বোরজান জোভানোভস্কি, ম্যাসেডোনিয়ার এক প্রখ্যাত সংবাদ পাঠক, যার বাসায় গত ২১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে এমন এক উপহারের তোড়া পাঠানো হয় মূলত যা শবের জন্য প্রদান করা হয়। এই তোড়ায় লেখা ছিল “শেষ বিদায়”। জোভানোভস্কি স্বাধীন সংবাদ ওয়েবসাইট নোভা টিভিতে কাজ করেন এবং তিনি প্রধান মন্ত্রী নিকোলা গ্রুয়েভস্কির রক্ষণশীল সরকারের সমালোচক হিসেবে সুপরিচিত। এই মালাটি সরাসরি তার স্ত্রীর হাতে প্রদান করা হয়।
সাথে সাথে জোভানোভস্কি তাকে প্রদান করা এই মৃত্যুর হুমকির সংবাদ পুলিশকে জানিয়ে দেয়, তবে হুমকিদাতাকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব সামান্য। সাম্প্রতিক বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা সূচক এবং অন্যান্য সূচক অনুসারে সংবাদপত্র স্বাধীনতার সূচকে বলকান অঞ্চলে ম্যাসেডোনিয়ার অবস্থান সর্বনিম্নে রয়েছে এবং সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান ও তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ মানহানির মামলা এখানে এখন অতি সাধারণ এক ঘটনায় পরিণত হয়েছে ।
২২ এপ্রিল তারিখে, ম্যাসেডোনিয়ার বেশ কিছু সাংবাদিক জোভানোভস্কিকে প্রদান করা হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে যার সাথে তারা এই ঘটনাকে দেশটির ক্রমশ গভীর হতে থাকা রাজনৈতিক সঙ্কটের সাথে যুক্ত করে। একই সাথে ২২ এপ্রিল তারিখে দেশটির সাংবাদিক জোরান বোজারোভাস্কি ফেসবুকে বেশ কয়েকটি মৃত্যুর হুমকি পায় এবং এই সকল হুমকির বিষয়ে সে পুলিশকে, যারা এই ঘটনায় দ্রুত এক তদন্ত শুরু করে।
ওএসসিই প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিনিধি ডুনজা মিয়াতোভিচ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে যেন তারা এই জোভানোভস্কির বাসায় পাঠানো তোড়ার বিষয়ে তদন্ত করে, সাথে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে যে বেশ কিছু দল এক জোট হয়ে এই হুমকির বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে বিরোধী এসডিএসএম নামক রাজনৈতিক দল, সাংবাদিকদের সংসদ, ম্যাসেডোনিয়ার প্রচার মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (দি ম্যাসেডোনিয়ান ইনিষ্টিটিউট ফর মিডিয়া), অডিও এবং অডিও ভিডিও ভিসুয়াল সেবার জন্য এজেন্সি, এবং এজেএম এবং মএএন নামক জাতীয় সাংবাদিক সংগঠনের উভয়ে।
মিয়েতোভিচ, ম্যাসেডোনীয় সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে যে দৃশ্যত দেশটিতে ক্রমশ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অধোগামী হওয়ার যে ধারা দেখা যাচ্ছে তা যেন তারা সে ধারা পাল্টানোর চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিক তোমিস্লাভ কেজারোভস্কির দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও পরে প্যারোল বা আদালতে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি লাভ করা, আরেক সাংবাদিক জাদরাঙ্কা কাস্তোভাকে প্রকাশ্যে বিদেশী গুপ্তচর সংস্থার তথ্যদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা, এবং এই অভিযোগ যে সরকার ১০০ জনের বেশী সাংবাদিকের ফোনে আড়ি পাতছে।
ম্যাসেডোনিয়ার সাংবাদিক সমিতি (জেডএনএম) এবং ম্যাসেডোনিয়া প্রচার মাধ্যম প্রতিষ্ঠান (এমআইএম) একই সাথে মৃত্যুর হুমকি প্রদানে নিন্দা জানিয়েছে, যারা সরকার এবং রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে সমালোচনা সহ্য না করার মানসিকতা তৈরী করতে থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে অভিযুক্ত করেছে।
জেএমএন, “ম্যাসেডোনিয়ার সকল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সংঘঠিত এই ধরনের কাপুরুষচিত কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে” সাথে যুক্ত করেছে “রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রচার মাধ্যমে ঘৃণা সূচক বাক্য ছড়ানোর প্রভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে”। জেএমএন উল্লেখ করছে যে সাংবাদিকদের যে ভয়াবহ রকমের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা, তাদের প্রদান করা মৌখিক হুমকি অথবা তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সূচক বাক্য ব্যবহারের একটি ঘটনাও রাষ্ট্র সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে।