
গরমে ধুলিঝড়ের মধ্যেই মানুষজন এলাহাবাদে তীর্থ স্নাণে যাচ্ছেন। ছবি তুলেছেন রিতেশ শুক্লা। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৮/৫/২০১৫)।
ভারতে গ্রীষ্মকালে গরম খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বর্তমানে এটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এবারের তাপদাহে ২,৩০০’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে যা বিশ্বের পঞ্চমতম।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানায় তাপদাহ সবচে’ বেশি প্রভাব ফেলেছে। তীব্র গরমের কারণে বেশিরভাগ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ছিন্নমূল মানুষেরাই তাপদাহে সবচে’ বেশি ভুগছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্মাণকর্মী, বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষেরাই বেশি হারে গরমজনিত পীড়া ও পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। তাপদাহ মোকাবেলায় অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে রাজ্যের নাগরিকদের বাইরে বের না হওয়া, বেশি করে পানি পান করা, সানস্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচতে বাইরে বের হওয়ার সময়ে ছাতা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারত সরকারের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে দেশে ঘন ঘন তাপদাহের ঘটনা ঘটছে।
অনেকে টুইটার এবং অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তাপদাহ থেকে কেন রক্ষা পায়নি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
নিচের এই ছবিটি হিন্দুস্তান টাইমসের। ছবিটি বিশ্বজুড়ে বিপুল পরিমাণ রিটুইট হয়েছে। যদিও গ্লোবাল ভয়েসেস এই ছবিটির সত্যাসত্য যাচাই করতে পারেনি।
Watch: This road in Delhi melted due to scorching heat http://t.co/loRaAPTxTF pic.twitter.com/9oaJ3lCUQ3
— Hindustan Times (@htTweets) May 27, 2015
দেখুন: দিল্লি’র এই রাস্তা গরমের কারণে গলে যাচ্ছে।
জনগণ তীব্র তাপদাহকে কীভাবে নিচ্ছে, তার কিছু ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে। তাতে প্রাণিকূলও রয়েছে।
"@PandeyJaideep: When the whole country is facing extensive #HeatWave, here comes a lovely pic.. pic.twitter.com/rg7i6erO28"
— Mumbai Matters News (@mumbaimatters) May 28, 2015
সারাদেশ যখন তীব্র গরমে পুড়ছে, তখন এই চমত্কার চিত্র দেখা গেল।
ভবিষ্যতে তাপমাত্রা যদি আরো বাড়ে, তাহলে কী হবে সেটা ভেবে কেউ কেউ উদ্বিগ্ন হয়েছেন:
Global warming or overpopulated# The heat and the death toll r rising in India. Is this a glimpse of Earth’s future? http://t.co/WtJh7TZwPX
— Dr Dhananjay Singh (@dsing_dr) June 1, 2015
বৈশ্বিক উষ্ণতা অথবা অতি জনসংখ্যা ভারতে গরম এবং মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে। পৃথিবীর নিয়তি কী হবে এটা কি তার আভাস?
কেউ কেউ সরকারকে দায়ী করছেন:
My article for @YouthKiAwaaz on the heat wave. http://t.co/Hm4VKj6g0D #HeatWave #HeatWaveIndia
— Karthik Shankar (@kookykarthik) May 28, 2015
তাপদাহ নিয়ে ইউথকিআওয়াজে আমার নিবন্ধ।
কেউ কেউ সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করছেন বিষয়টি ঠিকঠাকমতো তুলে না আনায়:
If heat wave in Andhra Pradesh were a flood or earthquake, it would be trending. People would go. “OMG 2000 dead, hang in there. Praying…”
— Wildcard Vidyut (@Vidyut) May 31, 2015
অন্ধ্রপ্রদেশে তাপদাহ না হয়ে যদি বন্যা বা ভুমিকম্প হতো, তাহলে এটা সবার ব্যাপক মনোযোগ পেত। মানুষ সেখানে ছুটে যেত। “হায় আল্লা, ২০০০ মানুষ মারা গেছে। প্রার্থনা করছি…”
তাপদাহে বেশিরভাগ মানুষ মারা গেছেন অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানা রাজ্যে। এদের বেশিরভাগই আবার নির্মাণকর্মী। তীব্র তাপমাত্রার সময়েও তারা কাজ করেছেন। রিচার্ড মহাপাত্র ইউথ কি আওয়াজ ওয়েবসাইটে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানার রাজ্য সরকারকে তাপদাহে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপারে ওড়িশা সরকারের নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন:
After the heavy casualties in 1998, the Odisha government treats it as a disaster on the scale of cyclone or flood.
By February-end, the government starts the preparation for fighting heat wave with a single objective in mind: no human casualty. Schools and colleges shift to early morning sessions. They open at 6.30am and end by 12 noon.
Government offices also follow the same timings. Examinations are held by March. Public transport does not operate between 12 noon and 3.30pm. Public wage programmes like, MGNREGA is halted from 11.30am to 3.30pm.
১৯৯৮ সালের তাপদাহে বিপুল প্রাণহানির পর ওড়িশা সরকার একে ঘূর্ণিঝড় অথবা বন্যার মতো দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষে সরকার তাপদাহ মোকাবেলায় কর্মসূচি হাতে নেয়। কর্মসূচির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো: গরমে মানুষ যেন মারা না যায়। স্কুল-কলেজের সময়সূচির পরিবর্তন হয়। খুব সকালে ৬.৩০ মিনিটে ক্লাস শুরু হয়ে দুপুর ১২টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
সরকারি অফিসের সময়সূচিরও পরিবর্তন আসে। স্কুলের পরীক্ষা মার্চে অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩.৩০ পর্যন্ত সব ধরনের পাবলিক বাস সার্ভিস বন্ধ থাকে। এমজিএনআরইজিএ’র মতো জন মজুরি কার্যক্রম বেলা ১১.৩০ থেকে বিকেল ৩.৩০ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়।

গরমে শীতল পরশ নিতে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে এক নাগা যুবক পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। ছবি তুলেছেন কেইসি মাও। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৩/৫/২০১৫)।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বিষয়ক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গরম বাড়ার কারণে ভারতের শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তীব্র গরম ভবিষ্যতে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ২৫০ মিলিয়ন কৃষক ক্ষতির শিকার হবেন।
জ্বালানি এবং এয়ার কন্ডিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠবে। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়ার কথা বলেছেন। দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলতি বছরে এয়ার কন্ডিশনের চাহিদা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈশ্বিক সম্প্রদায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় কীভাবে প্রতিরোধ ও মোকাবেলা করবেন তা দেখার বিষয়। তবে কেরালায় খুব শীঘ্রই বর্ষাকাল শুরু হতে যাচ্ছে। তখন সারাদেশে ভ্রমণ করা যাবে।
When the #Monsoon wind turns, if you stand on the southernmost tip of #Kerala’s coast, you’d see something like this pic.twitter.com/F9bUhdUvVL
— Arati Kumar-Rao (@AratiKumarRao) June 5, 2015
যখন মৌসুমী বায়ু বইবে, আপনি তখন যদি কেরালার সমুদ্র উপকূলে থাকেন, আপনার খুব ভালো লাগবে।