রুবা আলেরইয়ানি এক ইয়েমেনী ছাত্রী, যে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সে সূত্রের নাম উল্লেখ করে এক মনোমুগ্ধকর এবং সহজবোধ্য ইনফোগ্রাফিকের মাধ্যমে ইয়েমেনের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছে। রুবার বয়স ২০ বছর, সে ‘উন্নয়ন অধ্যয়ন’ ও ‘মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক’ গবেষণা এই দুটি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। আর এখন সে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে। সে তার টুইটারে একাউন্টের আত্মজীবনীতে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেয় এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লেখিকা এবং ফটোগ্রাফার হিসেবে। রুবা, স্বদেশ ইয়েমেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস পর দেশটি যে সকল জটিলতার মুখোমুখি হয়েছে সেগুলো তুলে ধরার জন্য প্রায়শ সংখ্যায় ইয়েমেন (#ইয়েমেনইননাম্বার) নামক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে। সে শিল্পের মাধ্যমে অপ্রকাশিত ঘটনার উপর আলোকপাত করে- তা সেটি ইয়েমেনের মানবিক বিপর্যয় পরিস্থিতির তুলে ধরার জন্য ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন–এর ব্যবহার অথবা দেশটির এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার জন্য ছবি এবং চলচ্চিত্রের ব্যবহার হোক না কেন।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে সম্মিলিত আরব বাহিনী ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়ে দেশটিকে চুর্ণ বিচুর্ণ করছে। তাদের এই হামলার মূল লক্ষ্যবস্তু হুতিদের সামরিক ঘাঁটিগুলো, কিন্তু তাদের এই হামলা কেবল সেগুলোর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল না। হুতি উপজাতীয় বিদ্রোহীরা লড়াই চালিয়ে জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপতি আব্দে রাবু মানসুর হাদির কাছ থেকে ইয়েমেনের রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এই ঘটনায় দেশটির দক্ষিণের বন্দর নগরী এডেনেও ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির আলী আবদুল্লাহ সালেহ-এর অনুগত সেনাদের সাথে মিলে এই হামলার পাল্টা জবাব দিচ্ছে।
২০১১ সালের এক জনপ্রিয় গণজাগরণের কারণে তিন দশক ধরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় থাকা সালেহ ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয় এবং সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় সহযোগী সংস্থা (গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের) মধ্যস্থতায় এক চুক্তি অনুসারে সে হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেই একই রাষ্ট্রগুলো এখন ইয়েমেনে বোমা বর্ষণ করছে। সালেহ এখনো ইয়েমেনের বেশীর ভাগ সামরিক শাখাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আরবের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্রটির শাসন কাজের মাঝে নিজের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।
৭ এপ্রিল তারিখ থেকে তার টুইট করা শুরু করে, যার পর ইয়েমেনে নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ে গেছে। ইউএনআইচসিও–এর স্বাস্থ্য সুবিধা-হতে সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুসারে ইয়েমেনে হামলা শুরু হওয়ার পর অন্তত এখন পর্যন্ত ১,২৪৪ হাজার নাগরিক নিহত এবং ৫,০৪৪ জন নাগরিক আহত হয়েছে।
I'm starting a "#Yemen in Numbers" series. This is my first infographic based on #UN statistics (volatile/estimate). pic.twitter.com/jAXru4gtTd
— Ruba A. (@raleryan) April 7, 2015
আমি সংখ্যায় ইয়েমেন নামক সিরিজ শুরু করেছি। জাতিসংঘের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এটা হচ্ছে আমার প্রথম ইনফোগ্রাফিক (পরিবর্তনশীল/ অনুমানের ভিত্তিতে)।
Part two of my "#Yemen in Numbers" series. More to follow tomorrow. #YemeninNumbers pic.twitter.com/2nw7DuMCuh
— Ruba A. (@raleryan) April 7, 2015
সংখ্যায় ইয়েমেন নামক সিরিজের দ্বিতীয় খণ্ড। আগামীকাল আরো আসছে।
যুদ্ধে নিহত হওয়া ইয়েমেনের শিশুদের নিয়ে সে টুইট করেছে :
#YemeninNumbers: According to UNICEF, an estimated 74 children have died in the #Yemen conflict so far. #KefayaWar pic.twitter.com/83T81DfsVL
— Ruba A. (@raleryan) April 8, 2015
ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, ইয়েমেনের এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৭৪ জন শিশু নিহত হয়েছে।
এবং ক্রমশ বাড়তে থাকা সংঘর্ষের কারণে ইয়েমেনের ২২টি প্রদেশের মধ্যে ১৯টিতে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে:
#YemenInNumbers: #UNICEF has reported that over 1M #Yemen-i children are unable to go to school due to the conflict. pic.twitter.com/rWxLBGfVue
— Ruba A. (@raleryan) April 9, 2015
