
কাম্পালার মেয়র ইরিয়াস লুকওয়াগোর দুইটি জাতীয় পরিচয় পত্রের বায়োমেট্রিক তথ্য একই, তবে ক্রমিক নম্বর এবং মেয়াদ শেষের তারিখ ভিন্ন। তার ফেইসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা ছবি।
উগান্ডা সরকার গত বছর সকল উগান্ডান নাগরিককে নিবন্ধন এবং জাতীয় তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাঁদের পরিচয় পত্র ইস্যু করার প্রক্রিয়া শুরু করে। নির্বাচন কমিশন ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল তারিখে ঘোষণা দিয়েছে, সেই একই পরিচয় পত্র ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে।
বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদেরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন। তাঁরা বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, উগান্ডার নাগরিক নন এমন অনেকের নামও নিবন্ধন করা হয়েছে। জাতীয় তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি নিয়েও তাঁরা বেশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এই ভেবে শঙ্কিত যে সেনাবাহিনী হয়তোবা আগামী নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যু প্রকল্পের অন্যতম একজন বিরোধীতাকারী হচ্ছেন কাম্পালা শহরের লর্ড মেয়র ইরিয়াস লুকওয়াগো। এই ব্যবস্থার দূর্বলতাগুলো তুলে ধরতে তিনি তার ফেইসবুক পেজটি ব্যবহার করেছেন। তিনি দুইটি পরিচয় পত্রের ছবি পোস্ট করেছেন, যা তিনি একই বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করে পেতে সক্ষম হয়েছেন। তবে পরিচয় পত্র দুইটির ক্রমিক নম্বর দুইটি ভিন্ন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জেনারেল নিয়াকাইরিমা এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে তাকে দুইটি পরিচয় পত্র ইস্যু করার কারণ জানতে চেয়েছেনঃ
এটি একটি অসাধারণ দেশ, যেখানে কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা রয়েছে, অন্যথায় আমি সন্দেহ করছি যে “স্বাধীন নির্বাচন কমিশন” হয়তো শীঘ্রই শুদ্ধ হয়ে উঠবে এবং / অথবা অবসর গ্রহণ করতে যাওয়া ইউপিডিএফ জেনারেল নিয়াকাইরিমাকে [স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী] কোন বৈধ কারণ জানাতে হবে যে কেন একই বায়োমেট্রিক তথ্য, কিন্তু ভিন্ন ক্রমিক নম্বর, ভিন্ন মেয়াদ শেষের তারিখ ইত্যাদি দিয়ে আমাকে দুইটি জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যু করা হয়েছে? এতে করে আমি দুইবার “ভোট দেয়ার সক্ষমতা” অর্জন করলাম কিনা, সেটা চিন্তা করেও আমি বিস্মিত হয়েছি।
তার পোস্টটি ফেইসবুকে উগান্ডানদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
ব্রায়ান নানদালা বলেছেন, একজন মেয়র যদি দুইটি পরিচয় পত্র পেতে পারেন, তবে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তো তিনি আরও বেশি সংখ্যক পেতে পারেনঃ
হা হা লর্ড মেয়রের যদি দুইটি পরিচয় পত্র হতে পারে, তবে আমার তো ৭টি থাকা উচিৎ।
ডিডাস কিসেম্বো যেন ভূত দেখছিলেনঃ
হে হে হে … @ইরিয়াস লুকওয়াগো এভাবেই ভূত ভোটারেরা নিবন্ধিত হয়েছে।
ইমি ওটিম বিষয়টি পরিষ্কার করতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেনঃ
২০১৬ সালের নির্বাচন নিবন্ধন এবং নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য এটি খারাপ। একই নামে এবং একই জন্ম তারিখ দিয়ে, ভিন্ন ক্রমিক নম্বর এবং মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ দিয়ে একজন বিরোধীদলীয় নেতাকে দুইটি জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যু করা হয়েছে। আরও কতজন উগান্ডান একটির বেশি জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়েছেন, কিন্তু তাঁরা নিশ্চুপ রয়েছেন? ইসিকে [নির্বাচন কমিশন] যত শীঘ্র সম্ভব এই বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে…
ডেনিশ ইনদানি কৌতুক করে বলেছেনঃ
জানেন না বুঝি! লর্ড মেয়রের যমজ ভাই আছে। তাঁরা একই নামে পরিচিত!!!!!!!
তবে যারা তার পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাঁরা সবাই যে তার পক্ষ নিয়েছেন তা নয়। এক্ষেত্রে আগাবা জেবেদিয়ান জোনানের উদাহরণ দেয়া যায়। তিনি বলেছেন, মেয়র এই প্রতারণার সাথে জড়িত আছেনঃ
এমনকি লুকওয়াগোকেও কৈফিয়ত দিতে হবে, কেন তাকে দুইটি পরিচয় পত্র দেয়া হল। তার অর্থ দাঁড়ায় তিনিও এই প্রতারণার সাথে জড়িত আছেন।
একটি পরিচয় পত্র অকার্যকর বলে মুগিশা এন্ড্রু ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে মেয়র দুইটি পরিচয় পত্র পেয়েছেনঃ
পাইলট প্রকল্প চলার সময়ে একজন ভিআইপি হিসেবে ২০১১ সালে তিনি প্রথম কার্ডটির জন্য নিবন্ধন করেছেন। ক্রমিক নম্বরটি দেখলেই তা বলা যায়…সেই কার্ডগুলো পরবর্তীতে অকার্যকর হয়ে যায়, দ্বিতীয় কার্ডটি এখন কার্যকর রয়েছে। এমনকি লুকওয়াগো নিজেও জানেন যে দ্বিতীয় কার্ডটি বাতিল হয়ে গেছে। আসন্ন নির্বাচনটি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ব্যাহত করার জন্য তিনি একটি অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করছেন মাত্র… আপনি যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়ে থাকেন, তবে আপনার ক্রমিক নম্বরের সাথে এই দুইটি পরিচয় পত্রের ক্রমিক নম্বর তুলনা করে দেখুন এবং বলুন কোনটি কার্যকর আছে এবং কোনটি নেই…
প্যাট্রিক সেনিয়ংগা জানতে চেয়েছেন যে দুইটি কার্ডে দুইটি ভিন্ন ছবি কেন দেয়া হয়েছে, নিশ্চয়ই তিনি দুইবার নিবন্ধন করেছেনঃ
আর তার কার্ড দুইটিতে ভিন্ন দুইটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি কেন রয়েছে… তিনি কি দুইবার নিবন্ধন করেছেন?
কসমাস কাবোনা মেয়রের এই গল্পে বিশ্বাস করছেন না। তিনি স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন যে মেয়র একটি অপরাধ করেছেনঃ
আমি বিশ্বাস করছি না। পরিচয় পত্র তৈরির প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট দীর্ঘ মেয়াদী, এতে স্বাক্ষর অথবা বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লর্ড মেয়র কি করে জানলেন যে তার জন্য বাক্সে দুইটি কার্ড রয়েছে। তিনি কি দুইবার নিজেকে নিবন্ধন করেছেন? একটি কার্ডের জন্য নিজেকে দুইবার উপস্থাপন করে ইতোমধ্যে একটি অপরাধ করে ফেলেছেন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নির্বাচন কর্তৃপক্ষের উপর আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে নেয়া পদক্ষেপ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নাম পরিবর্তন করে “উগান্ডা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন” করা হবে। উগান্ডাতে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনের পরেই বিরোধীদল তাঁদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করবে, এটি খুব সাধারণ একটি বিষয়।