
আফগানী র্যাপশিল্পী সোনিটা আলীজাদেহ ‘বিক্রয়ের জন্য বধূ’ শীর্ষক গানটি লিখে ১৪বছর বয়েসে জোর করে বিয়ে করার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যায়। সম্পতি সে ক্যালিফর্নিয়ার পশ্চিম ওকল্যাণ্ড পরিদর্শন করে খুবই অবাক হয়েছে যে ইরান ও আফগানিস্তানের মতো আমেরিকাতেও দরিদ্র এলাকা ও গৃহহীন মানুষ আছে। শুকা কালান্তারির সৌজন্যে। পিআরআই-এর অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
দ্যা ওয়ার্ল্ড এর জন্য শুকা কালান্তারি লেখা এই প্রবন্ধ ও বেতার প্রতিবেদন সর্বপ্রথম ২০১৫ সালের মে মাসের ১২ তারিখে পিআরআই.অর্গ এ প্রকাশিত হয়, এবং সংবাদ-বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে এখানে পুনপ্রকাশিত হয়।
আমার সাথে সোনিটা আলীজাদেহ-এর প্রথম দেখা হয় যখন সে তার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গীতানুষ্ঠানে গান গাইতে শহরে আসে। আমরা হাঁটছিলাম তখন যে হঠাৎ থেমে যায় ও একটি লোকের দিকে তাকিয়ে থাকে যে তার মেয়ে দু'জনের সাথে খেলছিল।
‘এখানে আমেরিকায় একজন বাবা তার মেয়েদেরকে উদ্যানে নিয়ে যাবার জন্য সময় বরাদ্দ করে রাখে, সে বলল। ‘আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে এটা দেখতে পাওয়া যায় না।’
সোনিটা আফগানিস্তান থেকে এসেছে। তার বয়স ১৮ বছর, তার চুল লম্বা কালো এবং সে ছোটখাট গড়নের। যদি তার মাতাপিতার পরিকল্পনামাফিক তার সবকিছু চলতো তবে তার এতোদিনে বিবাহ হয়ে যেত। ‘আমি মাঝে মাঝে ভাবি যে আমি এখন হয়তো একজন মা হয়ে থাকতাম – কয়েকটি বাচ্চা সহ। এই ভাবনাটি আমার পছন্দের না।’
সোনিটা ইরানের রাজধানী তেহরানে বড় হয়েছে। তার পরিবার যুদ্ধের কারণে তার ৮বছর বয়েসের সময় আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যায়। সে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেয়েছে যারা নথিবিহীন আফগানী শিশুদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়। সেখানেই সে কারাটে, ফটোগ্রাফী, গিটার বাজানো শিখেছে, এবং সে গান ও র্যাপ করা শুরু করে।
তার সঙ্গীত দ্রুতই স্বীকৃতি লাভ করে। একজন ইরানী পরিচালকের সাথে সোনিটার পরিচয় হয়েছে যে তার শৈলীকে পালিশ করতে ও সঙ্গীতের ভিডিও নির্মাণ করতে সাহায্য করেছে, যার ফলে সে কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছে। সবকিছুই নিখুঁতভাবে চলছিল। খুঁত বের হবার আগ পর্যন্ত। ‘একদিন আমার মা আমাকে বলল, ‘তোমাকে আমার সাথে আফগানিস্তানে যেতে হবে। সেখানে একজন লোক আছে যে তোমাকে বিবাহ করতে চায়। তোমার ভাইয়েরও বাগদান হয়েছে এবং তোমার ভাইয়ের বিবাহের খরচ বহন করতে আমাদের তোমার বিবাহের যৌতুকের অর্থ প্রয়োজন।”
সোনিটা খুবই ভেঙ্গে পড়লো। তাই সে ‘বিক্রয়ের জন্য বধূ’ নামে একটি গান রচনা করলো। গানটি শুরু হয় এভাবে ‘আমি ফিসফিস করে বলি, যাতে কেউই শুনতে না পায় যে আমি বালিকা বিক্রয়ের কথা বলছি। আমার কণ্ঠ শোনা যেতে পারবে না কারণ এটি শরীয়া বিরুদ্ধ। নারীদেরকে অবশ্যই নিশ্চুপ থাকতে হবে… এটিই আমাদের প্রথা।’
এই ভিডিওতে সোনিটাকে বিবাহের পোষাক পরিহিত অবস্থায় দেখা যায় — আর তার কপালের উপর একটি বারকোড। তার মুখে আঘাতের চিহ্ন। তাকে বিক্রয় করে না দেবার জন্য সে তার পরিবারের কাছে আকুতি করে।
তার মাতাপিতা ভিডিওটি সম্পর্কে কী ভাববে তা নিয়ে সোনিটা খুবই চিন্তিত ছিল — কিন্তু তারা আসলে এটিকে পছন্দই করেছিল — এবং তারা তাকে বলেছেও যে তাকে বিবাহ করতে হবে না।
‘আমার পরিবার যে আমার জন্য আমাদের পরিবারের প্রথা ভেঙ্গেছে তা আমার কাছে অনেক বেশী অর্থ বহণ করে। এখন আমি এমন এক জায়গায় যেখানে আমি যে আসতে পারবো তা কখনও ভাবতেই পারিনি।’
সোনিটার সঙ্গীতকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া মনোযোগ তাকে ইউটার একটি শিল্প একাডেমীতে পুর্ণ বৃত্তি পাইয়ে দিয়েছে, এবং এটাই সান ফ্রান্সিসকো উপসাগর এলাকাতে এই সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজনের কারণ। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগে সোনিটার কিছু অনুশীলন করা প্রয়োজন। আমরা আমার গাড়ীতে চড়ে বসি এবং কাছেই পশ্চিম ওকল্যাণ্ড এলাকায় যাই।

পশ্চিম ওকল্যাণ্ডের এই এলাকা দেখে সোনিটা মর্মাহত হয়। তুমি কি আমাকে বলছো যে আমেরিকাতে এমনও জায়গা আছে যেখানে রাতের বেলায় তুমি একা হেঁটে যেতে পারবে না?” সে জিজ্ঞাসা করলো। শুকা কালান্তারির সৌজন্যে। পিআরআই-এর অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
অনুশীলনের স্টুডিওটি গ্রাফিটি দিয়ে ঢাকা একটি এলাকা। রাস্তার উভয় পাশেই গৃহহীন মানুষের সারি। সোনিটা মর্মাহত হয় – কারণ এটি তাকে তার বাড়ীর কথা মনে করিয়ে দেয়।
‘আমি একটি এলাকায় বেড়ে উঠেছি যেখানে সকলেই দরিদ্র ছিল এবং ঘরগুলো ছিলো ভাঙ্গাচোরা,’ সোনিটা বলল। ‘আমি রাতের বেলা ঘরের বাইরে যেতে পারতাম না কারণ তা সত্যিই খুব বিপজ্জনক ছিল। তুমি কি আমাকে বলছো যে আমেরিকাতেও এমন জায়গা আছে যেখানে রাতের বেলায় তুমি একা হেঁটে যেতে পারবে না? তাহলে মানুষ কোথায় আশ্রয় খুঁজে পাবে?’
এই সঙ্গীতানুষ্ঠান হওয়ার অল্প সময় পরই, ফারকোনদা নামের সেই নারীর বিষয়ে সোনিটা পড়েছে যাকে কোরানের একটি খণ্ড পোড়ানোর অভিযোগে আফগানিস্তানে পাথর মেরে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাই সে যা ভালভাবে করতে জানতো তাই সে করেছে: এবিষয়ে একটি গান সে লিখেছে।
‘র্যাপসঙ্গীত আপনাকে অন্য মানুষের কাছে আপনার গল্প বলতে সাহায্য করে। র্যাপ সঙ্গীত হলো আমার হৃদয়ে থাকা কথাগুলো বিনিময় করার একটি মঞ্চ।’
এবং কখনো কখনো র্যাপসঙ্গীত দুঃখ, ক্ষোভ প্রকাশ করার একটি উপায়, যেগুলো না দেখাতে আফগানী নারীদেরকে বলা হয়েছে। যদিও সোনিটা এখন তার বাড়ী থেকে ৭,০০০ মাইর দূরে বসবাস করে, সে বলে যে সে সর্বদাই তার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে থাকা আফগানী জনগণের বিষয়ে গান গেয়ে যাবে।