
“কে হতে যাচ্ছে পরবর্তী শিকার?” মধু মণ্ডলের আঁকা নিহত বাংলাদেশী ব্লগারদের প্রতিকৃতি?
বাংলাদেশের ব্লগারদের জীবনের ক্ষেত্রে যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গ্লোবাল ভয়েসেস আন্তর্জাতিক ভাবে সে বিষয় মনোযোগ আকর্ষণের আহবান জানিয়েছে। দেশটিতে এখন ব্লগারদের খুন করা হচ্ছে এবং এদের অনেকের উপর হামলা চালানো হয়েছে, যাদের অনেকে তাদের লেখার জন্য হয় ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকির লাভ করেছে অথবা তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র এ বছরই প্রকাশ্যে তিনজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে।
হুমকি প্রাপ্ত এই তিনজন সহ ৮৪ জন ব্লগারের নামের এক তালিকা পাওয়া যায় যে তালিকা তৈরী করেছিল দেশটির এক রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতা, যা সরকারের বিশেষ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, যারা অভিযোগ করেছিলেন ব্লগাররা হচ্ছে “নাস্তিক” এবং তারা ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে। এর জবাবে সরকার, সমালোচনা মুখর বেশ কিছু ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয় এবং কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে। ২০১৩ সালের শাহাবাগ আন্দোলন যখন একেবারে উত্তুঙ্গে, তখন কিছু ব্লগার এবং ধর্মীয় ডান সংগঠনের নেতা এই ধারণাটি প্রচার করতে থাকে যে ব্লগারদের সকলে হচ্ছেন নাস্তিক যারা ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে যাচ্ছে।
অন্যান্য নাগরিকের মত বাংলাদেশের নাস্তিকেরও কিছু অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশের আইনে যদি কোন ব্যক্তি “ইচ্ছাকৃত” ভাবে অথবা “অসৎ উদ্দেশ্য” ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, তাহলে তাকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব। কিন্তু ধর্মকে অপমান করার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তৈরী হওয়া দৃশ্যমান সহিংসতা হচ্ছে এর ভয়ঙ্কর নির্মম প্রতিশোধ এবং বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন। তবে এই সকল ঘটনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার এই ধরনের হামলা নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে খুনীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে খুব সামান্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তবে খুন হওয়া সকল ব্লগারদের সকলে এই ধরনের সহিংসতার প্রচারক নয় এমনকি তাদের অনেকের লেখা ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। ব্যতিক্রম ছাড়া, তাদের বেশিরভাগই প্রায়শ বাংলাদেশের জটিল এবং উদ্দেশ্যমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং মানাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে লিখে থাকে। নিহতদের অনেকে নিছক তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুশীলন করেছিল মাত্র, যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মতবাদ নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশও যে মতবাদের এক অংশীদার।
গ্লোবাল ভয়েসেস হচ্ছে একদল ব্লগার, একটিভিস্ট, লেখক এবং অনুবাদকের সম্প্রদায়, যারা বিশ্বের ১৩৭টি দেশে ছড়িয়ে আছে। মত প্রকাশের সার্বজনীন মানবাধিকার হচ্ছে আমাদের এক মৌলিক লক্ষ্য। আমরা বিশ্বের সেই সমস্ত কাহিনীগুলো তুলে ধরি, যা তেমন প্রচারিত হয় না, এবং সকলের বিনা বাঁধায় এবং নির্ভীক চিত্তে কথা বলার অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। .
তালিকাভুক্ত এই ৮৪ জন ব্লগারের মধ্যে গ্লোবাল ভয়েসেস সম্প্রদায়ের-এর অনেক বন্ধু ও সহযোগী রয়েছে। এছাড়াও হুমকি প্রাপ্ত অনেক ব্লগার এবং অনলাইন একটিভিস্ট রয়েছেন যাদের নাম এই তালিকায় নেই, কিন্তু তারা লেখালেখি করেন বলে বিপদে রয়েছেন।
দেশের এবং দেশের বাইরে বসবাসরত বাংলাদেশের ব্লগারদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস, আহমেদ রাজীব হায়দার, ওয়াশিকুর রহমান বাবু এবং অভিজিত রায়ের খুনের ঘটনার গ্লোবাল ভয়েসেস নিন্দা জানাচ্ছে এবং এই প্রতিষ্ঠান দাবি জানাচ্ছে যেন কর্তৃপক্ষ এই সমস্ত খুনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসে। আর আমরা মানবাধিকার সম্প্রদায়ের সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা গ্লোবাল ভয়েসেস-এর এই আহ্বানের সাথে যোগ দেয় এবং যারা হুমকির মুখে রয়েছেন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে।