পৃথিবীতে যতোগুলো কষ্টসাধ্য খেলা আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ট্রেইল রানার (পাহাড়ী পথে দৌড়)। সবাই এটা পারে না। তবে নেপালের মীরা রাইয়ের কাছে এটা খুব সহজ-স্বাভাবিক একটি খেলা। সম্প্রতি তিনি ৮০ কিলোমিটারের মন্ট ব্ল্যাক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এটি ফ্রান্সের সবচে’ কঠিন প্রতিযোগিতা হিসেবে পরিচিত। পুরোটা রাস্তা দৌড়াতে তার সময় লেগেছে ১২ ঘণ্টা ৩২ মিনিট।
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টারাই মীরাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন:
अन्तर्राष्ट्रिय म्याराथन जित्न सफल नेपाली चेली मीरा राईलाई हार्दिक वधाइ! सेना समायोजनमा ‘अयोग्य’ भनिएकी पूर्व… http://t.co/jHEoWR8Byh
— Baburam Bhattarai (@brb_laaldhwoj) June 27, 2015
আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে বিজয়ী হওয়ায় মীরা রাইকে অভিনন্দন। সামরিক বাহিনীতে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত, সাবেক…
বয়:সন্ধিকালে তিনি মাওবাদী গেরিলা দলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু গেরিলাদের যখন সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি করা হয়, তখন তিনি অযোগ্য হিসেবে বাদ পড়ে যান।
ট্রেইল রানার হিসেবে মীরা রাইয়ের খেলোয়াড়ি জীবন খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র বছর দেড়েক আগের। এর মধ্যেই তিনি খ্যাতিমান ট্রেইল রানার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। তার খেলোয়াড়ি জীবন শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হিমালয়ান আউটডোর ফেস্টিভ্যালের ৫০ কিলোমিটারের দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু তেমন একটা প্রস্তুতি ছাড়াই তিনি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। আর এর পরের মাসেই মাস্টটাং ট্রেইল রেসে অংশ নিতে যান।
নেপালের বাইরেও বিজয়ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইতালিতে অনুষ্ঠিত সেল্লারন্ডা ট্রেইল রেস (৫৭ কিলোমিটার) এবং ট্রেইল ডেগলি ইরয় (৮৩ কিলোমিটার) প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।
অক্টোবর মাসে হংকং-এ অনুষ্ঠিত ৫০ কিলোমিটার আল্ট্রা ম্যারাথন মাউন্টেইন রেসে বিজয়ী হন। এরপরে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি।
হংকংয়ের চিত্রগ্রাহক এবং সিনেমা নির্মাতা লয়েড বেলচার টুইট করেছেন:
Mira Rai @TrailRunNepal faces the waiting cameras after winning the @Skyrunning_com HK 50k race ©lloydbelchervisuals pic.twitter.com/qGYQ6hlY7a
— Lloyd Belcher (@lbelchervisuals) February 9, 2015
বিজয়ী হওয়ার পর নেপালের ট্রেইল রানার মীরা রাই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হংকংয়ের ৫০ কিলোমিটার রেসে বিজয়ী হয়েছেন।
নেপালের পূর্বাঞ্চলের শহর বোজপুরের ছোট্ট একটি গ্রামে মীরার বাড়ি। সেখান থেকেই তিনি উঠে এসেছেন। তবে সাফল্যের পিছনে তিনি ছোটবেলার কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করেছেন।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন:
As a young girl I was not very interested in doing household chores, which is why my mother gave me the physical tasks like bringing water from the river, which is two hours down and three hours back home. I also used to carry a bag of rice to the market to sell and bring money home. I grew up running.
ছোটবেলায় আমি ঘরের টুকিটাকি কাজ করতে মোটেও আগ্রহী ছিলাম না। তাই আম্মা আমাকে নদী থেকে পানি আনার কাজ দিতো। নদীতে যেতে দুই ঘণ্টা আর আসতে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো। তাছাড়া আমি প্রায়ই বস্তায় করে চাল নিয়ে বাজারে যেতাম। সেগুলো বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। এভাবে পাহাড়ি পথে দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই আমার বেড়ে ওঠা।
তিনি কঠোর অনুশীলণ করেন যা তাকে ফিট ও শক্তিশালী রাখে। তার রোজকার রুটিন হলো, খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা, সকালে এবং বিকেলে ১০-১২ কিলোমিটার করে দৌড়ানো। তাছাড়া তিনি পাহাড়ে ওঠা এবং সাইকেল চালিয়ে থাকেন।
মীরা রাই এখন ট্রেইল রানিংয়ের খুব পরিচিত নাম। তিনি আল্ট্রা ম্যারাথনিয়ারদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নামও। তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, লাখ লাখ নেপালি ছেলেমেয়ে পাহাড়ের বিপদজনক পথে প্রতিদিনই মালপত্র নিয়ে ওঠানামা করে। হয়তো এদের মধ্যেই আরো মীরা রাই লুকিয়ে আছে।
তাদের প্রতি মীরা রাইয়ের মূল্যবান পরামর্শ হলো:
‘Opportunity is like a leaf on a river, if you don't grab it fast enough then its gone forever!’ – #MiraRai #YoungBodyOldSoul
— peterj (@peterjohnmoses) July 9, 2015
সুযোগ হলো নদীতে ভেসে যাওয়া পাতার মতো। আপনি যদি সেটিকে দ্রুত ধরে না ফেলেন, তাহলে সেটা চিরতরেই চলে যাবে।