমন এলাকা যেখানে এক সময় মার্সিডেজ নামক গ্রামের (ফিলিপিনো ভাষায় বারানগাই) অবস্থান ছিল।

ছয় মাস আগে সেনিয়াং নামের এক ক্রান্তীয় ঝড়ে (বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে যা জাংমি নামে পরিচিত) কেন্দ্রীয় ফিলিপাইনের পূর্ব ভিসাইয়া অঞ্চলের ৫৯ জন নাগরিক নিহত হয়-যার মধ্যে কেবল ২৩ জনই ছিল বারানগাই মার্সেডিজ এলাকার। এই ঝড়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিধ্বস–এর কারণে এই বারানগাই এলাকার ৫৪টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।

তাদেরকে এক উন্মুক্ত ব্যায়ামাগারে সাময়িক ভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়, যার মালিকানা পশ্চিম সামার-এর আঞ্চলিক সরকার, যেখানে স্থানীয় এক এনজিও–এর সাহায্যে উদ্বাস্তুদের সারিবদ্ধ ভাবে থাকার মাধ্যমে তাদের সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়, সাত মাস পরে, এখনো ১৫০ জন নাগরিক স্থায়ী আবাসনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ভিসাইয়াস-এর স্থানীয় এনজিওর, তাবাং-অঞ্চলের সামার শাখা এই সমস্ত গৃহহীনদের আশ্রয় প্রদানের সমন্বয় সাধনের কাজ করছে –এই প্রতিষ্ঠানের লেয়া সেরিল্লা বলনে, “এই স্থানের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শিশুরা ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে পড়ছে”। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে নগরের সমাজকল্যাণ এবং উন্নয়ন বিভাগ তাদের যৎসামান্য ত্রাণ সরবরাহ করেছে– ত্রাণ হিসেবে প্রতি মাসে প্রতিটি পরিবার জন্য বরাদ্দ ১৫ থেকে ২৫ কিলোগ্রাম চাল, সাথে চারটি সার্ডিন মাছের টিন, চারটি লবণাক্ত মাংসের টিন এবং আটটি কফির প্যাকেট।

রড্রিগো মাবাগ, ৪৩ বছর বয়স্ক এক নাগরিক, যিনি এই ব্যায়ামাগারের মাঝে তৈরী করা সারিবদ্ধ বাসগৃহের কোন একটিতে বাস করেন। তিনি এই ভূমিধসে তার তিন পুত্রকে হারিয়েছেন, যাদের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।

ঘটনার সময় তিনি ছিলেন সৌদি আরবে কর্মরত, যেখানে তিনি তার নিজের এবং প্রতিবেশীদের ঘর ভেঙ্গে পড়ার সংবাদ পান, সে সময় তিনি সেখানে এক গাড়ি মেরামতের কারখানায় কাজ করতেন:

আমি অনলাইনে প্রবেশ করলাম এবং আমার ভাই তার ফেসবুকে একটা লিঙ্ক পোষ্ট করেছিল যে বারানগাই-এ কি ঘটেছিল। আমি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম, কারণ আমি আমার স্ত্রীর কাছে যেতে পারছিলাম না। তিনদিন পর কেবল আমি তার সাথে কথা বলতে পারলাম এবং তখন সময় সে আমাকে আমাদের ছেলেদের পরিণতির কথা জানালো।

রড্রিগো মাবাগ ফিলিপাইনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়, কিন্তু সে এখন কর্মহীন, কারণ সে এখন তার স্ত্রীর যত্ন নেওয়ার জন্য সারিবদ্ধ ভাবে নির্মিত বাসস্থানে থাকে। ওই ভূমিধসের সময় তার স্ত্রীর শরীরের পেছনের অংশ মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছিল:

আমার ছেলেদের হারানো, আমার জন্য ছিল যথেষ্ট কষ্টের। আমার এখন একটাই চাওয়া যেন সরকার আশ্রয় গ্রহণকারীদের [সমস্যা] যত্ন নেয়, যাতে আমি আবার নতুন করে শুরু করতে পারি। আমি এখন আমার নিজস্ব এক ব্যবসা চালু করতে চাই।

philippines-3

রড্রিওগো মাবাগ, যিনি এই ভূমিধ্বস তার সন্তানদের হারিয়েছেন, তিনি ব্যায়ামাগারে মাঝে সারিবদ্ধ ভাবে তৈরী করা গৃহের মাঝে তার নিজের গৃহে অবস্থান করছে। ছবি তাইশা সাগনাগজেরলা-এর।

প্রাদেশিক মিডিয়ার সূত্র অনুসারে, যদিও এই ব্যায়ামাগারের মালিক প্রাদেশিক সরকার, কিন্তু এই বিপর্যয়ের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া নাগরিকদের দায়িত্ব নগর পরিষদের।

“প্রাদেশিক সরকার আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করেছে যেন আমরা ব্যায়ামাগার খালি করে দেই, কারণ তারা এই এলাকাটিকে গিয়াসিনো কোম্পানিকে ইজারা দিতে চায়, যারা সেখানে একটি শপিং মল বানাতে ইচ্ছুক। নিদিয়া আরোজা যিনি কাটবালোগানার নগর সমাজ সেবা এবং উন্নয়ন কর্মকর্তা, তিনি এই কথাগুলো বলছেনঃ

তিনি এর সাথে যোগ করেছেন, পৌরসভা এখনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণ বিতরণের জন্য কোন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার জন্য কোন বিশেষ পরিকল্পনা তৈরী করেনি:

ঘূর্ণিঝড়ের সময় যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের উদ্বেগ ততই বাড়ছে এবং এখনো এই সমস্ত পরিবারকে নতুন কোন স্থানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, নগর পরিষদের পরিকল্পনা হচ্ছে কাটাবালোগান-এর বাইরে বারানগাই পাইইয়াও নামক এক এলাকায় এক টুকরো জমি কেনা এবং সেখানে এই সমস্ত পরিবারের জন্য বসতি নির্মাণ করা-যে কাজের জন্য খরচ পড়বে ১৫০ মিলিয়ন পেসো (প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা তারা ব্যাংক থেকে ধার করবে।

লেলা সেরিলা–এর জন্য, এই বিষয়টি গরীবদের শহরের বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য সরকারে এক প্রচেষ্টা:

বারানগাই পাইইয়াও হচ্ছে সত্যিকার অর্থে শহরের বাইরে অবস্থিত এক এলাকা, যার অবস্থান বারানগাই মার্সিডেজ থেকে অনেক দূরে। ঝড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া ব্যক্তির স্থায়ী এক আশ্রয়ের জন্য কেবল সাত মাস অপেক্ষা করে যাচ্ছে না, এখন তাদের এক নিকৃষ্ট এলাকায় বসতি গড়তে হচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .