
“ইটাক সা পুসো নি মাং জুয়ান” (মাং জুয়ানদের বুকে খঞ্জর চালনা)। ১৯৭৮ সালে জলরঙে আঁকা ছবি, অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সম্মানে ফিলিপিনো কর্মীদের বিভিন্ন অবস্থা বর্ননাকারী কিছু আঁকা ছবি নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেসের এই আয়োজন।
এন্টিপাস “বিবয়” দেলোটাভো একজন জনপ্রিয় ফিলিপিনো চিত্রকর। ফিলিপিনো সমাজের সাধারন মানুষ যেসব কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন, সে সব অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে ছবি এঁকেছেন। ১৯৭০ এর দশকের স্বৈরশাসনের অন্ধকার দিকগুলোকে যেসব সমাজসেবক আলোর মুখ দেখিয়েছেন, তাদের সাথে একই কাতারে যোগ দিয়ে বিবয় ছবি এঁকে যাচ্ছেন। তার ছবিগুলো দেশের দারিদ্র্য, নিপীড়ন এবং অন্যায়-অবিচারের প্রভাব সম্পর্কে জনগণের অজ্ঞতা, ভুল বোঝাবুঝি এবং মিথ্যা বিশ্বাসসমূহ দূর করার কাজ করে।
একটি বহুজাতিক কোম্পানির লোগোর সামনে দিয়ে একজন বয়স্ক শ্রমিকের হেঁটে যাওয়ার একটি দৃশ্য তিনি তার অন্যতম জনপ্রিয় একটি ছবিতে (ছবিটি উপরে দেখুন) বিশেষভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সমালোচকদের কেউ কেউ ছবিটিকে “নির্মম পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দ্বারা শ্রমজীবী শ্রেণীকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা” হিসেবে বর্ননা করেছেন।
গ্লোবাল ভয়েসেস তার অনুপ্রেরণা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বিবয় বলেছেনঃ
বেশীরভাগ বিখ্যাত শিল্পকর্ম মানুষের সুখকর ইতিবাচক মনোভাব থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সুখকর ইতিবাচক মনোভাব দ্বারা যা কিছু উন্নীত হচ্ছে তাই শিল্পকে অনুপ্রাণিত করে। আমার শিল্প এর বিপরীতমুখী বলে মনে হয়। সামাজিক দায়িত্ব থেকে এর সূচনা এবং ছবিগুলো এঁকে আমি স্বস্তি খুঁজি। আমি অবশ্য নিশ্চিত নই যে এটাই আমার কাজের অনুপ্রেরণা কিনা? আমি মনে করি, একজন বিবেকবান সামাজিক জীব হিসেবে এটি দায়িত্বের চেয়েও বেশি কিছু।
তরুণ শিল্পীদের প্রতি বিবয়ের উপদেশ হলঃ
আপনি যা সৃষ্টি করেন, তা আপনার পরিচয় প্রকাশ করে। আপনি যদি শুধুমাত্র অর্থ বা অন্য কিছুর জন্য ছবি আঁকেন, তবে নিঃসন্দেহে তাই আপনার ছবিতে ফুটে উঠবে। একজন শিল্পীকে স্থায়ী করে তুলতে তার আন্তরিকতা, প্রত্যয়, অনুরাগ এবং মেধা সবসময়ই অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে।
জীবিকার খোঁজে ফিলিপিনো কর্মীদের গণহারে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চিত্র ছবিটিতে ধারণ করা হয়েছে। পরিবার ও বন্ধুদের ছেড়ে ১২ লক্ষ ফিলিপিনো কর্মী বর্তমানে দেশের বাইরে কর্মরত রয়েছেন।
শিল্প বিষয়ক পণ্ডিত প্যাট্রিক ডি ফ্লোরেস ছবিটি সম্পর্কে বলেছেনঃ
তারা একটি দিগবলয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন যা আপাত দৃষ্টিতে একটি স্থান বদল বলেই মনে হচ্ছে, তবে তাদের লম্বা লম্বা পা ফেলে চলা বেশ পরিচয়সূচক। তাদের এই গুরুদায়িত্বই তাদের মাটির সাথে গেঁথে রেখেছে। আর “সেখানে থাকতেই” তারা অটল রয়েছেন এবং গভীরতার মাঝে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা কি আসছেন? নাকি চলে যাচ্ছেন? তাঁরা কি বিমান বন্দরের কোন সুবিশাল টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছেন? নাকি তাদের ফ্লাইট ধরতে আলকাতরা মেশানো-নুড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছেন? নাকি তাঁরা কোথা থেকে এসে পৌঁছেছেন?
ফিলিপাইনে ফেরিওয়ালা ধরণের বিপুল সংখ্যক আটপৌরে শ্রমিক আছেন, যারা মাঝে মাঝেই কর্তৃপক্ষের হয়রানি এবং অপমানের শিকার হন।
শহর এবং গ্রামাঞ্চলের লোকেদের আয়ের পার্থক্য অনেক বেশি। অনেক কৃষক দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্যের শিকার হয়ে শহরাঞ্চলে চলে আসতে বাধ্য হন।
ছবিটিকে একজন শিল্প সমালোচক “১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে ফিলিপিনোদের দেখানো আমেরিকান আক্রমণকারীদের মিথ্যা দয়াশীলতার” স্মারক হিসেবে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেছেন, “সেই ঘটনার প্রভাব আজও আমাদের পীড়া দেয়”। উল্লেখ্য, ফিলিপাইন ১৮৯৮ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি উপনিবেশ ছিল।
১১ সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে হামলার পর তথাকথিত “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” চলাকালীন আমেরিকান সৈন্য এবং ফিলিপিনোদের মাঝে রণকৌশলগত জ্ঞান যাচাই আরও ঘন ঘন ঘটতে থাকে।
একজন শিল্প সমালোচক ছবিটিকে “একটি ছিন্ন ভিন্ন ফিলিপিনো পতাকা দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া সমৃদ্ধির বিব্রতকর অবস্থা” বোঝাতে একটি ইঙ্গিত হিসেবে বর্ননা করেছেন।
সবগুলো ছবি এন্টিপাস “বিবয়” দেলোটাভো প্রদত্ত। এখানে অনুমতিক্রমে পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে।