
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় নিজের মিশনারী বিদ্যালয়ে গণ ধর্ষণের শিকার ৭১ বছর বয়স্ক এক নান-এর সমর্থনে এলাহাবাদে যাজকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক বিক্ষোভ শোভাযাত্রায় হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক অংশ নেয়। ছবি রিতেশ শুক্লার, কপিরাইট ডেমেটিক্সের (১৬/৩/২০১৫)।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বৈবাহিক ধর্ষণ (স্বামী বা স্ত্রী কেউ কাউকে বলপূর্বক মিলনে বাধ্য করা) অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে না বলে রাজ্যসভায় বিবৃতি প্রদানের পর থেকে ভারতীয় প্রচার মাধ্যম এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এই নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়।
হরিভাই পৃথ্বীভাই চৌধুরী ৩০ এপ্রিলে এ বিষয়ে এই যুক্তি প্রদান করেন যে বিবাহ এ জাতীর মাঝে এক পবিত্র বন্ধন হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এ কারণে বিয়ের পর যৌন নির্যাতন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
মন্ত্রী ঠিক সেই মূহূর্তে এই বিবৃতি প্রদান করলেন যখন অনেকে সেই সমস্ত স্ত্রীদের রক্ষায় এক বিশেষ আইনের পক্ষে যুক্তি প্রদান করছে, যারা ঘরোয়া ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার।
বর্তমানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ নাম্বার ধারা অনুসারে, ভারতের আদালত বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে না, যদি না স্ত্রীর বয়স স্বামীর চেয়ে ১৫ বছরের কম হয়। ১৯৮০ সালে যখন অধিকার আন্দোলন কর্মীরা এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন সরকারি কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন যে বৈবাহিক চুক্তি হচ্ছে স্থায়ী যৌনমিলনের সম্মতি এবং বিবাহিত দম্পতির মাঝে ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হলে তা ভারতীয় পারিবারিক মূল্যবোধকে দূর্বল করে ফেলবে।
স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা মন্ত্রীর এই মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে:
When there is no love in d relationship every sexual act wud feel as #MaritalRape. Be it to a man or a woman Laws can't regulate Love GN
— Deepika Bhardwaj (@DeepikaBhardwaj) April 30, 2015
যখন সম্পর্কের মধ্যে ভালবাসা থাকে না, তখন প্রতিটি যৌন মিলন বৈবাহিক ধর্ষণের মত অনুভত হয়। তা সেটি নারী বা পুরষ যার ক্ষেত্রে ঘটুক না কেন।
আইন ভালবাসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
Dear minister, if marriage is sacred, does that make #MaritalRape sacred too? http://t.co/WT73Ac4adn (via @JSB17) pic.twitter.com/3HONV59jgV
— Hindustan Times (@htTweets) April 30, 2015
প্রিয় মন্ত্রী মহোদয় বিবাহ যদি পবিত্র বিষয় হয়, তাহলে বৈবাহিক জীবনে ধর্ষণও কি পবিত্র এক বিষয়?
তবে অন্য টুইটার ব্যবহারকারী আরো বেশী সতর্ক¸ তারা এই আইনের পক্ষে যারা সোচ্চার তাদের সমালোচনা করছে এবং এই ধারার ত্রুটির বিষয়টি নির্দেশ করছে যা বিভ্রান্তির দ্বার খুলে দিতে পারে:
Don't trust #MaritalRape Divas. They say they are doing it for you. But most don't even stand up for colleagues in Sexual Harassment cases.
— Ajayendar Al-Adarsh (@ajayendar) April 30, 2015
যে সমস্ত নারীরা বৈবাহিক জীবনের ধর্ষণ নিয়ে কথা বলছে তাদের বিশ্বাস কর না। তারা বলছে যে এটা তারা আপনার জন্য বলছে , কিন্তু তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই আবার যৌন হয়রানীর শিকার নিজের সহকর্মীদের সমর্থনে তাদের পক্ষ অবলম্বন করে না।
my objection to criminalizing #MaritalRape is the possibility of wide-spread misuse. Look how #DomesticViolence Act unfairly favours women
— Tinu Cherian Abraham (@tinucherian) April 30, 2015
বৈবাহিক জীবনে ধর্ষণের বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আমার আপত্তি হচ্ছে তা ব্যাপক ভাবে বিভ্রান্তি তৈরীর সম্ভাবনা তৈরী করে। এখন দেখা যাচ্ছে ঘরোয়া নির্যাতন আইন অনৈতিক ভাবে নারীদের পক্ষপাতিত্ব করছে।
Excerpts from the suicide note of a #498A victim. #MaritalRape pic.twitter.com/Zv02cIBb8i
— हम भारत के लोग (@India_Policy) May 1, 2015
#৪৯৮ নামক আইনের শিকার (নারী নির্যাতন আইনের শিকার) এক নাগরিকের আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করা লেখা চিঠির সারাংশ।
ফেসবুক ব্যবহারকারী জ্যোতি তিওয়ারিও যুক্তি প্রদান করেছে যে স্ত্রী এবং স্বামী উভয়ের ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের নিরপেক্ষ থাকা এবং লিঙ্গীয় দুর্বলতা পরিহার করা উচিত:
Out of five wives every wife rapes her husband at some point at time (physical , financial , mental , emotional and of course legal ) #hangtherapist #maritalrape !
প্রতি পাঁচজন স্ত্রীর একজন; কোন না কোন ভাবে একটা পর্যায়ের তার স্বামীকে (শারীরিক, অর্থনৈতিক, মানসিক, আবেগ এবং অবশ্যই আইনের মাধ্যমে) ধর্ষণ করে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সংঘঠিত ভারতকে বিস্ময়ে হতবাক করে দেওয়া দিল্লি গণধর্ষণের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ভারতীয়দের বিস্মিত করেছিলেন এই দাবী করে যে শতকরা ৬০ ভাগ ধর্ষণের মামলা হচ্ছে ভুয়া।
“ধর্ষণের যে সমস্ত অভিযোগ আমরা গ্রহণ করি তার ৬০ শতাংশ ভুয়া এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত, আর আমরা এই সমস্ত অভিযোগ যখন নিবন্ধিত করি তখন অনেক সময় আমরা অনুভব করি যে এই সমস্ত ঘটনার কারণে আমরা সত্যিকার ভাবে ঘটা ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সে ভাবে কাজ করতে পারি না যে ভাবে তা করা দরকার।