- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ন্যূনতম মজুরি বাড়ালে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে মিয়ানমারের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মায়ানমার (বার্মা), আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, ব্যবসা ও অর্থনীতি, মানবাধিকার, শ্রম
Women workers in Bagan, Myanmar. Photo from Wikimedia, CC License [1]

মিয়ানমারের বাগান এলাকার লাকুইয়ারোয়্যার কারখানার শ্রমিকরা। উইকিমিডিয়া থেকে ছবি নেয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীরা বলেছেন, সরকার যদি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ায় তাহলে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। সম্প্রতি শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৩,৬০০ কিয়াট (৩.২১ মার্কিন ডলার)এবং ঘণ্টা প্রতি ন্যূনতম মজুরি ৪৫০ কিয়াট (০.৪৫ মার্কিন ডলার) করার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে।

শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির প্রকল্পটি দেখছেন জাতীয় সংসদ মনোনীত জাতীয় মজুরি নির্ধারণ কমিটি। তারা গত আঠারো মাস ধরে তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে কথা বলেছেন। কারখানার শ্রমিকদের দরিদ্র অবস্থার উন্নতির [2] জন্য তারা মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন।

শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ন্যূনতম মজুরি ৪,০০০ কিয়াট দাবি করেছিল। অন্যদিকে ব্যবসায়ী মহল [3] ন্যূনতম মজুরি ২,৫০০ কিয়াট করার প্রস্তাব দেয়। তবে জাতীয় মজুরি নির্ধারণ কমিটি দুপক্ষের মাঝামাঝিতে নতুন ন্যূনতম মজুরি করার প্রস্তাব দিয়েছে।

গত মাসে মিয়ানমার গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে দিয়ে বলে যে, অনেক কোম্পানিই প্রস্তাবকৃত ন্যূনতম মজুরি ৩,৬০০ কিয়াট দিতে পারবে না। ফলে এই পদক্ষেপ ২০০,০০০ পোশাক শ্রমিকদের কাজের ওপর প্রভাব [4]ফেলবে। সরকার যদি নতুন মজুরি কাঠামোর অনুমোদন দেয় তবে চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মালিকানাধীন কমপক্ষে ৯০টি পোশাক কারখানা বন্ধ করবে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে মিয়ানমারের পোশাক শ্রমিকরাই সবচে’ কম [5] মজুরি পান। মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের চেয়ে একটু বেশি, তবে কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের শ্রমিকদের চেয়ে কম মজুরি পাবেন।

এদিকে তৈরি পোশাক শিল্পের কয়েকটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে মিয়ানমারের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করে ইথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে [6]শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে:

We urge Myanmar’s government to take a firm stance to help improve conditions – it is vital to ensure that the first ever minimum wage level doesn't lock workers from one sector into poverty.

আমরা মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করছি শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে। আর এর প্রথম ধাপ হলো শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করা। যাতে তারা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকে না থাকে।

মিয়ানমার গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশন মজুরি বৃদ্ধির বিরোধীতা করলেও, এদের সাথে একমত নয় [7]ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাডিডাস, গ্যাপ ইনক এবং টেসকোর মতো আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই সংগঠনের সদস্য। উল্লেখ্য, মিয়ানমার গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছিল যে, মজুরি বাড়লে দেশের বিনিযোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে:

In our view, the suggestion made by trade associations that a higher minimum wage will discourage international investment is based on a false premise. A minimum wage set through consultation with relevant stakeholders will attract rather than deter international companies buying garments from Myanmar, who have committed to paying living wages through their supply chains.

সর্বোচ্চ ন্যূনতম মজুরির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে বলে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো যে পরামর্শ দিয়েছে তা ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে আলোচনা করে ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হলে আন্তজার্তিক ক্রেতা কোম্পানিগুলোর মিয়ানমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কোনো কারণ নেই। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বরং তাদের সাপ্লাই চেইনগুলোকে শ্রমিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য যতটুকু মজুরি দরকার, তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তৈরি পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম ন্যূনতম মজুরি ৩,৬০০ কিয়াটের সাথে একমত হওয়া নিয়ে কথা না বললেও সব সেক্টরে একটি অভিন্ন ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির জন্য সরকারকে পরামর্শ [8] দিয়েছে:

If the garment industry wage levels are lower than other industries, it will not be able to attract and retain a skilled labor force, which it needs to develop and grow into a thriving economic driver.

যদি অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি কম হয়, তবে দক্ষ শ্রমিক এই শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। তাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন প্রয়োজন।

ন্যূনতম মজুরি পরিকল্পনা নিয়ে মালিক এবং শ্রমিক দুপক্ষ থেকেই শত শত অভিযোগ আসছে।

কিছু কিছু শ্রমিক সংগঠন ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তবে অল মিয়ানমার ওয়াকার্স ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের মতো কিছু সংগঠন মেনে নেয়নি। তারা দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৪,০০০ কিয়াট করার জন্য প্রচারণা [13] চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের ভাষ্যমতে, মালিক পক্ষ শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধা কমিয়ে দিয়ে ব্যয় সংকোচন [14] করতে পারে। এজন্য তারা দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৪,০০০ কিয়াটের দাবি করছেন:

When the owners accept a minimum wage as the government is proposing they are planning to cut off other extra costs like transportation for the worker. So if the workers are going to be able to afford to survive the minimum wage must be fixed at K4000.

মালিক পক্ষ যখন সরকারের ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব গ্রহণ করবে, তখন তারা উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য শ্রমিকদের যাতায়াত ভাতা’র মতো সুবিধাগুলো বাদ দিবে। তাই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি যদি ৪,০০০ কিয়াট হয়, তাহলে তারা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারবেন।

নিচের ভিডিওতে [15] প্রায় ২০০ কারখানার পোশাক শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে, যারা দৈনিক ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সমাবেশ করছেন: