দালাই লামা তাঁর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের মাধ্যমে তাইওয়ান এবং হং কং এর কার্টুনিস্টদের বেশ অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি হয়তোবা আকর্ষনীয় চেহারার একজন “দুষ্ট স্বর্ণকেশী নারী” নতুবা “কেউ তেমন আকর্ষন বোধ করে না” এমন একজন মহিলা হিসেবে নতুন করে জন্ম নিতে পারেন।
বৌদ্ধ ধর্মের এই নেতা ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র সানডে টাইমসের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ দৃঢ়তার সাথে আবারও পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন যে এমনকি তিনি আবার নতুন করে জন্ম নাও নিতে পারেন। ১৫ তম দালাই লামার পুনর্জন্ম বিষয়ে বেইজিং সরকারের অনধিকার চর্চা করার পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমনটি বলেছেন।
তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মমতে বিশ্বাস করা হয় যে শারিরীকভাবে একজন মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মাটি কোন নতুন শরীরে আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে। বর্তমানের এই দালাই লামা এ বছর ৮০ বছর বয়সে পা দিবেন। তাকে তিব্বতের রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৬৪২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৬৯ বছর যাবত সাবেক সকল দালাই লামাদের এভাবেই বিবেচনা করা হয়েছে। তিব্বতে ধর্মীয় নেতাদের পুনর্জন্মের বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর একটি প্রক্রিয়া। গত ৬০ বছর ধরে বিষয়টি চীনের দমনমূলক নিয়মের অধীনে রয়েছে। তিব্বতিদের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চীন বিষয়টিকে কাজে লাগায়।
এই বিরোধে লিপ্ত হতে এবং তাঁর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করতে তাইওয়ান এবং হং কং এর কার্টুনিস্টরা সোনালী চুলের দালাই লামা শিরোনামে একটি ফেইসবুক পেইজ শুরু করেছেন। ভবিষ্যতের ১৫ তম দালাই লামাকে সোনালী চুলের একজন মহিলা হিসেবে ধরে নিয়ে তারা পেইজটিতে বিভিন্ন গল্প লিখেছেন এবং অনেকগুলো ছবি এঁকেছেন। গল্পগুলোর মূল বিষয় সাধারনত একই রকম যে ‘একদিন আমার কাছে হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হল যে আমার বোন কিংবা আমার প্রতিবেশি কিংবা আমার নতুন ছাত্রীটিই হয়তোবা ১৫ তম দালাই লামা’।
বর্তমানের দালাই লামা তেনজিন গিয়াতসো ১৯৫৯ সাল থেকে নির্বাসিত হয়ে ভারতে বসবাস করছেন। তিনি বার বার আভাস দিয়েছেন যে তিনি হয়তোবা নতুন করে জন্ম নাও নিতে পারেন। বেইজিং দাবি করেছে, “দালাই লামা পুনরায় নব জন্ম নেবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তিনি নিবেন না” এবং এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চীনা সরকারের হাতে ন্যস্ত। তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় নেতা কারমাপা লামাও নির্বাসনে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দালাই লামা পুনরায় নতুন করে জন্ম নিবেন কিনা তা একমাত্র তাঁর সিদ্ধান্ত”।
আনুষ্ঠানিকভাবে চীন আস্তিক হলেও বেইজিং আগেও কখনও তিব্বতের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ রাখেনি। তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় নেতা একাদশতম পানচেন লামার পুনর্জন্মের বিষয়টি চীনের হস্তক্ষেপেরই একটি উদাহরণ। দালাই লামা নতুন করে জন্ম নেয়া পানচেন লামাকে ১৯৯৫ সালে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন এবং এরপর বেইজিং তাকে শাস্তি প্রদান করে এবং তাদের পছন্দ অনুযায়ী একটি ছোট ছেলেকে তাঁর জায়গাতে স্থানান্তরিত করে।
পুনর্জন্ম প্রক্রিয়াতে বেইজিং সরকারের হস্তক্ষেপের গতিবিধি বিচার করতে যেয়ে কার্টুন প্রেমীরা অন্য যেকোন লামা প্রার্থীর চেয়ে “দুষ্ট স্বর্ণকেশী একজন নারী”কে দালাই লামা করতে অন্তত কিছুটা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
এ সম্পর্কিত আরও জিভি নিবন্ধ: