- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ব্লগার হত্যাকাণ্ডঃ তদন্তে আস্থা নেই, বলছেন শঙ্কিত ন্যায়বিচারপ্রার্থীরা

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, অ্যাক্টিভিজম, অ্যাডভোকেসী, নজরদারী, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, জিভি এডভোকেসী
Activists engaging in a silent protest in front of the National Press Club in Bangladesh Capital Dhaka, protesting the murder of writer and blogger Avijit Roy. Image by Sourav Lasker, Copyright Demotix (1/3/2015) [1]

ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানব বন্ধন, ছবি সৌরভ লস্কর, সর্ব সত্ত্ব ডেমোটিক্স (১লা মার্চ ২০১৫)

গত বছর নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত উগ্রপন্থী ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের হাতে খুন হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এ কে এম শফিউল ইসলাম [2], ব্লগার অভিজিৎ রায় [3], ওয়াশিকুর রহমান বাবু [4]অনন্ত বিজয় দাস [5]। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এক ডজনেরও বেশি প্রগতিশীল শিক্ষক, লেখক ও সমাজকর্মী জঙ্গীদের সহিংসতার শিকার হন। সবগুলো ঘটনাই এখন তদন্ত বা বিচারিক পর্যায়ে আছে [6]। এ ছাড়াও অনেক প্রগতিশীল লেখক, ব্লগারদের উপর হত্যার হুমকি আসছে [7], বিশেষ করে ২০১৩ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠার পর থেকে। প্রতিবাদকারীদের অন্যতম দাবি ছিল ১৯৭১ সালের মানবতা বিরোধী অপরাধগুলোর বিচার চেয়ে কতিপয় ধর্মভিত্তিক দলের নেতাদের ফাঁসির আবেদন। সাম্প্রতিক সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি দেয় যাদের মধ্যে জামাতে ইসলামির কতিপয় নেতাও রয়েছে।

সকল নিহত ব্লগার এবং লেখকরাই বাংলাদেশের জামাতে ইসলামি [8] এবং অন্যান্য উগ্র ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর বিরোধী ছিলেন। এই সমস্ত দল বাংলাদেশে শরিয়া ভিত্তিক এবং ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কয়েক দশক ধরে [9]। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামাতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচনে যোগ দেবার অনুপযুক্ত ঘোষণা করে [10]

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগ সাম্প্রতিক হত্যাগুলোর পর্যাপ্ত ও কার্যকরী তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এইসব উগ্রবাদীরা অন্যদিকে আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন যেমন দক্ষিণ এশিয়ার আল কায়েদার সমর্থন পেয়েছে।

বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষ সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান, মানে হলো যে সেখানে কোন শরীয়া আইন বা ধর্মঅবমাননা আইন বিদ্যমান নেই। যারা নিজেদেরকে নাস্তিক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরও অন্যান্য নাগরিকদের মতো একই অধিকার আছে। যদিও বাংলাদেশের ফৌজদারী আইনের (১৮৬০) ২৯৫এ অনুচ্ছেদের অধীনে যে কোন ব্যক্তির যদি ‘ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত’ করার ‘ইচ্ছাকৃত’ বা ‘দ্বেষপূর্ণ’ উদ্দেশ্য থাকে তবে সে কারাদণ্ডের জন্য দায়ী হবে। যদি বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে এ দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নয় এবং রাষ্ট্রধর্ম এখনও রয়েছে ইসলাম। সরকারী আলস্য এবং পুলিশের অকার্যকারীতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামী দলগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণে দায়মুক্তি প্রদান করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক জঙ্গী আস্তানা খুঁজে পাচ্ছে এবং কিছু উগ্রপন্থি নেতা এবং মাঠকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে [11] যার মধ্যে আল কায়েদার এক নেতাও ছিল। এ বছর অভিজিৎ রায় সহ বেশ কিছু ব্লগার হত্যার দায় স্বীকার করেছে দক্ষিণ এশিয়ার আল কায়েদা।

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী আরও জানতে পেরেছে যে নতুন নতুন উগ্রপন্থী সংগঠন দেশের চিরায়ত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাচ্ছে দেশে ইসলামি বিপ্লব ঘটানোর জন্যে। তবে ব্লগার ও লেখকদের হত্যার কোন কিনারা এখন পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। গত সপ্তাহে খবর বেরিয়েছিল যে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বন্যা আহমেদ হত্যাকারী দলের সাত জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তবে তার মাধ্যমে জানা যায় যে সংবাদটি [12] সঠিক নয়।

গ্লোবাল ভয়েসেস বেশ কিছু ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার এবং অনলাইন কর্মীর কাছে সাম্প্রতিক হত্যা ও হুমকিগুলোর পরবর্তিতে তদন্ত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিল। আমরা চারজনের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি। আরও অনেকে তাদের উপর হুমকীর ভয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাম অনুল্লেখিত* • সক্রিয় কর্মী ও লেখক, বাংলাদেশ

History says that all these attacks against atheists, Hindus, etc. are the result of materialistic rather than religious issues. The hatred against atheism is not new in Bangladesh, but the attacks on atheists with machetes is definitely something new. The killers are probably motivated by the political powers and their interests, whether among the ruling coalition or the opposition.

ইতিহাস বলে, নাস্তিক আস্তিক হিন্দু মুসলিম ইত্যাদি বিভিন্ন দাঙ্গা হামলা আক্রমণ ইত্যাদির পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারলৌকিক বিষয়ের চেয়ে ইহলৌকিক নানান বিষয় কাজ করে। নাস্তিকতা বিষয়টি তো বাংলাদেশে নতুন নয় কিন্তু এভাবে চাপাতি সহ হামলা তুলনামূলক নতুন। এর পেছনে ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একেবারেই ইহজাগতিক স্বার্থসিদ্ধির বিভিন্ন কার্যকারণ থাকতে পারে।

There has been no satisfactory development in probing the killings of so-called atheists since the attack [13] on Prof. Humayun Azad in 2004. The killers of Avijit Roy have not been identified or arrested; we do not know about the masterminds in Oyasiqur murder…it seems that the law enforcers are not interested…For this, even the coordinators like Redwanul Azad Rana or Masum (alleged gang leader behind attack on Oyasiqur) [have not been] arrested yet.

হুমায়ুন আজাদ হত্যাকান্ড [13] থেকে শুরু করে নাস্তিক অভিযোগে যাদের উপরই হামলা হয়েছে, সেসবের কোন তদন্ত কাজেই সন্তুষ্ট হওয়ার মত কিছু দেখি না। অভিজিৎ রায়ের খুনিরা এখনও ধরা পড়েনি/চিহ্নিত হয়নি, ওয়াশিকুর বাবুর খুনিরা জনগণের তৎপরতায় ঘটনাচক্রে ধরা পড়লেও পেছনের ব্যাক্তি বা সংগঠন এখনও ধরা পড়েনি। ক্ষমতাবানরা বিপন্ন বোধ করলে যেভাবে পুলিশ কিংবা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী মাঠে নামে, অন্যান্য আরও ঘটনার মতো এই ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে মূল হোতা সনাক্ত করার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ নেই। যেকারণে পেছনের মূল শক্তি তো দূরের কথা রেদোয়ান রানা কিংবা মাসুম ভাইদের মতো সামনের সারির সমন্বয়করা পর্যন্ত ধরা পড়েনা।

Considering the previous incidents, I am not hopeful that the planners and their patrons [will] be identified and held. According to their claims, the Islamist organisations want to establish Shariah law. They attract ordinary Muslims by making false promises to claim that Islamic rule will end oppression and discrimination against the common people. Their activities have no relation with the religion.

পূর্বতন অভিজ্ঞতাগুলো যদি দেখি তাহলে মূল হোতা বা শক্তি সঠিক ভাবে সনাক্ত হওয়া ও তাদের চূড়ান্ত শাস্তি হওয়ার কোন আশা দেখি না। ইসলামি জঙ্গি সংঠনগুলোর ঘোষিত উদ্দেশ্যে হলো ইসলামি শাসন ব্যাবস্থা কায়েম করা। বিদ্যমান বৈষম্যমূলক ব্যাবস্থার সুযোগ নিয়ে ইসলামি শাসন কায়েম হলেই জনগণের শোষণ, বঞ্চণা, বৈষম্যের সমাধান হবে –এরকম একটা মিথ্যা আশাবাদ তৈরী করে তারা ধর্মপ্রাণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই ঘোষিত উদ্দেশ্যের আড়ালে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন দেশী বিদেশী শক্তির স্বার্থ রক্ষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ব্যবহৃত হয় যার সাথে বেশির ভাগক্ষেত্রেই ধর্মের কোন সম্পর্ক থাকেনা।

There is contradiction in the words and the deeds of the government. They talk about battling the extremists but also use religion for their own political advantage. The government took no step to implement secular and scientific curricula in all primary schools and madrassas.

জঙ্গিবাদের উত্থানে সরকারের মুখের কথা আর কাজের মধ্যে কন্ট্রাডিকশান স্পষ্ট। মুখে জঙ্গিবাদ দমণের কথা বললেও এবং জঙ্গিবাদ বিরোধীতার কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটলেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানান উপায়ে নিজেরাই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার করে। সেকুল্যার রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে সারা দেশে যে ধরণের সেক্যুলার বিজ্ঞানভিত্তিক একধারার শিক্ষাব্যবস্থা থাকা দরকার, তার পরিকল্পনা করা ও বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না সরকারকে।

আরিফুর রহমান • বাংলাদেশী ব্লগার, যুক্তরাজ্য

It is widely alleged, truly, that these killings are the evident result of callousness of the law enforcers and the government who are taking the country towards backward. These are not ordinary killings or violence, but acts of some organised criminals with a particular motive. Militants have been given scopes to spread under the incumbent government though many developed countries had warned [14] Bangladesh and also pledged [15] to assist in combating militancy [16]. The government is not carrying out [the] probe properly. [It seems to understand] so-called power politics only. I am aggrieved as well as frustrated seeing no [awareness of] reality in [the] speeches and actions of this developing country.

সবাই যেমনটা বলছেন, লিখছেন, এই অপরাধগুলি বাংলাদেশের পশ্চাদপদ মানসিকতার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের অসচেতনতার প্রতক্ষ্য ফলাফল। এই হত্যাগুলি সাধারন খুন জখম নয়, বরঞ্চ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ জঙ্গীদের কাজ। বার বার সাবধান করার [14] পরেও, বিশ্বজুড়ে উন্নতদেশগুলির বিবিধ সহায়তার আশ্বাসের [15] পরেও বাংলাদেশে সরকারী ছত্রচ্ছায়াতেই জঙ্গীবাদ বাড়তে [16] দেয়া হয়েছে। সরকার যেহেতু রাজনীতিতে ক্ষমতার পুরনো সমীকরন ছাড়া আর কিছু বোঝে না, এই হত্যাগুলিও তারা সঠিকভাবে তদন্ত করছে না। আমি ক্ষুব্ধ এবং একইসাথে উন্নয়নকামী রাষ্ট্রের কথা ও কাজে মিল না দেখায় হতাশ।

Arifur Rahman

আরিফুর রহমান

Killing secular writers is not just another murder. There is a huge group working from behind the [scenes]. I doubt whether the government wants to bring them to book or enforce the laws. Look at Avijit murder case probe; police [found] no clue in several months!

আগেই বলেছি এই ‘খুন’ সাধারন খুন নয়। মানে এখানে খুনী একজন ব্যাক্তি হলেও, কর্মটির পেছনে একটি বিশাল মহল জড়িত। সেই মহলটিকে আদৌ সরকার তদন্তের আওতায় আনতে চায় কি না, আনলেও তাদের বিরূদ্ধে কতটুকু আইন প্রয়োগ করবে সরকার, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। মাসাধিককাল পেরিয়ে গেলেও অভিজিৎ রায় হত্যায় পুলিস ‘ক্লু-লেস'।

It is not tough to understand the aim [of fundamentalist groups]. You can easily realise their agenda while going through the 13-point [17] demands put forward by Hefazat-e-Islam and the 10 points [18] declared by Olama League. Bangladesh is a victim of distorted Islam introduced by Saudi Wahabi and Pakistani Moududi followers. This Islam is deeply rooted in the country's economy, thanks to Jamaat-e-Islami and the Saudi Sheikhs. It is not possible to save Bangladesh until we have moral strength and strong resolve to establish secularism. The Wahabi militants want to change.

