জাপানের জাতীয় সংসদ (ডায়েট) ৬৭ বছরের পুরোনো এক আইন পাল্টে দেওয়ার জন্য ভোট প্রদান করেছে, যে আইনে বলা ছিল যে মাঝ রাতের পর জাপানে শুঁড়িখানা এবং নাইট ক্লাবে নাচা নিষিদ্ধ।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টোকিও অলিম্পিককে “অতিথির জন্য আরো আনন্দদায়ক” করার লক্ষ্যে জনগণের দাবী, পুলিশ এবং সংসদীয় কমিটির পরামর্শের জবাব ছিল এই ভোট।
কয়েক দশক পুরোনো এই আইন, যাকে বিনোদন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নত করার আইন হিসেবে অভিহিত করা হত (জাপানী ভাষায় যাকে ফুয়েইহো বলে অভিহিত করা হয়), মূলত নৃত্যশালার আড়ালে পতিতাবৃত্তি মোকাবেলা এবং সাথে এই উদ্বেগের কারণে যে এই সকল স্থানে মাদকের ব্যবহার এবং সহিংসতা বাড়াবে তাই এর নিয়ন্ত্রণে এই আইনের প্রয়োগ শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার সেনাদের জাপানে দখলদারিত্বের সময়।
এই আইনের বিস্তৃতি এত বেশী যে এমনকি এই আইনের অধীনে নাচের ক্লাশে জুটি বেঁধে নাচাও কার্যত নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯৫০-এর দশকে জাপানের ওকিনাওয়ার বাইরে আমেরিকার সেনাদের অবস্থানের ইতি ঘটার পর জাপানি পুলিশ এই আইনের প্রয়োগ শিথিল করা শুরু করে। তখন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই ফুয়েইহো আইনের তেমন একটা কার্যকর প্রয়োগ করেনি। ২০১০ সালে ওসাকার এক নৈশক্লাবে হাতাহাতি থেকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে ২২ বছরের এক ছাত্রের খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনার পর থেকে পুলিশ নৈশ ক্লাবগুলোয় হানা দিতে শুরু করে এবং লাইসেন্স লঙ্ঘনের দায়ে সেগুলোকে বন্ধ করে দেয় এবং বেশ কয়েকজন ডিজে এবং ক্লাবের পৃষ্ঠপোষককে গ্রেফতার করে।
যখন টোকিওর নগর প্রশাসন গণ নৈতিকতার বিষয়ে মনোযোগ প্রদান করা শুরু করে, তখন জাপানের এই রাজধানী শহরে রাতের বেলায় নাচের আসরে পুলিশি হামলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।
২০১০ সালে শুরু হওয়া এই আসর বন্ধ করে দেওয়া এবং গ্রেফতার করার ঘটনা জনমনে সমালোচনার সৃষ্টি করে, যারা দাবী করে যে সরকার “নাচের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে”।
最近梅田の某クラブに深夜行った時はなんかもう滑稽だったなあ。 人でパンパンのフロアでみんなユラユラ揺れてる。それは大丈夫なのに、少しステップ踏もうとしたり身ぶり手ぶりを大きくした途端に(本当に少しの差)セキュリティが飛んできて「踊らないでくださーい!」 わろたわ…いやわろえない… — クサカアキラ7/3アメ村FARPLANE (@Akira_Kusaka) May 16, 2012
খুব সম্প্রতি আমি মাঝরাতে উমেদা ক্লাবে গিয়েছিল, সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা এক বিচিত্র আচরণ করছিল। তারা মেঝের উপর জোরে জোরে পা ঠুকছিল এবং পাশাপাশি দুলছিল। তবে বিষয়টি কোন এক ভাবে ঠিকই ছিল। কিন্তু যদি আপনি কারো পায়ের ধাপ গুলো দেখেন তাহলে আপনি বুঝবেন কেউ ঠিক তার নাচের ছন্দের মাঝে রয়েছে (আর আপনি এই নিয়ে খুব সামান্য আলোচনা করেছেন)। হঠাৎ করে যেন মাটি ফুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর আগমন ঘটল এবং বলল “ দয়া করে এখানে নাচবেন না!” যদিও আমার হাসা উচিত ছিল না … এবং আমি না হেসে পারলাম না”।
২০১২ সালে যখন জাপানের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যখন মধ্যরাতের নাচের আসরে ব্যাপক ভাবে ধরপাকড় চালাতে শুরু করে সে সময় জাপানের জাতীয় সংবাদ আশাহির এক প্রভাত সংখ্যায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধ নৃত্য প্রেমীদের যথেষ্ট সমর্থন লাভ করে:
今朝の朝日新聞の朝刊に掲載されたらしい「クラブじゃ踊れない?」って記事、素晴らしい。ちょうど私も大阪で新聞記者やってるマブダチに「書いて〜!」と訴えていたところでした。Ele-Kingのこの記事 http://t.co/6pU0lL0y も◎。色んな媒体で議論されるべき!
— yuko asanuma (@yukoasanuma) May 16, 2012
আমি আশাহির প্রভাত সংস্করণে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলাম যার শিরোনাম ছিল “ক্লাবে কোন নাচানাচি নয়?” আমি ভাবলাম বিষয়টি দারুণ। আমি মাত্র আমার ওসাকার উত্তম সাংবাদিক বন্ধুকে আহ্বান জানিয়েছিলাম, “এই বিষয়ে লেখার জন্য!” এলে-কিং এর লেখা এই প্রবন্ধ অবশ্যই পাঠের যোগ্য ( যার শিরোনাম “ ওসাকায় ঘৃণ্য গ্রীষ্ম) । বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ায় আমাদের অবশ্যই গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে!
সেই ২০১২ সালে, ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মন্তব্যের প্রতি নাগরিকের তাদের অবিশ্বাস প্রদর্শন করছে:
“今朝の朝日新聞「クラブじゃ踊れない!?」記事、大阪府警保安課のコメントには目を疑った。ここ→「大勢が集まる場所では大量殺人の危険があると考えたことも摘発強化の要因の一つ」。…” http://t.co/yRkjV4sy
— イスタ (@isuta) May 18, 2012
আজ সকালে ওসাকার গণ নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান যে বিবৃতি প্রদান করেছে, আমি তা পাঠ করেছি। “ ক্লাবে কোন নাচানাচি নয়”!আশাহির এই প্রবন্ধ দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি, আসুন বিষয়টির ওপর নজর দেই-আমাদের প্রথম এবং প্রধান চিন্তা হবে গণ হত্যার মত বিষয়ের প্রতি গভীর মনোযোগ প্রদান করা, যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক একদল লোক এক স্থানে জড়ে হলে সংঘঠিত হয়।
একই প্রবন্ধে এই আইনের বিরুদ্ধে আয়োজিত এক প্রচারণার অংশ হিসেবে এই স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান এবং নাগরিকেরা তাদের প্রতিবাদের জন্য যে টুইটারে গিয়েছে সে কথা উল্লেখ করা হয়:
朝日新聞全国版に大阪 NOON ガサ入れの記事が載った。マスメディアが風営法に疑問を投げかけるのは初めてじゃない?署名運動についても触れてる。ちょっとずつ動き出してるかも知れない。みんな頑張ろう!出来る事はとにかく周知、拡散!http://t.co/halAABXJ — juː a.k.a ゅヽ(´ー`)ノ ぅ (@odorah) May 16, 2012
আজ সকালে আশাহিতে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ওসাকার এক ক্লাব যার নাম নুন সেখানে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। এই প্রথম গণ মাধ্যম বিষয়টি সামনে তুলে আনল, তাই নয় কি? তারা এমনকি স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযানের বিষয়ে লিখেছে যে প্রচারণার মধ্যরাতে নাচের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আমি মনে করি এই ঘটনা বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সকলে, হাল ছাড়বেন না। একটি পথ না হলে অন্য পথে, আসুন আমরা এই বাক্য ছড়িয়ে দেই এবং সাধারণ চেতনার মাঝে বিষয়টিকে উপস্থাপন করি!
এই আইন পুনর্বিবেচনার বিষয়টি জুন ২০১৬-এ কার্যকরী হবে, তবে মাঝখানের এই সময়টিতে মধ্যরাতে নাচার অনুমতি রয়েছে। তবে একই সাথে নির্দেশ রয়েছে এই সকল ক্লাবের আলোর উজ্জ্বলতার পরিমাণ ১০ লাক্স হতে হবে, যা সাধারণত প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখানোর পূর্বে সেখানকার আলোর উজ্জ্বলতার সমান।
যে কোন নাইট ক্লাব, যে নুন্যতম প্রয়োজনীয় আলো জ্বালিয়ে রাখার শর্ত পালন করে না, তাদেরও প্রচলিত এই আইন মেনে চলতে হবে।
Japan lifts “no-dance” law known as Fueiho http://t.co/aPOPWkCujA pic.twitter.com/XN3PNlojh2
— 6AM Group (@6AMGroup) June 17, 2015
২০১৩ সালে ১,৫০,০০০ জন ব্যক্তির স্বাক্ষর সম্বলিত এক দরখাস্ত সরকারের কাছে প্রদান করা হয়, যেটিতে লেখা হয়েছে সরকার যেন সারা রাত নাচার অনুমতি প্রদান করে। একই সাথে জাপানে বেড়াতে আসা বিদেশী পর্যটকেরা আগত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আলোকে এই পরিস্থিতির আরো উন্নতির আশা করছে, এদিকে জাপানের রাজনীতিবিদদের উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সমস্ত বিদেশিরা জাপানের রাতের জীবনে অংশগ্রহণের ইচ্ছে পোষণ করেছে, তারা হয়ত মধ্যরাতে নাচ নিষিদ্ধের বিষয়টি জানতে পেরে বিভ্রান্ত হতে পারে। মধ্যরাতে নাচের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার সংবাদটি অনেকের কাছে এক ভাল সংবাদ হয়ে এসেছে।