আরও অন্যান্য ১০০ জনের বেশী ব্যক্তিসহ মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মোরসিকে ২০১৫ সালের মে মাসের ১৬ তারিখে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
সাজা কার্যকর করার আগে, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিক্ষোভকারীদেরকে গ্রেফতার ও অত্যাচার করার নির্দেশ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ভোগরত মুসলমান ভ্রাত্রীসংঘের এই সদস্যের মামলাটি অনুমোদন করার জন্য দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ মুফতির কাছে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ২রা জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদেশী জঙ্গিদের সাথে যোগসাজোসে ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে মিশরীয় বিপ্লবের সময় ওয়াদি নাত্রুন কারাগার থেকে বন্দী পলায়নের সময় ইসলামপন্থীদেরকে মুক্ত করার অভিযোগে মোরসিকে আজকের সাজা দেয়া হয়েছে। তার ১০৫ সহ-অভিযুক্তদের মধ্যে প্রায় ৭০ জন ছিল প্যালেস্টিনীয় যাদেরকে হামাসের সদস্য বলে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার করা হয়েছিল। এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া প্যালেস্টিনীয়দের মধ্যে হাসান সালামেহ্ ১৯৯৪ সাল থেকেই ইজরায়েলী কারাগারে বন্দি, এবং রাইদ আত্তার ইতোমধ্যেই মারা গিয়েছে।
Egypt sentences Palestinians Hassan Salameh & Raed Attar to death – one has been in Israeli prison since 1994, other is dead #MorsiTrial
— Middle East Eye (@MiddleEastEye) May 16, 2015
মিশর দু'জন প্যালেস্টিনীয় হাসান সালেমেহ্ এবং রাইদ আত্তার কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে – যাদের একজন ১৯৯৪ সাল থেকেই ইজরায়েলী কারাগারে বন্দি, এবং অন্যজন মারা গিয়েছে
মোরসির বিরুদ্ধে যে মামলা গঠন করা হয় সে অনুসারে হামাস জঙ্গিরা মিশরে প্রবেশের জন্য গাজা থেকে সুরঙ্গ পথ ব্যবহার করে কারাগারগুলোকে দখল করে নিয়ে মুবারক কর্তৃক কারাবন্দী করা ইসলামপন্থীদের মুক্ত করে দেয়। মুক্ত করে দেয়াদের মধ্যে মোরসিসহ ৩০জন শীর্ষ মুসলমান ভ্রাত্রীসংঘের সদস্য ও সেই সাথে সাথে প্রায় ২০,০০০ পর্যন্ত কারাবন্দী ছিল।
বিপ্লবের এক বছর পর মোরসি মিশরের রাষ্ট্রপতি হয়, যে বিপ্লবের মাধ্যমে ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে মিশরকে শাসন করা হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তাকে উৎখাত করার আহ্বানে তীব্র প্রতিবাদের মুখে মোরসির রাজত্ব ২০১৩ সালের জুলাই মাসেই সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তারপর মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাধিনায়ক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সর্বাধিনায়ক আবদেল ফাত্তাহ এল সিসি-এর নের্তৃত্বে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে, যিনি বর্তমানে মিশরের রাষ্ট্রপতি।
ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে মোরসির মুসলমান ভ্রাত্রীসংঘ আন্দোলনকে মিশরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর হাজার হাজার সমর্থনকারীদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছে ভ্রাত্রীসংঘের সর্বোচ্চ সহায়ক মোহামেদ বাদী এবং এমবি-এর নেতা মোহামেদ বেলতাগী যাদেরকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
৮৫ হাজার অনুসারী থাকা ও ঐ বিচারের শুনানীতে অংশগ্রহণ করা সাংবাদিক সারা এল সিরগানীর মতে:
Referral to the Grand Mufti indicates a death sentence. His opinion is only advisory. The judge will announce the actual sentences on June 2
— Sarah El Sirgany (@Ssirgany) May 16, 2015
প্রধান মুফতির কাছে পাঠানো মানে হলো মৃত্যুদণ্ড। তার মতামত শুধুমাত্র উপদেষ্টামূলক। জুনের ২ তারিখেই বিচারক আসল সাজা পাঠ করবেন।
তিনি আরও যুক্ত করেন:
To recap: In espionage trial 16 were referred to Mufti. Morsi not included. In Jailbreak trial Morsi & over 100 were referred to the Mufti.