এদের লক্ষ্য জানাটা কঠিন কিছু না। হেফাজতের ১৩ দফা [17], আর সম্প্রতি পাল্টিদেয়া ওলামালীগের ১০ দফা [18] পড়ে দেখলেই আপনি বুঝবেন আগে উল্লেখ করা মহলের উদ্দেশ্য কি। বাংলাদেশ সউদি ওহাবী এবং পাকি মউদুদী বিকৃত ইসলামের শিকার। এই ইসলাম জামাতের সহায়তায় এবং সউদি শেখদের বদান্যতায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এমনভাবে গেঁড়ে বসেছে যে নৈতিক মনোবল ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি শক্তিশালী অঙ্গীকার না থাকলে এই পাঁক থেকে বাংলাদেশকে বের করা যাবে না। আমরা ওহাবী জঙ্গীবাদের চরিত্র জানি, এটি প্রতিটি আক্রান্ত অঞ্চলকেই শক্তি ও আতঙ্ক দিয়ে বদলে ফেলতে চায় মিনি সউদিতে, কিংবা পাকিস্তানে। ওটাই তাদের লক্ষ্য।

What the extremists are trained to do [kill people], they will keep doing. They will perhaps find new ways to silence opposition. If we must take a lesson from Boko Haram or Al Shabab, we have to protect our secular institutions, especially educational ones, which are their target.

জঙ্গীরা যা করতে সিদ্ধহস্ত, তাদের যে কাজে প্রশিক্ষণ রয়েছে, তারা সেটাই করে যাবে। তারা হয়তো আরো বেশি সৃষ্টিশীল হবে। আফ্রিকাতে বোকো হারাম আর আল-শাবাব থেকে যদি আমরা শিক্ষা নেই, তাহলে দেশের সেকুলার শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানগুলি এদের লক্ষ্যবস্তু, এদের নিরাপত্তা দিতে হবে।

The government hasn't been successful in combating extremism because there are sympathisers of the extremists lurking under government institutions. The technologically-backward government organisations cannot monitor all their [employees’ communications] and they have not tried to [keep] the madrasas of Chittagong and Rajshahi under their control. Some of these madrassas are outside the control [19]of the government. So such inaction from the government does not [elicit] a positive response.

আগেই বলেছি, সরকার এবং রাষ্ট্র জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় তেমন কোন সুফল দেখাতে পারে নাই আমাদের। কারন সরকারের ভেতরে এই জঙ্গীদের মদতদাতা ছায়া সংগঠন লুকিয়ে আছে। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা এই জনপদে সরকারী সকল কর্মচারীর হুলিয়া ও হদিস রাখা সম্ভব করে নাই, এছাড়াও চট্টগ্রামে ও রাজশাহীর সকল মাদ্রাসাও সরকার নিয়ন্ত্রনে আনতে চায় নাই। কওমী মাদ্রাসা [19] এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। কাজেই এতো কাজ ফেলে রাখে যে সরকার, তার কাছ থেকে কোন সৎ প্রতিক্রিয়া আমরা আশা করি না।

ফারজানা কবির খান • বাংলাদেশী ব্লগার , জার্মানি

Like many others, I am frustrated over the investigation process, though this is nothing new. The authorities have remained mum deliberately as they do not want enlightened people. They prefer fundamentalists who would help the government stay in power for long. Militants have supporters in the administration. Or else the militant gang would not be able to kill Oyasiqur on March 30 after one of their accomplices was arrested with arms on March 24. How could a killer like Redwanul Azad Rana flee the country [20] when we have CCTV cameras everywhere? What are the investigators doing then? I doubt whether they are working on the cases at all.

অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর বাবু হত্যা তদন্তকাজ নিয়ে, অনেকের মতো আমিও হতাশ। অবশ্য এটি প্রশাসনের অতীতের পদচারনা মাত্র। তারা ইচ্ছে করেই চুপ করে থাকছে। কারন, তারা আলোকিত মানুষ চায় না। চায়, কিছু ধর্মান্ধ মানুষ, যাদের ধরে দিনের পর দিন মসনদে ঘাপটি মেরে বসে থাকা যায়। প্রশাসনে জঙ্গী সমর্থক আছে, নতুবা মার্চের ২৪ তারিখে বাবুকে মারতে আসা জঙ্গী অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর সেই একই দলের জঙ্গীরা কিভাবে ৩০শে মার্চে তাদের পরিকল্পনায় সফল হয়? এত এত সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার পরও কিভাবে রিদোয়ানুল আজাদ রানার মতো খুনী অষ্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে যায় [20]? তাহলে তদন্তকারীরা কি করছে? তারা কি আসলেই কাজ করছে কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান।

Farazana

ফারজানা কবির খান

I do not think they will arrest the culprits even if they are able to. This is not only happening in the case of atheists. Mystery behind the cases over murders of Old Dhaka pir [21] and Maulana Faruqi [22] allegedly by the radical Islamists is yet to be resolved.

আমি মনে করি খুনিদের ধরতে পারলেও ধরবেনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনটা যে শুধু নাস্তিকদের বেলায় হয়েছে তা কিন্তু না। আমার মনে হচ্ছে, জঙ্গীদের সঙ্গে কিছুটা মতবিরোধ বা ভিন্নমতের হলেই অনেকে খুন হচ্ছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব থাকছে। পুরোনো ঢাকার সেই পীর [21], কিংবা মাওলানা বেলালের [22] বেলায় আমরা তাই দেখতে পাই।

[Fundamentalist groups] want to capture power and establish Shariah law in the country. They want to diminish secularism, one of the principles of independent Bangladesh, and make it a 100% Muslim country from the existing 92%. This conspiracy is on since long.

তাদের [জঙ্গী সংগঠন ও উগ্রপন্থী ইসলামিক দলগুলো] লক্ষ্য শরিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে মসনদে বসা। তারা বাঙলাদেশ থেকে স্যাকুলারিজম ধ্বংস করতে চায় চিরতরে। এখন পর্যন্ত ৯২ ভাগ মুসলিম বসবাসকারী রাষ্ট্রকে তারা ১০০ ভাগ মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। স্বাধীনতার আদর্শগুলো সব মিটিয়ে দিতে চায়। এরা ধর্ম লড়াইয়ের নামে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নেমেছে। আর ষড়যন্ত্র একদিনের নয়, অনেক অনেক আগেই তারা এর বীজ পুতেছে।

Why are they attacking bloggers? They are afraid of the power of pens and knowledge. Only blind belief can make someone blind. A progressive person, for example Avijit Roy, proves through writings how the virus of belief is destroying their humane thoughts and obstructing people from being enlightened. That is why they are scared of the pen. They do not need enlightened people, rather they need blind believers who pray to an imaginary power disregarding the theory of evolution.

এরা কেন প্রগতিশীল ব্লগারদের উপর আঘাত করছে? কারন তারা কলম আর জ্ঞানের শক্তিকে ভয় পায়। মানুষকে অন্ধ করতে অন্ধ বিশ্বাস যথেষ্ট। একজন প্রগতিশীল মানুষ, যেমন অভিজিৎ রায় তার লেখনীতে প্রমাণ করে দেয়, কিভাবে বিশ্বাসের ভাইরাস মানুষের মননশীলতা নষ্ট করছে, কিভাবে আলোর পথে আসতে বাধা দিচ্ছে, তখন তারা কলমকে ভয় পায়। তাদের আলোকিত মানুষের প্রয়োজন নেই। তাদের প্রয়োজন অন্ধদের। সেই অন্ধদের যারা বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যার পর এক অদৃশ্য শক্তির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

If we silence ourselves, then it will be not far when we will reminisce about the history of secularism and independence with old pictures like Afghanistan. There will be no cultural festival and they will consolidate their power at the helm for a long period.

যদি আমরা চুপ করে বেশি থাকি, তখন আর সেদিন দূরে নেই যখন আমরাও আফগানিস্তানের মত ছবি দিয়ে এক সময়ের বাঙলাদেশের স্বাধীনতা আর স্যাকুলারিজমের ইতিহাস মনে করবো। আর ওরা ইরানের মত সামান্য মত বিরোধের কারনে সবাইকে রুদ্ধ করবে। পহেলা বৈশাখ নামে কোন উৎসব রইবেনা এই বাঙলায়। কারন দর্শানো হবে হিন্দুয়ানী উৎসব বলে। তারা অদূর ভবিষ্যতে মসনদে পাকাপোক্ত ভাবে আসন গেড়ে নিবে মসনদে।

Watching the reactions of the government, I think that they are silently allowing the activities of the extremists. This is the first step to implement the Madinah [23] declaration. But they are not realising that this is against the principles of our independence. In 1971 we didn't even consider who is Muslim, who is not.

জঙ্গিদের উত্থানে সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে আমার ব্যাক্তিগত মতামত হলো তারা নীরবে জঙ্গিবাদকে সমর্থন দিচ্ছেন। এটা মদীনা সনদ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ। কিন্তু সরকার টের পাচ্ছেনা, এটা আমাদের স্বাধীনতার উল্টো পদক্ষেপ। ১৯৭১ এ, আমরা দেখিনি, কে মুসলমান আর কে বিধর্মী।

নির্ঝর মজুমদার

ডেইলি স্টার এর প্রাক্তন সাংবাদিক ও ব্লগার, সুইডেন

Nirjhar Mazumder

নির্ঝর মজুমদার

I am very much frustrated over the investigation process. They cannot arrest the killers since there are many associates and sympathisers of the radicals in the law enforcement agencies. These Islamists want to hit the persistent social values of Bangladesh, especially the culture of coexistence of different religions and cultures. They want to popularise extremist views among the ordinary Muslims through their own explanations. Capturing state power is their key target.

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকান্ডে আমি খুবই হতাশ। তারা খুনিদের ধরতে পারেনা কারণ খোদ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলোতেই উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর অনেক সমর্থক ও সহমর্মী আছে। এরা বাংলাদেশের প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধের উপর আঘাত করতে চায়, মূলতঃ ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সহাবস্থানের বিরুদ্ধে এদের অবস্থান। নিজস্ব ব্যাখ্যার মাধ্যমে ইসলামের উগ্রবাদী ধারাকে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে চায়। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই এদের মূল লক্ষ্য।

They are carrying out offensives against the bloggers because the Internet penetration is still low in the country and they want to silence freedom of speech that exposes their narratives and political message. Bloggers with secular ideologies are threats to these people with extreme ideologies as they are aware of their political stance and motives. Bloggers, although less in numbers, are playing a role in the politics with their writings.

এরা ব্লগারদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাচ্ছে কারণ দেশে ইন্টারনেট সুবিধাভোগীদের সংখ্যা এখনো অনেক কম, ফলে অপপ্রচার চালিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এরা মফস্বলে ও গ্রামে মসজিদগুলোকে ব্যবহার করে তাদের অবস্থান সুসংহত করছে। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের ব্লগ বা নিউ মিডিয়া সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে। আসলে প্রগতিশীল ব্লগাররা জঙ্গীদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ কেননা এসব জঙ্গী সংগঠনের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে তারা সচেতন। সংখ্যায় কম হওয়া সত্বেও লেখনীর মাধ্যমে তারা রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছে।

The government's stand on extremism can be explained in two ways: either they may have no intention to stop them or they are not giving importance to the rise of extremism. The nature of investigations and not considering the fact that extremism is spread at grassroots level is worth mentioning. Whatever the reason behind this is very frustrating.

জঙ্গী ইস্যুতে সরকারের অবস্থান দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায় – এদের কার্যক্রম বন্ধ করার কোন ইচ্ছাই সরকারের নেই অথবা উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছেনা। আবার খুনের পেছনের কারণ অনুসন্ধান এবং তৃণমূল পর্যায়ে জঙ্গীবাদের বিস্তার প্রশ্নে সরকারের সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট। এ ধরণের আচরণের পেছনে যে কারণই থাকুক না কেন তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

*আমরা ব্লগারদের নিরাপত্তার ব্যপারটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশে অবস্থানরত সক্রিয় কর্মীর নামটি উহ্য রেখেছি ।