রেঙ্গুন প্রকাশ শিরোনামে একটি ফেইসবুক পেইজ ব্যবহার করে একদল ছেলেমেয়ে উত্তর মিয়ানমারে মিতকিনা শহরে এক মানবিক সফরের আয়োজন করেছে। সেখানে এক লক্ষেরও বেশী অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ (আইডিপিএস) বর্তমানে অস্থায়ী বিভিন্ন শিবিরে বসবাস করছেন।
শিবিরে বসবাসকারী লোকজনের জীবনচিত্র নথিভুক্ত করা এবং শিবিরের বাসিন্দাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা প্রস্তাবিত এই সফরের মূল লক্ষ্য। দলটি আশা করছে, সফরের আগে ২ হাজার মার্কিন ডলারের একটি তহবিল তাঁরা গঠন করতে পারবে।
রেঙ্গুন প্রকাশ পেইজটির প্রতিষ্ঠাতা, ১৭ বছর বয়সী থও এইচটেট তাঁর ইনডিগোগো পেইজে প্রচারাভিযানটির সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য দিয়েছেঃ
আমরা যখন শুনেছি যে ১ লক্ষ ২০ হাজার লোক তাঁদের নিজের দেশেই শরনার্থী হিসেবে বসবাস করছেন, কেবল বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন এবং দিনে ২০ সেন্টেরও কম অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তখন আমাদের কিছু একটা করতেই হয়েছে।
হিউম্যান অব নিউইয়র্ক পেইজের অনুপ্রেরণায় রেঙ্গুন প্রকাশ পেইজটি তৈরি করা হয়েছে। পেইজটিতে ইয়াঙ্গুনের (মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নাম) সাধারণ অধিবাসীদের বিভিন্ন গল্প শেয়ার করা হয়।
তবে এবার এই ছেলেমেয়েরা আশা করছে জনপ্রিয় এই ফেইসবুক পেইজে ইয়াঙ্গুনের বাইরে থাকা মিয়ানমারের বাসিন্দাদের অবস্থা সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানতে পারবে।
তাঁরা উল্লেখ করেছেঃ
[…] আমরা রেঙ্গুন প্রকাশে যেমনটি করে থাকি সেই একই বিন্যাসে শিবিরে বসবাসকারী লোকজনের জীবনচিত্র নথিভুক্ত করা আমাদের লক্ষ্য। এটি শুধুমাত্র সাধারণ বার্মিজ জনসাধারণের কাছে আইডিপিদের জীবনচিত্রকে শুধুমাত্র উন্মুক্ত করবে না বরং আন্তর্জাতিকভাবে সারা বিশ্বের সরকারগুলোও যেন এই অঞ্চলে প্রকৃত অর্থে শান্তি প্রজ্বলিত করতে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করতে পারেন সেটিও একটি লক্ষ্য।
কাচিন স্বাধীনতা সংস্থার (কেআইও) সেনাবাহিনী এবং সরকারের সৈনিকদের মধ্যে ২০১১ সালের জুন মাসে যুদ্ধের একটি পুনরারম্ভ ফলাফল হিসাবে বিপুল সংখ্যক কাচিন জনগণ – অনেকগুলো জাতিগত গোষ্ঠী যাদের বেশিরভাগ দেশটির উত্তরে অবস্থিত কাচিন রাজ্যে বাস করে – তাদের ঘর-বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এই পুরো সংঘর্ষে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার জন লোক উদ্বাস্তু হয়েছেন এবং চীনা সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত ১৭২ টি উদ্বাস্তু শিবিরে তাঁরা এখন চরম দারিদ্যের মাঝে বসবাস করছেন। মেটা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের লাফাই সেং র এর মতে, গত চার বছরে উত্তর মিয়ানমারে আইডিপিদের প্রতি দেওয়া সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেছেনঃ
চলমান সংঘর্ষ চতুর্থ বছরে পদার্পণ করায় দীর্ঘ সময় ধরে যারা তাঁদের দেখাশুনা করে আসছে সেসব দাতা গোষ্ঠী, সামাজিক সংগঠন ও আয়োজক সম্প্রদায়গুলো সেগুলোর মাঝে শ্রান্তির বিষয়গুলো সমঝোতা হয়েছে। সম্প্রতি আইডিপি শিবিরগুলোতে চরম খাদ্যাভাব বিরাজ করছে। সেখানে তাদের দৈনন্দিন খাদ্য রেশনে ব্যক্তি প্রতি প্রয়োজনীয় ক্যালরি ৪০০ থেকে কমে মাত্র ২০০ ক্যালরিতে (প্রায় ২০ মার্কিন সেন্ট) নেমে এসেছে।
আন্তর্জাতিক সমর্থন কমে যাওয়ায় কাচিনের নাগরিক গ্রুপগুলো আইডিপিদের জন্য তহবিল গঠন বাড়াতে বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, এখন আইডিপিদের জন্য উদ্বেগ, যত্ন এবং অবদান নামের ফেইসবুক পাতা অনুদানের জন্য আবেদন জানাচ্ছে।
ইতিমধ্যে কাচিন শান্তি নেটওয়ার্ক নামের সংস্থাটি শরনার্থী শিবিরগুলোতে আইডিপিদের মারাত্মক বিপর্যয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেঃ
সেখানে ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ দৈনিক (খরচ) ৪০ সেন্টের মূল্যমান জীবন ধারণ করছে। শীঘ্রই সংখ্যাটি অর্ধেকে নেমে আসবে। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধে মৌলিক চাহিদার মাত্র শতকরা ১৭ ভাগ তাঁরা পূরণ করতে পারছে। মিয়ানমারের আইডিপিদের অবস্থা সত্যিই খুব উদ্বেগজনক। বৃহত্তর অর্থায়ন এবং আর্থিক সহায়তা তাঁদের জন্য খুবই জরুরী।