অমি খানগ্রি নামের একটি তুষার চিতার গতিবিধির অনুসরণ করতে নেপাল স্যাটেলাইট কলার ব্যবহার করছে

A baby snow leopard in New York's Central Park Zoo. Image by Linda Asparro. Copyright Demotix (10/11/2013)

নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক চিড়িয়াখানায় একটি বাচ্চা তুষার চিতা। ছবি তুলেছেন লিন্ডা আসপারো। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১০/১১/২০১৩)।

পৃথিবীর সবোর্চ্চ শৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত হিমালয় পর্বতে বিশ্বের সুদর্শন তুষার চিতার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। কেননা, পশম ও হাড়ের জন্য এরা প্রতিনিয়তই মানুষের হাতে মারা পড়ছে। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া মিলে তাদের সংখ্যা ৩,৫০০-৭,০০০-এর বেশি নয়। এজন্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’স তাদের বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এদিকে তাদের গতিবিধি, আচার-আচরণ, বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর নেচার কনজারভেশন এবং ডাব্লিউডাব্লিউএফ নেপাল-এর সহযোগিতায় নেপাল সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তর তুষার চিতাদের স্যাটেলাইট রেডিও কলার পরিয়ে দিয়েছে। ৫ বছর বয়সী অমি খানগ্রি’র দেখা মিলেছিল কাঞ্চনজঙ্গার ওলাংচুয়াং এলাকায়। এ অঞ্চলে এটিই দ্বিতীয় কোনো তুষার চিতা যার রেডিও কলার পরানো হয়েছে।

নেপালে বিরল প্রজাতির একটি তুষার চিতার গলায় সফলভাবে স্যাটেলাইট-জিপিএস প্রযুক্তি যুক্ত কলার পরানো হয়েছে।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষণবাদীদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে নেপালের হিমালয় অঞ্চলের ৩৫০-৫০০ তুষার চিতার যাবতীয় বৃত্তান্ত জানা সম্ভব হবে।

দুর্গম ভুখণ্ডে কঠিন কাজ

হিমালয়ের মতো দুর্গম অঞ্চলে তুষার চিতার গতিবিধি লক্ষ্য রাখা এমনিতেই কঠিন। সেখানে পর্বতের খাদে তাদের শরীরের পুরু, ফ্যাকাশে পশম ছদ্মবেশ দিয়ে কাজটিকে আরো কষ্টসাধ্য করে তোলে। দ্বিতীয় তুষার চিতাকে স্যাটেলাইট কলার পরাতে বিশেষজ্ঞদের দেড় বছরের মতো সময় লেগেছে

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে অমি খানগ্রিকে খোঁজা, ধরা এবং গলায় স্যাটেলাইট কলার পরাতে ২০ দিনের বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে।

তুষার চিতার স্যাটেলাইট কলার পরানোর ভিডিও রইলো এখানে।

যে এলাকায় তুষার চিতার রেডিও কলার পরানো হয়েছে, সেটার নাম কাঞ্চনজঙ্গা। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত এটি। অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা। যদিও ২০০৬ সালের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার জন্য এর কুখ্যাতি রয়েছে। সে দুর্ঘটনায় ২৪ জন বন্যপ্রাণি সংরক্ষণবিদ মারা যান। এদের মধ্যে বিশ্ববিখ্যাতও কয়েকজন ছিলেন। এই দুর্ঘটনা সারাবিশ্বের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণবিদদের শোকাতুর করে তোলে।

অমি খানগ্রি’র স্যাটেলাইট কলার পরানো নতুন নয়। এর আগে নেপালে গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বাঘ, গণ্ডার, এমনকি ঘড়িয়ালকেও রেডিও কলার পরানো হয়েছিল।

তুষার চিতা রক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তুষার চিতারা বিপদের মধ্যে আছে। কারণ, গৃহপালিত পশুদের রক্ষা করতে মানুষজন তুষার চিতাদের হত্যা করে:

Education programs run by agencies like the Snow Leopard Trust and the Snow Leopard Conservancy to discourage local herders from killing snow leopards are important. Improving herding techniques and coming up with more effective ways of guarding livestock can prevent killing in the first place.

তুষার চিতা ট্রাস্ট এবং তুষার চিতা সংরক্ষণ-এর মতো সংস্থাগুলো তুষার চিতাদের হত্যা করতে নিরুৎসাহিত করতে স্থানীয় পশুপালকদের জন্য শিক্ষামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তুষার চিতাদের হত্যা করার পরিবর্তে তাদের জন্তুদের কীভাবে নিরাপদে রাখা যায় সে বিষয়ে কার্যকর ধারনা দিচ্ছে।

স্থানীয় সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং নেপালের অন্নপূর্ণা এবং এভারেস্ট অঞ্চলের তুষার চিতা সংরক্ষণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী অনিল অধিকারী বন্যপ্রাণি রক্ষা করতে যেসব উৎসাহমূলক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ের উপরে একটি ব্লগ লিখেছেন। এদের মধ্যে তুষার চিতার হাতে স্থানীয় পশুপালকদের প্রাণি মারা গেলে, তার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ও রয়েছে:

Most of the group members do not own livestock, but some do. If a snow leopard kills a baby yak the owner receives 700 rupees as compensation. 1,500 rupees is given for the loss of an adult.

দলের বেশিরভাগেরই গৃহপালিত জন্তুর মালিক নয়, তবে কারো কারো বাড়িতে গৃহপালিত পশু রয়েছে। তুষার চিতা যদি এদের কারো বাচ্চা ইয়াক ধরে খায়, তাহলে তিনি ৭০০ রুপি (নেপালের মুদ্রা) ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর কারো যদি পূর্ণ বয়স্ক ইয়াক হত্যা করে, তবে তিনি পাবেন ১৫০০ রুপি (নেপালের মুদ্রা)।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষণবিদরা আশা প্রকাশ করছেন, অমি খানগ্রির গতিবিধি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এদের সংরক্ষণে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। পশম ও হাড়ের জন্য তাদের আর মারা পড়বে হবে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .