বাংলাদেশে হিজড়াদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তাদেরকে ট্রাফিক পুলিশে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। ২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর ট্রাফিক পুলিশে নিয়োগ দেয়ার সরকারি উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
ব্লগার আরিফ জেবতিক বিষয়টিকে রাষ্ট্রের মানবিক হয়ে উঠার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন:
হিজড়াদের এই নিয়োগ চিন্তা রাষ্ট্র হিসেবে মানবিক হয়ে উঠার পথে একটি ক্ষুদ্র কিন্তু অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রথম দিকে এই প্রজেক্টটি হয়তো পুরো সফল হবে না, হিজড়াদেরকে সামাজিক ভাবে অবস্থান দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাঁধা-বিপত্তি আসবে, কলিগদের মাঝে অসন্তোষ হবে, পথের মানুষ হয়তো সহজে তাঁদেরকে সিরিয়াসলি নিতে যাবেন না-তবে আমি আশাবাদী এসব ঝুটঝামেলা শেষ হয়ে এটি একটি সুন্দর উদ্যোগ হয়ে উঠবে।
টুইটার ব্যবহারকারী হারুন উর রশীদ সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন:
#Hijras to be recruited as traffic police in #Bangladesh. A very welcome step by #government. http://t.co/R5xHDiju2y pic.twitter.com/w1zxl5I1mH
— Harun ur Rashid (@Chhokanu) May 20, 2015
বাংলাদেশে হিজড়াদের ট্রাফিক পুলিশে নিয়োগ দেয়া হবে। সরকারের খুব ভালো উদ্যোগ এটি।
বাংলাদেশে হিজড়াদের ভালো চোখে দেখা হয় না। সমাজে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতাও নেই। তাদেরকে কেউ চাকরি দেয় না। বাধ্য হয়েই তারা টাকার জন্য রাস্তায় নেমে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের কাজ করেন। সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আশরাফ আলী লিখেছেন:
Denied of employment opportunities, the hijras are forced to eke out a living by doing things that are often not to our liking. Many take to extortion of money by disrupting work or creating nuisance in public places. Some, however, perform at ceremonies while others turn to begging or sex work.
তাদেরকে চাকরির কোনো সুযোগ দেয়া হয় না। বাধ্য হয়েই তারা এ ধরনের জীবন বেছে নেন, যা আবার আমাদের পছন্দ না। টাকার জন্য তারা মানুষদের উত্যক্ত করেন, বিরক্তি জাগায় এমন কাজ করেন। কেউ কেউ নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে [সন্তান হলে তার নাচের অনুষ্ঠান] অংশ নেন। কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন। আবার কেউ যৌন পেশায় চলে যান।
তবে রুবাইয়াত সাইমুম সরকারের এই উদ্যোগকে এখনই সাধুবাদ জানাতে নারাজ। আরিফ জেবতিকের ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন:
[…] যারা দুই দিন আগেও রাস্তায় চাদাবাজি করত তারা কিভাবে ট্রাফিক কন্ট্রোল করবে তা ভাবার বিষয়, সাধারন ট্রাফিক পুলিশের ট্রেনিং বাইরে আর কি কি ট্রেনিং এর আওতায় আনা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার আর এটা কতটুকু বাস্তবায়ন যোগ্য আর বাস্তবিক তাও ভাবা উচিত শুধু প্রশংসা আর মারহাবা শোনার জন্য কোন সিদ্ধান্ত সরকারের নেয়া উচিত হবে না।
এদিকে দেব সাহা মনে করেন, সাধারণ পুলিশের চেয়ে হিজড়ারা কোনো অংশে খারাপ করবে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানের হত্যাকারীদের আটক করার প্রসঙ্গ টেনে ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনের মন্তব্য’র ঘরে লিখেছেন:
Transgender people might do better job than regular Bangladeshi police as evidenced by Oyashekur murder. Only they could catch culprits with their bare hands. Shameful indeed for well fed Bangladeshi Police!
ওয়াশিকুরের হত্যাকারীদের আটক করার ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা সাধারণ পুলিশের চেয়ে ভালো-ই করবে। একমাত্র তারাই হত্যাকারীদের আটক করতে পেরেছে। বাংলাদেশের পুলিশের জন্য এটি লজ্জাজনক ঘটনা!
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি হিজড়া রয়েছেন। সরকার হিজড়াদের দক্ষতা উন্নয়নে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল।
উল্লেখ্য, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতে, বিশ্বের বসবাস অযোগ্য শহরগুলির একটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আর এর পিছনে অনেক কারণগুলির অন্যতম যে অসহনীয় যানজট তা বলাইবাহুল্য। এই শহর কোনোভাবেই ক্রমবর্ধমান যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, দিন দিন এটি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই আশা করছেন, এই যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে হিজড়ারা ভালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
1 টি মন্তব্য