পোস্টটি ইরান মানবাধিকার ডট ওআরজি ওয়েবসাইটে প্রথম প্রকাশিত হয়। ইরানে মানবাধিকারের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানের সহযোগিতায় এখানে তা পুনঃপ্রকাশিত হল।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) একটি সহায়ক সংগঠন হচ্ছে “বাসিজ”। এই আধা-সামরিক বাহিনী দেশটির মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য “সালাম” নামে একটি নতুন মেসেজিং সেবা উদ্বোধন করার ঘোষণা দিয়েছে। অ্যাপ্লিকেশনটির সমস্ত প্রচারসূচী এবং তথ্য পাওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার সরকারি কর্মকর্তাদের দেয়া হয়েছে।
বিনামূল্যে ডাউনলোডের জন্য এই নতুন মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনটি এখন পাওয়া যাচ্ছে। অ্যাপ্লিকেশনটি বাসিজ বাহিনীর মালিকানাধীন সার্ভার ব্যবহার করবে এবং নিয়ন্ত্রিত হবে। এভাবে এই আধাসামরিক সংগঠন এবং ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সহজেই ব্যবহারকারীদের কথোপকথনে হস্তক্ষেপ এবং পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
ভাইবার এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলো ইরানে অতিশয় জনপ্রিয়। কর্মকর্তারা আশা করছেন, এ অ্যাপ্লিকেশনগুলোর প্রলোভন থেকে “সালাম” ব্যবহারকারীদের দূরে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবে। অনলাইন এবং মোবাইল ফোন যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো অবরোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।
নতুন এই অ্যাপ্লিকেশনটি আন্তর্জাতিক সব ধরণের অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন এবং সেবার বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অব্যাহত প্রচেষ্টার আরেকটি নতুন পদক্ষেপ। এর লক্ষ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় এই অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তারা যাতে সহজেই ব্যবহারকারীদের প্রচারসূচীতে অনুপ্রবেশ এবং পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
একটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত জাতীয় ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তোলার অংশ হিসেবে জাতীয় সার্চ ইঞ্জিন, ইমেইল সেবা, ব্রাউজার, অপারেটিং সিস্টেম এবং এসএসএল সার্টিফিকেট সবকিছুই চালু করা হয়েছে। জাতীয় এই প্রকল্পটি বৈশ্বিক ইন্টারনেট থেকে পৃথক সেবা প্রদান করতে ইচ্ছুক। আর এভাবেই রাষ্ট্র এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ এবং আড়িপাততে চায়।
বাসিজ প্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ইরানের তথ্য কেন্দ্রের প্রধান হামিদ জাফারি ঘোষণা দিয়েছেন যে ৫ মে তারিখ থেকে সালাম মেসেজিং এপ্লিকেশন চালু হচ্ছে। জাফারি বলেছেন, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের বিকল্প হয়ে পশ্চিমা এসব অ্যাপ্লিকেশনের তুলনায় আরও বেশি বিশ্বাস, স্থায়িত্ব, এবং নিরাপত্তার সাথে সালাম সেবা প্রদান করবে।
ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মতো [সামাজিক] যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেদের দূরে রেখে ব্যবহারকারীদের “মূল্যবান সময় এবং জীবন” বাঁচাতেও পরামর্শ দিয়েছেন জাফারি। ইরানের সংবাদ মাধ্যমে জাফারি আরও বলেছেন, “আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ইতিহাস পরীক্ষা করে দেখেন, তবে আপনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন যে তথাকথিত এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পাশ্চাত্য দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যেখানে মানব ধর্ম এবং মানব কেন্দ্রিক দর্শন তাদের অন্যতম নির্ণায়ক উপাদান। অন্য কথায়, ইসলামের কোন মৌলিক নীতি এবং দর্শনই এসব নেটওয়ার্কের মধ্যে দেখা যায় না।