ফিলিপাইনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনকুবেরের মালিকানাধীন জনপ্রিয় এ্যালকোহল পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বর্তমানে ধর্মঘট পালন করছেন। তারা চাকুরীর স্থায়ীকরন এবং ভাল কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করণের দাবি জানিয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষী এবং বিবরণ অনুযায়ী, মালিক পক্ষের ভাড়া করা খুনিদের আক্রমণ সত্ত্বেও ধর্মঘটকারীরা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাদের কর্ম বিরতি অব্যাহত রেখেছেন।
তানদুয়ে তরল শোধনাগারে (ম্যানিলা থেকে ৪৪ কিলোমিটার অথবা প্রায় ২৭ মাইল দক্ষিণের লাগুনা অঞ্চলে কাবুয়াওতে অবস্থিত) গ্লোবাল স্ক্লিলস প্রোভাইডারস মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ এবং এইচডি ম্যানপাওয়ার সার্ভিস কো-অপারেটিভ নামের দুইটি সংস্থার মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োগ দেয়া কর্মীরা অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। তাঁদের মানসম্মত শ্রমিক সুবিধাদি প্রদান করা হয় না। ফিলিপাইনসে অনেক কোম্পানি তাদের উৎপাদন খরচ কম রাখার জন্য চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে।
টাঙ্গুলান উগনায়ান ডালুয়ং এনজি লাকাস-আনাকপাওয়িস সা তানদুয়ে ডিস্টিলারস ইন্ডাস্ট্রিজের (টিইউডিএলএ) শ্রমিক সংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সংস্থা দুইটি শুধুমাত্র চুক্তিভিত্তিক অথবা অত্যাবশ্যকীয় উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট সময় কাজ করাতে অস্থায়ীভাবে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত – যা প্রচলিত আইনে একেবারেই নিষিদ্ধ।
তানদুয়ে শোধন ইন্ড্রাস্ট্রিতে গত ৫ থেকে ১১ বছর ধরে কর্মরত মোট কর্মীর শতকরা ৯০ শতাংশ (সর্বমোট ৩ শত ৯৭ জন) লোক চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত শ্রমিক।

ধর্মঘটের ডাক দেওয়া কর্মীরা তাদের পরিবার এবং সমর্থকদের সাথে নিয়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কারখানার সামনে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের জন্য সমবেত হয়েছেন। ছবিঃ কিলুসাং মায়ো ইয়ুনো।
চুক্তিভিত্তিক – কর্মী ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তানদুয়ের কর্মীরা গত ১৬ এপ্রিল তারিখে টুডলা (টিইউডিএলএ) সংঘ গঠন করেছেন এবং শ্রমিক এবং কর্ম বিভাগে (ডিওএলই) স্থায়ীকরনের দাবি জানিয়ে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। তবে চুক্তিভিত্তিক নিযুক্ত শ্রমিকদের হঠাৎ এক বছর কাজ করাতে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে, যেখানে পূর্বে কখনও কোম্পানিটি শ্রমিকদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করায়নি।
শত শত কর্মীকে গত ১৬ মে তারিখ রোজ শনিবারে বলা হয়েছে, তাদেরকে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য কোন সময়সূচী দেয়া হবে না। অন্য কথায়, তারা ইতোমধ্যে চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। আর এ কারনেই ১৮ মে তারিখ রোজ সোমবার সকালে কর্মীরা তাৎক্ষনিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দক্ষিণ তাগালোগের – কিলুসাং মায়ো ইয়ুনোর ফেইসবুক পেইজে কর্ম বিরতি সম্পর্কিত আপডেট পাওয়া যাবে।
টুডলার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তানদুয়ে কর্মীরা হিসাব মতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ মিলিয়ন পেসো (প্রায় ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার মার্কিন ডলার) মূল্যমানের বিভিন্ন পানীয় পণ্য উৎপাদন করে থাকে। কোম্পানি মালিক লুসিও টানকে ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১৪ সালে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি মোট ২৭০ বিলিয়ন পেসো (প্রায় ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের সম্পদের মালিক।
তানদুয়ে কর্মীরা দৈনিক মাত্র ৩১৫ পেসো (প্রায় ৭ মার্কিন ডলার) পারিশ্রমিক পান। আর শোনা যাচ্ছে, আইন সংস্কারের মাধ্যমে সরকার দৈনিক এই পারিশ্রমিক আরও কমিয়ে ২৫৫ পেসো (প্রায় ৬ মার্কিন ডলার) নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। ফিলিপাইন সরকারের দুই-স্তর বিশিষ্ট মজুরী পদ্ধতিই মূলত এই সমস্যার মূল কারন। এটি একটি তথাকথিত উৎপাদনশীলতা প্রকল্প, যাকে শ্রমিক গ্রুপগুলো ম্যানিলার বাইরে থাকা শ্রমিকদের মজুরী কমিয়ে দিতে ব্যবহৃত অন্যতম একটি আইনী প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
তানদুয়ের শ্রমিকেরা আরও অভিযোগ করেছেন যে তারা পারিশ্রমিক সহকারে কাজ থেকে ছুটি (অসুস্থতার জন্য ছুটি অথবা অবকাশ), চিকিৎসা এবং অন্যান্য সুবিধাদি, এমনকি বোনাসও পান না। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলেছে, মাঝে মাঝে হঠাৎ করে কোন কারনে কিংবা কারন ব্যাখ্যা করা ছাড়াই তাদের কাজ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, কর্মবিরতি দেয়া কর্মী এবং তাদের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে কোম্পানিগুলো স্থানীয় গুন্ডা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রদানকারী বিভিন্ন দলকে ভাড়া করেছে। মাল্টিমিডিয়া গ্রুপ এসটি এক্সপোজার ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার চিত্র ক্যামেরাবন্দী করেছে।
ধর্মঘটের প্রথম দিন থেকেই কোম্পানিগুলোর নিরাপত্তা কর্মীরা এবং টাকার জন্য কাজ করা অন্যান্য বিভিন্ন পেশী শক্তি কর্ম বিরতি পালনকারী শ্রমিক এবং তাদের সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করা, এমনকি ক্ষতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের মার খেয়ে কয়েক ডজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এমন শোষণমূলক অবস্থা প্রতিবাদ ধর্মঘট এবং কেবল মজুরী, সুবিধাদি ও কাজের নিরাপত্তার কারণে চালানো তাদের এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে এখনও শ্রমিকদের প্রেরণা যোগাচ্ছে।