ইউনিসেফ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে এই সংঘর্ষের কারণে প্রায় ২০ লক্ষের বেশী শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।
একই সাথে সে যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহারের বিষয়টিও তুলে ধরছে:
#YemeninNumbers: 1/3 of fighters in conflict are children. #Yemen #UNICEF pic.twitter.com/UGQ9kYe1vJ
— Ruba A. (@raleryan) April 10, 2015
এই সংঘর্ষে লড়াই করা যোদ্ধাদের প্রতি তিনজনের একজন হচ্ছে শিশু।
আরো পাঠ করুনঃ ইয়েমেনের যুদ্ধের ঘটনায় অন্তত ১১৫ জন শিশু নিহত হয়েছে।
সে ভুলে যায়নি বিদেশী অনেক ইয়েমেনী আটকা পড়ে আছে, সংবাদ অনুসারে এখন সংখ্যাটি ১০,০০০ হাজার জনে পরিণত হয়েছে:
#YemenInNumbers: According to some reports, approximately 4000 #Yemen-is are stranded in airports around the world. pic.twitter.com/XaGcUHGu9a
— Ruba A. (@raleryan) April 8, 2015
কয়েকটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ৪০০০ ইয়েমেনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান বন্দরে আটকে পড়ে রয়েছে।
আর যাদের কথা না বললেই নয় সেই আভ্যন্তরীণ ভাবে উদ্বাস্তু নাগরিকদের সংখ্যা রুবার টুইট করার সময় সংখ্যা তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে:
#YemeninNumbers: internally displaced persons in #Yemen have increased by more than 100,000. #KefayaWar pic.twitter.com/ce5gFG1EoI
— Ruba A. (@raleryan) April 10, 2015
ইয়েমেনে আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত নাগরিকের সংখ্যা এখন বেড়ে ১০০,০০-এর জনের বেশী ছাড়িয়ে গেছে।
সাথে পাঠ করুনঃ
যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনীরা বিদেশে আটকে পড়েছে এবং স্বদেশে তারা উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে।
১১ এপ্রিলে সে ইয়েমেনের খাদ্য নিরাপত্তা এবং আমদানির উপর দেশটির যে নির্ভরতা, সে বিষয়ে নজর দেয়:
#YemenInNumbers: 11.5M #Yemen-is were food insecure before conflict. #OpDecisiveStorm + #Houthis further insecurity. pic.twitter.com/seldP5qqsf
— Ruba A. (@raleryan) April 13, 2015
সংঘর্ষের আগেই ইয়েমেন খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ছিল, এই যুদ্ধের কারণে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আরো ঝুঁকিতে পড়ে গেল।
জাতিসংঘের সূত্র থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানর মাধ্যমে রুবা ক্রমাগত তাজা সব ইনফোগ্রাফিক প্রকাশ করে যাচ্ছে :
#YemenInNumbers: #Yemen has an import dependency for 90% of its wheat and 100% of its rice. #WFP #FoodCrisis pic.twitter.com/RUck9cJX8n
— Ruba A. (@raleryan) April 11, 2015
ইয়েমেন, আটার ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ এবং চালের ক্ষেত্র শতভাগ আমদানী নির্ভর রাষ্ট্র।
১৪ এপ্রিল তারিখে, সে দেশটিতে খাবার ও ওষুধের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে:
#YemenInNumbers: According to #Oxfam, food prices in #Yemen have doubled since the beginning of the conflict. pic.twitter.com/lz80KGTiC4
— Ruba A. (@raleryan) April 14, 2015
অক্সফামের সূত্র অনুসারে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেনে খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
#YemenInNumbers: Medicine prices have increased by over 300% with the shortage of proper medical care/supplies #Yemen pic.twitter.com/qC23fNx3WQ
— Ruba A. (@raleryan) April 28, 2015
ওষুধের দাম প্রায় ৩০০ গুণ বেড়ে গেছে আর যথাযথ চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে।
#YemenInNumbers: Wheat & flour prices have increased by 40% in a country where over 50% live under the poverty line. pic.twitter.com/BAGf9bZWtt
— Ruba A. (@raleryan) April 28, 2015
এমন একটা দেশে আটা ও গমের দাম ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে যে দেশে ৫০ শতাংশ নাগরিক দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে।
#YemenInNumbers: According to @UNICEF, 115 children have been killed in #Yemen and 172 have been maimed. #KefayaWar pic.twitter.com/XlanoXHXpR
— Ruba A. (@raleryan) April 29, 2015
ইউনিসেফের সূত্র অনুসারে ইয়েমেনে ১১৫ জন শিশু নিহত হয়েছে ১৭২ জন শিশু তার শরীরের কোন না কোন অঙ্গ হারিয়েছে।
যুদ্ধের সমাপ্তির আহ্বান জানিয়ে রুবা একটা ভিডিও তৈরী করেছে, যার শিরোনাম ইয়েমেনের কণ্ঠস্বর, আর এটি ‘যুদ্ধ যথেষ্ট হয়েছে আর না’ (#কেফায়াওয়্যার) নামক আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। :
সম্প্রতি সে বাজফিডের ব্যাপক ভাবে তৈরী হওয়া তথাকথিত “ইয়েমেন বিশেষজ্ঞদের” জন্য এক বিদ্রূপাত্মক প্রশ্নমালা তৈরী করেছে, যাদের সে বলছে ইয়েমেন সম্বন্ধে কোন কিছু লেখার আগে একবার চিন্তা করুন: