২০১৩ সালে বিশ্বে ১১ লক্ষ নাগরিককে একই সাথে যক্ষা (টিবি) এবং এইচআইভি রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এই ১১ লক্ষ নাগরিকের মধ্যে ৩৬০,০০০ জন নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে, আর বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই বিষয়টি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এইচআইভি যে কারো এত বেশী সিডি৪ সেল ধ্বংস করে দিতে পারে যে এর ফলে শরীর আর কোন সংক্রমণ কিংবা রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি হারিয়ে ফেলে।
যারা এইচআইভিতে আক্রান্ত তারা সাধারণত যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয় না। যদি না তারা এমন কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে যে যক্ষা রোগে আক্রান্ত। কিন্তু যদি তারা এমন কোন রাষ্ট্রে বাস করে যেখানে যক্ষা রোগে প্রাদুর্ভাব খুব বেশী, তাহলে তাদের এর দ্বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে
ভারতে যক্ষা এবং এইচআইভি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জটিলতার সৃষ্টি করেছে, শোভা শুক্লা সিটিজেন নিউজ সার্ভিসে যেমনটা লিখেছে:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, ভারতে যক্ষা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশী, যেখানে বছরে ২৩ লক্ষ নাগরিক এই রোগে আক্রান্ত হয় (বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত নাগরিকের সংখ্যা ৮৭ লক্ষ) এবং ভারতে বছরে ৩২০,০০০ নাগরিক এই রোগে মৃত্যুবরণ করে। ভারতে যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগীদের মাঝে শতকরা ৫ শতাংশ কিংবা ১১০০০ জন নাগরিক এইচআইভি রোগেও আক্রান্ত। আর এই কারণে ভারত বিশ্বের এইচআইভি আক্রান্ত যক্ষা রোগীদের সংখ্যায় বিশ্বের সবার উপরে অবস্থা করছে, যে দেশটিতে বছরে গড়ে বিশ্বের মোট এই ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীর ১০ শতাংশের বাস, যেখানে ১০০,০০০ জন রোগী একই সাথে দুটো রোগে আক্রান্ত হয়। সময়মত চিহ্নিত না হলে কিংবা চিকিৎসা না গ্রহণ করার কারণে প্রতি বছর একই সাথে দুই রোগে আক্রান্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যা নাগরিক মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে ভারতে এক হিসেবে বছরে গড়ে ৪২,০০০ নাগরিক এইচআইভি/ যক্ষা রোগে আক্রান্ত নাগরিক মৃত্যু বরণ করে। এইচআইভি রোগে আক্রান্ত রোগী শেষে যক্ষা রোগের মত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়, যা তাদের জন্য এক ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। খোলা জায়গা, বিশুদ্ধ বায়ু, পায়খানা, সূর্যকিরণ, এবং শিক্ষার অভাবে এইচআইভি/যক্ষা ভারতে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই দুই রোগের ক্ষেত্রে বর্তমানে রিট্রোভাইরাল থেরাপি এবং যক্ষা প্রতিরোধী চিকিৎসা কেবল সহজলভ্য। বর্তমানে এইচআইভি রোগে আক্রান্তদের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই, যদিও এন্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসার মাধ্যমে খানিকটা সময় এইচআইভি ভাইরাসকে দমিয়ে রাখা যায়।
মেডিসিন সন ফ্রন্টিয়ার (এমএসএফ) এমন এক সংস্থা যা ভারতে একই সাথে এইচআইভি এবং যক্ষা রোগে আক্রান্তদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে, বিশেষ করে হিজরাদের মত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য।
এমএসএফ (ভারত) কর্তৃক নির্মিত উপরের এই ভিডিওতে মহারাষ্ট্র প্রদেশের মুম্বাই নগরীর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা থেকে বেঁচে যাওয়া ইকবাল ব্যাখ্যা করছে কি ভাবে সে এই রোগকে পরাজিত করেছে, সে বলে “আপনাদের অবশ্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে, হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। সে বলছে যে দুই বছর ধরে যক্ষার সাথে যুদ্ধ করতে করতে যে অবশেষে সে অনুভব করেছে সে ভাল হয়ে গেছে। ইকবাল পরামর্শ প্রদান করছে যে, “সবকিছু ভাল হয়ে যেতে পারে, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং আপনি আর সবার মত এক সুস্থ সবল জীবন যাপন করতে পারবেন”।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে :
যে সমস্ত ব্যক্তি এইচআইভি রোগে আক্রান্ত তাদের যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়া খুব সাধারণ এক বিষয়, এই সমস্ত ব্যক্তির মধ্যে তারাও রয়েছে যারা এন্টি রেট্রোভাইরাল চিকিৎসা গ্রহণ করেছে এবং এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অন্যতম এক কারণ হচ্ছে এই যক্ষা।
অঙ্কনশিল্পী জর্জ বাটলার, যে ২০১৩ সালে সে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা বিষয়ে এমএসএফ সাথে যৌথ ভাবে কাজ করে, যারা এই রোগে আক্রান্ত তাদের ছবি এঁকে, সে তার ওয়েবসাইটে লিখেছে :
এখন পর্যন্ত যক্ষা রোগকে উপেক্ষা করা হয়েছে কিন্তু ক্রমশ আরো জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে বিশ্বের প্রধান রাজধানী শহর এবং আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে লন্ডনে।
এএইচআইভি এবং যক্ষা এ দুটি রোগ নিয়ে বেশ জোরালো কুসংস্কার রয়েছে, এবং এই দুটি রোগের কারণে অনেক রোগী তাদের চাকুরি হারিয়েছে। চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি তাদের কাউন্সেলিং মাধ্যমে রোগীদের সাহায্য করা যায়।
A patient with MDR-#TB & #HIV waits for his regular check-up in #MSF clinic #India http://t.co/4xHpDw9SgE pic.twitter.com/0ua6Vc53Ch
— MSF Ireland (@MSF_ireland) May 16, 2014
বহুবিধ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা ও এইচআইভি রোগী ভারতের এমএসএফ ক্লিনিকে তাদের নিয়মিত পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ভারতীয় সরকার এইচআইভি/এইডস এবং যক্ষা রোগ নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, দেশটি যক্ষা নিয়ন্ত্রণে ২৫২ মিলিয়ন মার্কিন ব্যায় করেছে, যার ৬৬ শতাংশ অর্থ এসেছে আভ্যন্তরীণ ভাবে এবং ৩৪ শতাংশ পাওয়া গেছে বিদেশী অনুদান থেকে।
কিন্তু ভারতের শক্তি গর্গ –এর মতে কর্তৃপক্ষ এই সকল রোগের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ প্রদান করছে না:
India has been able to eradicate polio with its mission modedness. Why cant such urgency be brought to anti-TB/HIV program? #tickingTimeBomb
— Trouble-phile Indian (@shakti_garg) October 26, 2014
ভারত মিশন মোদেদনস-এর মাধ্যমে পোলিও নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে, কেন যক্ষা /এইচআইভি নির্মুল কর্মসূচির ক্ষেত্রে সেই তাগিদ আনা সম্ভব হচ্ছে না।