“বেটা, ওঠো! দ্যাখো, তোমার জন্য খেলনা এনেছি। ওঠো বেটা!”
উপরের কথাগুলো সাহির সালমান আবু নামুসের বাবা’র। তিনি সাহিরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে এ কথাগুলো বলছিলেন। ইসরাইলি বোমার আঘাতে চার বছর বয়সী সাহির ততক্ষণে মারা গেছে। ১১ জুলাই ২০১৪-এ গাজার উত্তরাঞ্চলে তাল আল-জাতারে সাহিলদের বাড়িতে ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান বোমাবর্ষণ করলে এ ঘটনা ঘটে। অবশ্য এ ঘটনা ঘটার তিনদিন আগে থেকেই গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই তিনদিনে ১৩০ জন মারা যান। এদের মধ্যে ২১ জন আবার সাহিরের মতো শিশু। উল্লেখ্য, সেবার ৫১ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন।
আরো পড়ুন: যুদ্ধে গাজায় হাজার হাজার মানুষ নিহত
সাহিরের এই বেদনাদায়ক মৃত্যু যুক্তরাজ্যের ব্রাইটনের শিল্পী কেরি বেয়লকে তুমুল আলোড়িত করে। তিনি ‘বিয়ন্ড ওয়ার্ডস’ নামের একটি শিল্প প্রকল্প হাতে নেন। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল গত গ্রীষ্মকালে ফিলিস্তিনে যেসব মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতিকৃতি আঁকা। গ্লোবাল ভয়েসেস-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বেয়ল তার প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন।
It all started when I read the story of Sahir Abu Namous, in a news tweet on Twitter. One of his relatives was explaining how he had died. He was only four. It wasn't another depersonalised report, it was real. It was a family member's plea of desperation and hopelessness. It was so raw,5 in that moment it hit me like a ton of bricks.
টুইটারে একজন একটি খবর শেয়ার করেছিলেন। সেটি ছিল সাহির আবু নুমাসের মৃত্যুর ঘটনা। তখনই এই প্রকল্পের বিষয়টি আমার মাথায় আসে। আমার মনে আছে, প্রতিবেদনে তার একজন আত্মীয় বলছিলেন, সে কীভাবে মারা গেছে। তার বয়স মাত্র চার বছর। এটা অন্যান্য খবরের মতো গতানুগতিক কোনো খবর ছিল না। এটা ছিল একটি মানবিক প্রতিবেদন। পরিবারের সদস্যরা সেখানে হতাশা আর আশাহীনতার কথা বলছিলেন। আমার কাছে খুবই নিষ্ঠুর মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল যেন কেউ ইঁট মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।
জুলাইয়ের মধ্যে ৩ হাজার পাউন্ড (৪,৭১১ মার্কিন ডলার) তোলার লক্ষ্যে বিয়ন্ড ওয়ার্ডস কিকস্টার্টারে তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই টাকা দিয়ে বেয়ল “ছবি আঁকার অনুষঙ্গ কেনা, ছবি বাঁধানো, সেগুলো গাজায় পাঠানো, সেখানে প্রদর্শনী আয়োজনের” পরিকল্পনা করেছেন।
I think I'm probably not alone when I say I felt completely helpless. It's just so devastating, the sheer amount of innocent men, women and children's lives just evaporating. It's a tough and overwhelming thing to think about and I, perhaps like others, often disconnect from it it so I can function in my own life.
But that day, it struck a chord that I couldn't switch off from.
I felt compelled to do something, so I painted him. I had no idea what the response would be as it's such a sensitive topic.
I showed the portrait to his family and they loved it. It reinforced that urge to take action, so I've gone on to paint many more lives that have been lost.
সাহিরের মৃত্যুর প্রতিবেদন পড়ে আমি থ’ হয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমি নিজেকে বলেছি, আমি একা নই। এটা খুবই অমানবিক ব্যাপার। হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুর অকাতরে প্রাণ দেয়া মেনে নেয়া যায় না। আমার মতো আরো অনেকের কাছেই এটা ছিল বর্বর ও মর্মান্তিক ঘটনা। তবে আমি চাইলে এটা থেকে দূরে থাকতে পারতাম, আমার মতো করে জীবনযাপন করতে পারতাম।
কিন্তু আমি পারেনি। এর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছি।
আমি মনে করেছি, আমার কিছু করা দরকার। তাই আমি তাদের প্রতিকৃতি এঁকেছি। আমার কোনো ধারনাই ছিল না, স্পর্শকাতর এই ঘটনার কেমন প্রতিক্রিয়া হবে।
যাদের প্রতিকৃতি এঁকেছি, তাদের পরিবারকে আমি সেটা দেখিয়েছি। তারা সবাই সেটা পছন্দ করেছেন। আমার আঁকা ছবি একটা পদক্ষেপ নিতে তাদের আবেগকে চাঙ্গা করেছে। তাই আমি গাজায় প্রাণ দেয়া আরো বেশি মানুষের প্রতিকৃতি আঁকতে চাই।
যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেয়ল তার বক্তব্য শেষ করেছেন:
The reaction has been amazing, with every positive comment it reinforces the motivation I have for this project. I've been so fortunate along the way with people enthusiastic to help the project move forward. For example my friend Dan, who has been keen to get involved in spreading the word of the project, Simon and Robin from Bristol who produced the video.
Mohammed Zeyara who kindly shared the video for the project which has helped a great deal in spreading the word. A great feeling of warmth and support has been shown by the people of Palestine, and I feel I've made friends along the way with Iman, Shareef and DiaaMahmoud, who have shown invaluable support towards the project.
সবার কাছ থেকে বিস্ময়কর রকমের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আমার প্রকল্প নিয়ে তারা ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আমার সৌভাগ্য যে, প্রকল্পটি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কিছু উৎসাহী মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। এদের মধ্যে আমার বন্ধু ড্যানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সে এই প্রকল্পের কথা সবার কাছে পৌঁছে দিতে খুব খেটেছে। ব্রিস্টলের সিমন ও রবিন একটি ভিডিও বানিয়ে দিয়েছেন।
মোহাম্মদ জেয়ারা প্রকল্পের ভিডিও সবার সাথে শেয়ার করেছেন। এতে করে সবাই আমার প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ফিলিস্তিনের মানুষের কাছ থেকেও আন্তরিক সমর্থন পেয়েছি। এই প্রকল্পের কাজ করতে এসে আমি ইমাম, শরীফ এবং দিয়ামাহমুদের মতো বন্ধু পেয়েছি। তারা প্রকল্পটি সফল করতে যে সহযোগিতা করেছেন, তা ভোলার নয়।
এখন পর্যন্ত শেষ হওয়া প্রতিকৃতিগুলোর কিছু এখানে রইলো। আরো প্রতিকৃতি দেখতে চাইলে তাদের বিয়ন্ড ওয়ার্ডস-এর ফেসবুক পেইজ দেখুন।