- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

জিম্বাবুইয় লেখককে স্মরণ করা যিনি ‘সবকিছুর বিরুদ্ধে’ ছিলেন

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, নাগরিক মাধ্যম, সাহিত্য
Dambudzo Marechera

ডামবুদজো মারেখেরা'র ছবি এবং তার কবিতা দ্যা বার-ষ্টুল এডিবল ওয়র্ম। ছবিটি তার ফেসবুকের পাতায় প্রকাশ করা হয়েছে।

ডামবুদজো মারেখেরা [1]‘র ফেসবুকের পাতা [2] আফ্রিকীয় সাহিত্যের সবচেয়ে খামখেয়ালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে একজনের জীবন ও সময় উদযাপন করছে। মারেখেরা একজন জিম্বাবুইয় লেখক ও কবি ছিলেন যিনি ১৯৮৭ সালে ৩৫ বছর জীবন অতিবাহিত করার পর মৃত্যুবরণ করেন, যে জীবনকে তিনি তার নিজের ভাষায় ‘আমার নিজেকে একটি লজ্জাজনক রহস্য হিসেবে তৈরী করার একটি প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন।

যার লেখার শৈলীকে তার আনুষ্ঠানিক জীবনীকার ‘পুঁথিগত মর্মাঘাত চিকিৎসা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন [3] সেই মারেখেরা জিম্বাবুইয়েতে সাধু আগষ্টিনের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জিম্বাবুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, এবং অক্সফোর্ডের নতুন কলেজে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি তিনটির সবগুলো থেকেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।

যখন তাকে নতুন কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয় তখন তার প্রাক্তন বান্ধবীর কাছে তিনি যা লিখেছেন [4] তা নীচে দেয়া হলো:

I think by now you have heard what happened when those hypocrites in administration chased me from their white university giving me an option between being sectioned or expelled. I chose the latter, a decision which shocked them out of their warped wits.

প্রশাসনের ঐ ভণ্ডরা যখন আমাকে পৃথক বিভাগে থাকা বা বহিষ্কৃত হবার মধ্যে একটি বেছে নেবার সুযোগ দিয়ে তাদের শ্বেত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিতে উদ্যত হলো তখন কী হয়েছিলো তা আমার মনে হয় তুমি হয়তো এতোক্ষণে শুনেছো। আমি শেষেরটি বেছে নিয়েছিলাম, যে সিদ্ধান্তটি তাদেরকে খুবই বিষ্মিত করেছিলো।

মারেখেরা ক্ষুধার গৃহ, কৃষ্ণ সূর্যালোক, কৃষ্ণ স্বজন, মন বিষ্ফোরণ, এবং মনের কবর নামে লেখা লিখেছেন। প্রথম লেখাটি ১৯৭৯ গার্ডিয়েন-এর প্রথম পুস্তক পুরস্কার অর্জন করে।

প্রখ্যাত আফ্রিকীয় লেখক এলোন আবিলা ক্ষুধার গৃহের প্রথম পঙতিটিকে আফ্রিকীয় উপন্যাসের সব থেকে সুন্দর সূচনা পঙতি হিসেবে বর্ণনা [5] করেছে:

I got my things and left.

This, the opening line to Dambudzo Marechera’s The House of Hunger, apart from being the coolest opening line in African fiction, is a fair summary of the writer’s life. He was always getting his things and leaving; not that he had many things to get—in his last years, homeless and reduced to sleeping on park benches in Harare, Zimbabwe, all he had were his typewriter and a few books.

আমি আমার জিনিসগুলো নিয়ে স্থান ত্যাগ করেছি।

ডামবুদজো মারেখেরা'র ক্ষুধার গৃহ-এর প্রথম এই পঙতিটি আফ্রিকীয় উপন্যাসের সব থেকে সুন্দর সূচনা পঙতি হওয়া ছাড়াও লেখকের জীবনের একটি যথাযথ সংক্ষিপ্তসার বর্ণনা করে। সে সর্বদাই তার জিনিসগুলো নিতো এবং স্থান ত্যাগ করতো; এমন নয় যে তার অনেক কিছুই নেবার ছিল–তার শেষ বছরগুলোতে গৃহহীন এবং জিম্বাবুইয়ের হারারেতে উদ্যানের বেঞ্চিগুলোতে ঘুমানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ তার কাছে যা ছিল তা হলো তার মুদ্রাক্ষরযন্ত্র ও কিছু পুস্তক।

ফেসবুকের পাতায় [2] এর পরিচালক এবং তার ভক্তরা মারেখেরা'র বই এবং সাক্ষাৎকারে থেকে স্মরণীয় পঙতিগুলো বিনিময় করে তার চিন্তাভাবনা এবং লেখার শৈলীর দুর্বোদ্ধতাগুলো আলোচনা করছে।

ঈশ্বর ও সৃষ্টি সম্বন্ধীয় বিষয়ের উপর মারেখেরা বলেন [6]:

There's an artist who specialises in portraits. Know what he did to portray the character of his clients? He studies their boots. If he was here right now he'd study your boots to find out everything about you. Like the others study palms, and the others study the shape of your skull. Phrenologists. Others read the tea leaves at the bottom of your cup. And there all those others who study your dreams and the consistency of your shit and the mucus running down your nose and the map of pimples on your face and backside. Life. Like we are all hidden from God and he has to study us like that to discover the nature of the bastards he created. If you create life out of yourself, is that incest? That's what he did, rubbing himself up to ejaculate us into the world.

একজন শিল্পী আছেন যিনি প্রতিকৃতি আঁকায় বিশেষজ্ঞ। জানেন সে তার মক্কেলদের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য সে কী করেছিল? সে তাদের জুতো পর্যবেক্ষণ করে। সে যদি ঠিক এই জায়গায় এখন থাকতো তবে সে আপনার সম্পর্কে সব কিছু জানার জন্য আপনার জুতো পর্যবেক্ষণ করতো। যেমন অন্যান্যরা হাতের তালু পর্যবেক্ষণ করে, এবং অন্যান্যরা আপনার মাথার খুলির আকার পর্যবেক্ষণ করে। করোটি পরীক্ষণবিদ। অন্যান্যরা আপনার পেয়ালার তলানীতে থাকা চায়ের পাতা পঠন করে। এবং আরও সব ধরনের লোক আছে যারা আপনার স্বপ্ন এবং আপনার বিষ্ঠার সামঞ্জস্যতা এবং আপনার নাক দিয়ে ঝড়া শ্লেষ্মা এবং আপনার মুখমণ্ডলে ও পিঠে ওঠা ফোঁড়ার মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে। জীবন। মনে হয় আমরা সকলে ঈশ্বর কাছ থেকে লুকিয়ে আছি এবং তার সৃষ্ট জারজদের প্রকৃতি আবিষ্কার করার জন্য তার আমাদেরকে ঐভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আপনি যদি আপনার নিজের মধ্যে থেকেই জীবন সৃষ্টি করে থাকেন তবে কি তা অজাচার? তা'ই তিনি করেছেন, নিজেকে মালিশ করে আমাদেরকে পৃথিবীতে নির্গত করেছেন।

‘আমি সবকিছুর বিরুদ্ধে’, মারেখেরা তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতাগুলোর একটি দ্যা বার-ষ্টুল এডিবল ওয়র্ম [7]-এর মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন:

I’m against everything
Against war and those against
War. Against whatever diminishes
Th’ individual’s blind impulse.

আমি সবকিছুর বিরুদ্ধে
যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং যারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে
তাদের বিরুদ্ধে। যা কিছুই ব্যক্তির অন্ধ
চিন্তাভাবনাগুলোকে হ্রাস করে তার বিরুদ্ধে।

Dambudzo in his own handwriting. Posted on his Facebook page. [8]

মারেখেরা তার নিজের হাতের লেখায়। তার ফেসবুকের পাতায় প্রকাশিত।

নৈরাজ্যবাদ-এর প্রতি মারেখেরার তেমন আস্থা ছিল না [9]:

“While I was writing Black Sunlight I was reading books on intellectual anarchism to reinforce my own sense of protest against everything; I was reading Bakunin and Kropotkin. Intellectual anarchism is full of contradictions in the sense that it can never achieve its goals. If it achieves any goal at all, then it is no longer anarchism.