— Sarah El Sirgany (@Ssirgany) May 16, 2015
সারসংক্ষেপ: গুপ্তচরবৃত্তির বিচারের ১৬জনকে মুফতির কাছে পাঠানো হয়েছিল। বন্দী পলায়নের বিচারের মোরসি ও ১০০ জনের বেশী ব্যক্তিকে মুফতির কাছে পাঠানো হয়েছে।
মোরসির এই সাজা অনলাইনে প্রতিক্রিয়ার ঝড় তুলেছে, যেখানে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মঞ্চের ভাষ্যকাররা এই বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
কারাবন্দি থেকে রাষ্ট্রপতি
কারাবন্দি থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়া মোরসির জীবনের ঘটনাচক্র রানা আলাম ভুলে যান নি, যিনি ভেবে পান না কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া একজনকে কিভাবে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়ানোর জন্য সুযোগ দেয়া হলো। তিনি টুইট করেছেন:
Egyptian court seeks death penalty for former president Mursi http://t.co/eojr6HLKoe For jail break in 2011..yet left to run for president!!
— Rana Allam (@Run_Rana) May 16, 2015
২০১১ সালে জেল পলায়নের কারণে মিশরের আদালত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মুরসিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে চাচ্ছে…তবুও তাকে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়াতে সুযোগ দেয়া হয়েছে!!
অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে মোরসিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না, যেহেতু এই ধরনের মামলাগুলোতে আপিল করা যায় এবং আদালতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।
মিশরীয় আমর তার ৪.৫ হাজার অনুসারীদেরকে বলেন:
Unless #Sisi has lost his mind #Morsi will never be executed. BUT Any remaining shreds of respect 4 #Egyptian judiciary were executed today
— Amr No 2 CC (@Cairo67Unedited) May 16, 2015
যদি #সিসি'র মাথা খারাপ হয়ে না থাকে তবে #মোরসির মৃত্যু কখনোই কার্যকর করা হবে না। কিন্তু #মিশরীয় বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধার ছিটেফোঁটাও যেটুকু ছিল তার মৃত্যু হলো।
এবং ৩.৯ হাজার অনুসারী থাকা ফুসট্যাট আরও বলেছেন:
Neither Morsi or Muslim Brotherhood Muhamed Badie is likely to be executed in the end , their sentences will be commuted. #MorsiTrial #Egypt
— fustat (@fustat) May 16, 2015
মোরসি বা মুসলমান ভ্রাত্রীসংঘের মুহামেদ বাদী'র কারোই মৃত্যুদণ্ড অবশেষে কার্যকর করা হবে না, তাদের সাজা লঘু করা হবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই বিচারকার্যকে কৃত্রিম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
রায়ের পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)-এর নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ টুইট করেছেন:
Morsi got 20 years based not on evidence but police conjecture & court bias: @HRW analysis. http://t.co/XM7IUhIr4wpic.twitter.com/s67NIFSgLv
— Kenneth Roth (@KenRoth) April 26, 2015
কোন প্রমাণের ভিত্তিতে নয় বরং পুলিশের অনুমান এবং আদালতের পক্ষপাতিত্বের কারণে মোরসি ২০ বছরের সাজা পেয়েছে: এইচআরডাব্লিউ-এর বিশ্লেষণ।
তার সহকর্মী এইচআরডাব্লিউ-এর মাধ্যম পরিচালক এন্ড্রু স্ট্রোহ্লাইন আরও বলেন:
Court sentences ousted president Morsi to death. More proof Egypt's respect for rights is zero http://t.co/hZg9iFgnWDpic.twitter.com/NGB5GKvElo
— Andrew Stroehlein (@astroehlein) May 16, 2015
উৎখাত হওয়া রাষ্ট্রপতি মোরসিকে আদালত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। অধিকারের প্রতি মিশরের শ্রদ্ধা যে শূন্য এটি তারই আরও প্রমাণ
এই অঞ্চলের নেটব্যবহারকারীরাও একই ধারা অনুসরণ করেছেন।
গাজা থেকে ওমার ঘ্রাইব লিখেছেন:
Many people have told me that they no longer understand #Egypt or the judicial system there. I agree. #Gaza
— Omar Ghraieb (@Omar_Gaza) May 16, 2015
অনেক ব্যক্তিই আমাকে বলেছে যে তারা আর #মিশর-কে বা তাদের বিচারব্যবস্থাকে বুঝতে পারছে না। আমিও একমত।
এবং বাহরাইনীয় আদেল মারজুক তার ৩৯.১ হাজার অনুসারীদের জন্য লিখেছেন:
سؤال: عرف العار؟ الإجابة: #قضاء_مصر وما أرساه من قوانين وآليات وإجراءات وما صدره لباقي الدول العربية (ومنها #البحرين ) من قوانين وقضاة. #مصر
— Adel Marzooq (@adelmarzooq) May 16, 2015
লজ্জার সংজ্ঞা কী? উত্তর হলো: একটু একটু করে সঞ্চারিত করা মিশরীয় বিচার ব্যবস্থা, এবং আইন, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি, যেগুলো অন্যান্য আরব দেশে (বাহরাইনসহ) চালান দেয়া হয়েছে, যে দেশগুলো মিশরীয় আইন পালন করে এবং মিশরীয় বিচারক নিয়োগ করে