এপ্রিল ২০১৪-এ ইথিওপিয়ায় নয়জন ব্লগার এবং সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ এবং নারী ব্লগার জোন নাইন নামের এক গ্রুপ ব্লগে কাজ করত, যে ব্লগে ইথিওপিয়ার সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখা হত এবং সেখানে মানবাধিকার এবং সরকারের দায়িত্বশীলতা বিষয় তুলে ধরা হত। গ্রেপ্তারকৃত এই নয়জনের মধ্যে চারজন গ্লোবাল ভয়েসেস-এর লেখক। জুলাই মাসে তাদের বিরুদ্ধে দেশটির সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে আভিযোগ আনা হয়, তখন থেকে তারা কারা প্রকোষ্ঠে বন্দী। তাদের নির্ধারিত সময়ের শুনানী বাতিল করা হয় এবং এরপর থেকে বার বার তাদের শুনানী নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার বদলে কেবল বাতিল হচ্ছে।
গত সপ্তাহে, “তাদেরও নাম রয়েছে” নামক সূচনা পোস্টের মাধ্যমে আমরা সিরিজ এক লেখার সূচনা করি। আশা করা হচ্ছে এইসব লেখায় সেই সমস্ত ব্লগারদের ব্যক্তিগতভাবে তুলে ধরা হবে যারা এখন কারাবন্দী। আমরা আশা করছি, তাদের এই বিশেষ এবং বিচিত্র কাহিনী তুলে ধরার সময় সেগুলোকে আমারা মানবিক আকারে উপস্থাপন করব। এই সপ্তাহে ঘানার লেখক কফি ইয়োবোয়াহ জোন নাইনের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম ব্লগার আতনাফ বেরাহানে সম্বন্ধে লিখেছে।
২৬ বছর বয়স্ক আতনাফ বেরাহানে, জোন নাইন ব্লগারদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ব্লগার। ২৫ এবং ২৬ এপ্রিল ২০১৪-এ আবেল ওবেলা, বেফাকাদু হাইলু, মাহলেত ফানতাহানু, জেলালেম কিবরেত এবং নাতানায়েল ফেলেকে সহ তাকে গ্রেফতার করা হয় ( তারা সকলে জোন নাইন নামক গ্রুপ ব্লগের ব্লগার) এবং একই ঘটনায় সাংবাদিক আসমামাও হেইলেগেগোরিয়াস, তেসফালেম ওয়ালাদেয়াস এবং এদোম কাসাইয়েকে গ্রেফতার করা হয়।
ইথিওপিয়া হচ্ছে এমন এক রাষ্ট্র যেখানে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করে রাখে। দেশটিতে মিডিয়াকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয়, বিশেষ করে যখন রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। যার ফলে নাগরিকরা বেশীর ভাগ সময় ইন্টারনেটে সংবাদ পাঠ করে থাকে।
নাগরিক সংযুক্তি এবং নাগরিকরা যাতে সংবিধানে তাদের অধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে সে বিষয়ে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতি আনতাফের প্রচণ্ড আগ্রহের ফলে জোন নাইন ব্লগের অন্যতম এক প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এটির নেতৃত্বে এগিয়ে আসে। মানবাধিকারের কার্যক্রমের প্রতি তার তীব্র আগ্রহ তাকে এই সংগঠন স্থাপনে আগ্রহী করে তোলে। কিন্তু মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার বিষয়ে তার প্রচণ্ড আগ্রহ তাকে শৃঙ্খলিত করে ফেলেছে।
বাস্তব জীবনে, আতনাফ একজন প্রযুক্তি বিশারদ যে আদ্দিস আবাবার বোলে সাব সিটিতে নগর প্রশাসনের সাথে কাজ করে। ট্রায়ালট্র্যাকারব্লগ, যেখানে তাদের সমর্থকেরা এই মামলা এবং ব্লগারদের তাজা সংবাদ নিয়মিত তুলে ধরে, সেখানে আতনাফকে বর্ণনা করা হয়েছে এক তরুণ ইথিওপিয়ান হিসেবে যে “স্থানীয় দারুণ সব তাজ সংবাদ টুইটারে ঠিকমত প্রদান করার জন্য সুপরিচিত”। একই সাথে আতনাফ তার নিজস্ব ব্লগ পরিচালনা করে এবং সে এক ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ”।
আতনাফের মত এত তরুণ এক নাগরিকের চাপা পড়ে উদ্দীপনার করুন বাস্তবতা এই পোস্টে ধরা পড়েছে :
এটা কি সংযুক্ত ইথিওপিয়া প্রজাতন্ত্র নাকি পুলিশী রাষ্ট্র?
ইথিওপিয়া কি পরাবাস্তবতা (টোয়ালাইট জোন) অতিক্রম করেছে, পঞ্চম মাত্রায় রয়েছে? ..
.
ইথিওপিয়াকে আজকে বলা যেতে পারে “পুলিশী রাষ্ট্র”? তরুণ এবং তরুণী যাদের বেশী ভাগের বয়স ২০ বছরও অতিক্রান্ত হয়নি, তাদের শুধু ফেসবুকে ব্লগ লেখা এবং স্যোশাল মিডিয়ার নিজস্ব সাইটে নিজেদের মনের কথা তুলে ধরার কারণে সন্ত্রাসী হিসেবে গ্রেফতার করা ও কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
জোন নাইন ব্লগের অন্যান্য স্রষ্টার মত আতনাফ, তার এই কাজের জন্য প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য, জেলে যাওয়ার নয়। এটা কেবল আতনাফের ভবিষ্যত নয়, একই সাথে উচ্চকাঙ্ক্ষী সকল তরুণ ও তরুণীর বিচার, যারা নিপীড়ক এক সরকার বাক স্বাধীনতা প্রদানের মত কর্মকাণ্ড গ্রহণে বাধ্য করেছে।