সম্প্রতি বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাছাড়া দারিদ্র্য কমানো, স্কুলে নারী শিক্ষার্থীর হার বৃদ্ধি এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। তবে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক নয়।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংগঠন আইন ও শালিসি কেন্দ্র তাদের একটি প্রতিবেদনে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১০১ জন মানুষ বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে। এদের মধ্যে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ২৯ জন। আর রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের।
নিউ এইজ পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২০০ জনের অধিক গুম হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকরই কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এই নিখোঁজ হওয়া মানুষের তালিকায় আছেন কুমিল্লার লাকসামের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম। তিনি ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে নিখোঁজ হয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যরা জানেন না, তিনি বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। আন্তজার্তিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে সাইফুল ইসলামের মেয়ে মাশরুফা ইসলাম বলেছেন:
আমার বাবাকে কী করা হয়েছে, আমরা জানি না৷ তিনি জীবিত, না তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে তাও জানি না৷ এ ঘটনায় মামলা করা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই৷ তারপরও নানা রকমের চাপ রয়েছে মামলা না চালানোর জন্য৷
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’র পরিচালক ড. শাহদীন মালিক বাংলাদেশে এ ধরনের গুমের ঘটনা ঘটার প্রধান কারণ হিসেবে “দায়মুক্তির সংস্কৃতির” কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গুম এর শিকারদের পরিবারদের বেশিরভাগ গুমের পিছনে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)-এর বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকার সংশ্লিষ্ট বাহিনীর দোষীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বাংলাদেশের সরকারগুলো তদন্তের দাবি এড়িয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে।
এজন্য হিউম্যান রাইটস এশিয়া ‘দায়মুক্তি’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে:
#BANGLADESH: #Disappearance will never stop unless #impunity is ended: http://t.co/Bzt0XCmN
— AHRC (@humanrightsasia) April 20, 2012
বাংলাদেশ: দায়মুক্তি বন্ধ না হলে গুমের ঘটনা কখনোই বন্ধ হবে না।
ইঞ্জিনিয়ার শপথ গুহ গুম বন্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন:
Please raise ur voice now to stop #judicial #killing & #enforced #disappearance in #Bangladesh. Tomorrow u may be the #victim too. Act now!
— Shapath Guha (@ShapathG) May 3, 2014
বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনার বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হোন। তা না হলে আগামীতে আপনিও এ ঘটনার শিকার হতে পারেন।
এদিকে মুক্তাশ্রী চাকমা আইনের ছত্রচ্ছায়া কী ঘটছে, তা জানতে চেয়েছেন:
Rise in #enforced #disappearance in #bangladesh http://t.co/xD16ubA4Ep What's exactly happening in the country in the name of rule of #law?
— Muktasree Chakma (@SathiChakma) March 5, 2014
বাংলাদেশে গুমের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনের নামে দেশে এসব কী হচ্ছে?
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে র্যাবের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তজার্তিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাবের বিলুপ্তিরও দাবি জানিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুম বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচে’ ভয়াবহ সমস্যা বলে উল্লেখ করেছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ ধারার ‘জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা’ দেয়ার বিষয়টি শুধু কাগজেই আছে উল্লেখ করে শরীফ হাসান এবং লাম-ইয়া মুস্তাক ঢাকা ট্রিবিউনে লিখেছেন:
In reality, these provisions have not been implemented, and this very fundamental right is being repeatedly violated with complete impunity. Enforced disappearances, that took thousands of human lives in the early 1970s and continued during the tenures of the successive governments with fewer numbers of cases, have resumed, without consequence, in Bangladesh after the RAB started operating [2004] in the country.
বাস্তবে এই ধারার কোনো প্রয়োগই দেখা যায় না, দায়মুক্তির কারণে বারবার এই মৌলিক অধিকারের লংঘন হচ্ছে। ১৯৭০ দশকের শুরুর দিকে কয়েক হাজার মানুষের গুমের ঘটনা ঘটে। পরের সরকারের আমলগুলোতেও কম-বেশি এটা অব্যাহত ছিল। তবে বাংলাদেশে র্যাবের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর [২০০৪ সাল] কোনো কারণ ছাড়াই এটা আবার শুরু হয়েছে।