‘আমি যখন কৃষ্ণ সূর্যালোক রচনা করছিলাম তখন আমি সব কিছুর বিরুদ্ধে আমার নিজের প্রতিবাদ বোধটিকে আরও জোরদার করার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক নৈরাজ্যবাদের উপর পুস্তক পড়ছিলাম; আমি বাকুনিন এবং ক্রোপকটিন পড়ছিলাম। বুদ্ধিবৃত্তিক নৈরাজ্যবাদের পুরুটাই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে পূর্ণ এই অর্থে যে তারা কখনই তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। তারা যদি কোন লক্ষ্যে আদৌ পৌঁছাতে পারে তবে তা আর নৈরাজ্যবাদ থাকবে না।

Dambudzo words tattoed on Lori Ambo

যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভক্তের হাতে ডামবুদজোর কথাগুলো উল্কি করে বসানো হয়েছে। ছবি লরি এ্যাম্বোর সৌজন্য। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করে হয়েছে।

শিশু [10] সাহিত্যের উপর মারেখেরার বর্ণনা [11]:

Blah is being dragged kicking and screaming to school, to church, to the dining table, to the nation's flag, to bed without supper. Blah is how big human beings torture little human beings. If you are a little human being you must report them to the United Nations which has fists bigger than your father's. […]

Television really tortures little humans. It makes them think of BMX bicycles and goodies. It makes them little prototypes of the blah adults they will grow into with time. It makes them enjoy watching (on TV) the destruction of things so that they are too tired to destroy the society that is actually a lunatic asylum. A lunatic is someone who knows there is something wrong somewhere but does not know exactly what. An asylum is where they are going to put me when they catch you reading all this I am writing.

‘অমুককে লাথি মেরে ও চিৎকার করে বিদ্যালয়ে, গীর্জ্জায়, খাবার টেবিলে, জাতীয় পতাকার কাছে, রাতের আহার ছাড়াই বিছানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অমুকভাবেই বড় মানুষরা ছোট মানুষদের অত্যাচার করে। আপনি যদি ছোট মানুষ হন তবে বড়দের ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই জাতিসংঘের কাছে নালিশ জানাতে হবে কারণ তাদের হাতের মুষ্ঠি আপনার পিতার মুষ্ঠির থেকে অনেক বড়।

টেলিভিশন আসলেই ছোট মানুষদের অত্যাচার করে। এটি তাদেরকে বিএমএক্স সাইকেল ও সামগ্রীর ব্যাপরে চিন্তা করতে বাধ্য করে। এটি তাদেরকে অমুক প্রাপ্তবয়ষ্কদের মূলাদর্শ হিসেবে তৈরী করে যার রূপ তারা সময়ের আবর্তে ধারণ করবে। এটি তাদেরকে (টেলিভিশনে) বিভিন্ন জিনিসের ধ্বংস হতে দেখায় আনন্দ দেয় যাতে তারা এতো বেশী ক্লান্ত থাকে যেন সমাজ ধ্বংস করতে না পারে, যে সমাজ আসলে একটি নির্বোধের উন্মাদাগার। একজন নির্বোধ হচ্ছে সে যে জানে যে কোথাও একটি সমস্যা আছে কিন্তু সেটি কী তা সঠিকভাবে জানে না। এবং উন্মাদাগার হলো তারা আমাকে যেখানে রাখবে যখন তারা আমি যা লিখেছি তা আপনাদেরকে পড়তে হাতে নাতে ধরে ফেলবে।

‘কৃষ্ণই সুন্দর’ [12] কথাটি বলায় ক্লান্ত হয়ে বলেছেন:

“No, I don’t hate being black. I’m just tired of saying it’s beautiful.” The House of Hunger

‘না, আমি আমার কৃষ্ণবর্ণ হওয়াকে ঘৃণা করি না। শুধু ‘এটি সুন্দর’ বলতে বলতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ক্ষুধার গৃহ

যীশুখ্রীষ্ট এবং গির্জ্জার [13] বিষয়ে:

“I closed the huge doors behind me and walked softly towards the altar. I was in the opium of the people. The huge cross dangled from chains fixed to the roof. I stood looking at the crucified Christ. He looked like He needed a stiff drink. He looked as if He had just had a woman from behind. He looked like He had not been to the toilet for two thousand years. He looked like I felt. That was the connection.” Black Sunlight

‘আমি আমার পিছনে বিশাল দরজাটি বন্ধ করেছি এবং ধীরে ধীরে বেদীর কাছে হেঁটে গেলাম। আমি জনগণের অফিমের মধ্যে ছিলাম। বিরাট ক্রুশটি ছাদের সাথে আটকানো শিকলে ঝুলছে। আমি দাঁড়িয়ে ক্রুশবিদ্ধ খ্রীষ্টর দিকে তাকিয়ে থাকি। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যে তাঁর একটি কড়া পানীয় দরকার। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যে তিনি এইমাত্র একজন নারীকে পিছন থেকে ভোগ করেছেন। তাঁকে দেখে মনে হয়েছে যে তিনি দু'হাজার বছর ধরে শৌচাগারে যান নি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল আমার অনুভূতি তিনি বুঝতে পেরেছেন। ওটাই ছিলো সম্পর্ক।’ কৃষ্ণ সূর্যালোক

Dambudzo's photo and poem from Cemetery of the Mind posted on his Facebook page. [14]

তার ফেসবুকের পাতায় প্রকাশিত মারেখেরা'র ছবি এবং মনের কবর থেকে নেওয়া কবিতা।

২০১৪ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর এই পাতার পরিচালক ভক্তদেরকে আবেদন জানায়  [15]যাতে তারা তাদের কাছে সব থেকে প্রিয় মারেখেরা'র বাণী বিনিময় করে:

বেকেজেলা নিয়োনি কৃষ্ণ বর্ণের লেখক এবং ভাষা সম্পর্কে একটি লেখা চয়ন করে [16]:

For a black writer the language is very racist; you have to have harrowing fights and hair-rising panga duals with the language before you can make it do all that you want it to do. It is so for feminists. English is very male. Hence feminist writers also adopt the same tactics. This may mean discarding grammar, throwing syntax out, subverting images from within, beating the drum and cymbals of rhythm, developing torture chambers of irony and sarcasm, gas ovens of limitless black resonance.

কৃষ্ণ বর্ণের লেখকদের জন্য ভাষা হলো খুবই বর্ণবাদী; আপনি যা করতে চাচ্ছেন তার সব করতে পারার আগে আপনাকে অবশ্যই ভাষার সাথে মর্মভেদী লড়াই ও লোমহর্ষক দ্বৈত প্যাঙ্গা (আফ্রিকান চাপাতিবিশেষ) লড়াই করতে হবে। নারীবাদীদের জন্যও এটি সত্যি। ইংরেজী হলো খুবই পুরুষ ধাঁচের। তাই নারীবাদী লেখকরাও একই কৌশল অবলম্বন করে। এর মানে হতে পারে ব্যাকরণ ঝেরে ফেলা, শব্দবিন্যাস ছুড়ে ফেলা, অভ্যন্তর থেকেই প্রতিচ্ছবিগুলোকে উল্টে দেয়া, তালের ঢোল করতাল বাজানো, বিদ্রুপ ও শ্লেষে নির্যাতন প্রকোষ্ঠ, এবং সীমাহীন কৃষ্ণবর্ণীয় অনুভূতির গ্যাস চুল্লি নির্মাণ করা।

মোজেস মোজাইক শুমা মাতিভে একটি মন্তব্য চয়ন করেছে [17] যেটি মারেখেরা একজন আফ্রিকীয় লেখক না হওয়া বিষয়ক:

“If you are a writer for a specific race or a specific nation,then f**k you.”

‘আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট বর্ণ বা একটি নির্দিষ্ট জাতির জন্য লেখক হন, তবে ধিক আপনাকে।’

যেকেউই মারেখেরা  একজন আফ্রিকীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করেছে তাকেই তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এই যুক্তি দিয়ে যে সাহিত্যকে বর্ণ বা ভাষা বা জাতি দ্বারা সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়।