এপ্রিল ২৫শের নেপাল ভূমিকম্পের মাত্র এক সপ্তাহ পরে #GoHomeIndianMedia হ্যাসট্যাগটি ভারতে টুইটারে দেখা যেতে শুরু করেছে। একদিকে যখন নেপালীয়রা ভূমিকম্পের পর ভারতকে তাদের তৎক্ষণাৎ সাহায্য প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে অন্যদিকে আবার অসংবেদশীল প্রতিবেদনের জন্য ভারতীয় মাধ্যমগুলোকে বিশেষভাবে নেপালে সমালোচনা করা হয়েছে।
অনেকে মনে করেছে যে ভারত সরকার ত্রাণ কার্যক্রমকে তাদের গণ সংযোগ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে।
Some Nepalis accusing Indian media of using quake to promote Modi. #GoHomeIndianMedia trends: http://t.co/XSMvj9zTED pic.twitter.com/y5IPLqdbat
— Shreeya Sinha (@ShreeyaSinha) May 5, 2015
ভারতীয় মাধ্যমগুলো ভূমিকম্পকে ব্যবহার করে মোদীর প্রচারণা করছে বলে কোন কোন নেপালীয় অভিযোগ করছে।
অন্যান্যরা এই প্রতিবেদনগুলোকেই অসংবেদনশীল এবং উত্তেজনাময় বলে অভিযোগ করছে। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, একজন ভারতীয় সাংবাদিক একটি শিশুর মৃতদেহের উপর অনিয়ন্ত্রিতভাবে ক্রন্দনরত একজন নেপালী মাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘আপনার এখন কেমন লাগছে–এই মুহুর্তে আপনার আবেগ কেমন?
An indian news reporter to a mother who's learnt her only son has been buried under their house. Q. How do you feel? #GoHomeIndianMedia
— Prasanna KC (@KC_Prasanna) May 3, 2015
একজন মা যিনি এই মাত্র জানতে পেরেছেন যে তার একমাত্র পুত্র তাদের ঘরের নীচে চাপা পড়ে আছে তাকে একজন ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্ন: আপনি কেমন অনুভব করছেন?
Times Now reporter asks an injured woman did someone of yours die? She says my 10 year old daughter. He asks her the same thing 6 times ??
— Ratna Vishwanathan (@ratnadv) April 26, 2015
টাইমস নাও এর সাংবাদিক একজন আহত নারীকে জিজ্ঞাসা করছে আপনার কি কেউ মারা গেছে? তিনি উত্তর দিলেন আমার ১০ বছরের মেয়েটি। সে তাকে এই জিনিস ৬ বার জিজ্ঞাসা করলো??
ভারতীয় মাধ্যমগুলোতে অদায়িত্বশীল প্রতিবেদন লেখার ফলে রাগান্বিত হয়ে নেপালীয়রা এখন অনলাইনে #ভারতীয়মাধ্যমঘরেফেরো শীর্ষক হ্যাসট্যাগ ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে যা বেশ কয়েকদিন ধরে টুইটারে দেখা গেছে।
Have you seen the Chinese media interviewing anyone? Less talk and more work please. Respect is earned, not publicized #GoHomeIndianMedia
— Rubina (@RubinaKharel) May 3, 2015
আপনি কি চৈনিক মাধ্যমগুলোকে কারও সাক্ষাৎকার নিতে দেখেছেন? অনুগ্রহ করে কম কথা এবং বেশী কাজ। সম্মান অর্জন করা হয়, প্রচার করা নয়
এই ক্রোধ সামাজিক মাধ্যমগুলোর বাইরেও প্রসারিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কাঠমুণ্ডুর রাস্তাগুলোতেও একটি অটোরিক্সাকে এই হ্যাসট্যাগের বিজ্ঞাপন দিতে দেখা গেছে।
If u got chance to travel around #Kathmandu in #Tempo then u'll see #GoHomeIndianMedia poster -Photo @aesmriti pic.twitter.com/oPJ1ALxr2F
— Prakash Timalsina (@prakashujyalo) May 5, 2015
আপনি যদি #কাঠমুণ্ডুর আশপাশে #টেম্পোতে করে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ পান তবে আপনি #ভারতীয়মাধ্যমঘরেফেরো পোষ্টার দেখবেন
অন্যান্যরা বলে যে ভারতীয় মাধ্যমগুলো নোংরা চটকদারীতার আশ্রয় নিয়েছে এবং ভূমিকম্পের পরিণতির প্রতি নূন্যতম নম্রতা দেখাতে অপারগ হয়েছে। এটি ঘটনাক্রমে প্রথম বার নয় যে ভারতীয় মাধ্যমগুলো এধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হলো। ৫,০০০এরও বেশী লোক মৃত্যুবরণ করা উত্তরখণ্ডের আকস্মিক বন্যার সময় কোন কোন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বন্যা দুর্গতদের খুবই অসহায় মুহূর্তের ছবিসম্বলিত চরম দুর্দশার দৃশ্য দিয়ে বায়ুতরঙ্গ ছেয়ে ফেলেছিল, কোন কোন সমালোচক যেটিকে সংবাদ প্রতিবেদনের থেকে বেশী দুর্যোগের সুযোগ গ্রহণ বলে আখ্যায়িত করেছিল।
কোন কোন ভারতীয় অনলাইনে সংকেত দিয়েছে যে তারা তাদের নিজেদের মাধ্যমগুলোর আচরণে লজ্জিত।
#GoHomeIndianMedia @TimesNow @HeadlinesToday @mediacrooks and all Media Crooks out there feel shame on you pic.twitter.com/W74xDhTBLC
— Keerthivasan (@kvasan_c) May 4, 2015
@টাইমসনাও @হেডলাইনসটুডে @মিডিয়াক্রুকস এবং সেখানে থাকা সকল সংবাদমাধ্যম জালিয়াৎদের প্রতি ধিক অনুভব করছি
অন্যান্য ভারতীয়রা #ভারতীয়মাধ্যমআরফিরোনা হ্যাসট্যাগ ব্যবহার করতে শুরু করেছে
This is the reason why #GoHomeIndianMedia is trending worldwide. Utterly shameful. So #DontComeBackIndianMedia pic.twitter.com/a3l243Pu5T
— SINGH (@Punjabi_AAPian) May 3, 2015
এটাই হলো সেই কারণ যার জন্য #ভারতীয়মাধ্যমঘরেফেরো বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। নিতান্তই লজ্জাজনক। সুতরাং #ভারতীয়মাধ্যমফিরেএসোনা
হিন্দুস্তান টাইমস-এ একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করা কির্তীবাস মুখার্জীর মতো কারো কারো জন্য নেপালে ভারতীয় প্রতিবেদনের সমস্যাগুলোর বেশীরভাগই হচ্ছে ‘স্ব-পরিবেশিত বর্ণনা’ এবং ‘সদয়বোধ’ এর সাথে সম্পর্কিত।
অবশ্যই সকলেই ভারতীয় মাধ্যমগুলার জন্য তাদের দ্বার বন্ধ করতে উৎসুক নয়। নতুন দিল্লী ভিত্তিক সাংবাদিক স্মীতা শর্মা ডেইলিও.ইন-এ লিখেছেন যে নাউচ্চারণকারীদেরকে একটু সময় নিয়ে বিবেচনা করা উচিত যে তারা বড় দাগের অবস্থা উপলব্ধি করছে কি না:
It is time for course correction before #GoHomeIndianMedia hashtags overshadow all the good work done by many journalists, who too are mortals, and brave challenges to tell the world stories of those in pain.
#ভারতীয়মাধ্যমঘরেফেরো হ্যাসট্যাগটি অনেক সাংবাদিকের অর্জন করা ভাল কাজগুলোকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলার আগে এখনই পথ সংশোধনের সময়; সেই সাংবাদিকরাও মরণশীল, এবং সাহসী যারা ক্লেশভূক্তদের কাহিনী ব্শ্বিকে বলার জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।
কিছু কিছু দুর্দশা হয়তো দিকভ্রষ্ট হয়েছে, তবে ভারতীয় মাধ্যমগুলো সম্পর্কে সাধারণ উদ্বেগের মাধ্যমে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে তাদের সংবেদনশীলতা বা তার ঘাটতি সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতে ১০০টিরও বেশি খবরের চ্যানেল আছে, এবং তারা সকলেই ‘টার্গেট রেটিং পয়েন্ট’ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে একে অন্যের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। প্রতিটি খবরের চ্যানেলের প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে সর্বপ্রথম উপস্থিত হয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরতে চায়। প্রথম হওয়ার এই প্রতিযোগিতায়, বিশেষ করে বড় ধরনের দুর্যোগের সময়, যখন এতো বেশী মানুষ টেলিভিশন খুলে বসে তখন কিছু সংবাদমাধ্যম নৈতিকতা এবং পেশাদারী মানের মধ্যে অগ্রাধিকার করতে ব্যর্থ হয়।
অন্যান্যরা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত যে নেটওয়ার্কগুলো অতি মাত্রায় অপেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ করছে এবং যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করার আগেই ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। নেপালি বংশোদ্ভুত লেখিকা সুনিতা সাক্য সিএনএন-এর জন্য একটি ব্লগ পোষ্টে এই কথিত প্রবণতা সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন, যেখানে তিনি ভারতীয় মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনগুলোকে সোপ অপেরার সাথে তুলনা করেছেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য রেটিং বাড়ানোর একটি বিশাল সুযোগ তৈরী করে দেয়, কিন্তু এগুলো সাংবাদিকতার ন্যায়পরায়তাকেও মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। নেপালে ভারতীয় মাধ্যমগুলোর সংগ্রাম গণক্লেশের সময় সাড়া প্রদানের সমস্যাগুলো সম্পর্কে নতুনভাবে মনে করিয়ে দেয়।