হংকং-এ বিয়ার খেতে খেতে পড়া

Professor Jason Ng discussing Hong Kong’s food culture at the Kee Club. Photo from Raising the Bar. Use with permission.

অধ্যাপক জেসন এনজি হংকংয়ের কী ক্লাবে (kee club) খাবার-দাবারের সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করছেন। ছবি নেয়া হয়েছে রাইজিং দ্য বার থেকে। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

ঘটনা ৩১ মার্চ ২০১৫ মঙ্গলবারের। সেন্ট্রাল হংকংয়ের ১০টি মদ্যশালায় ১০জন অধ্যাপক এসেছিলেন। তারা কিন্তু পান-টান করতে আসেননি। এসেছিলেন বক্তৃতা দিতে। হ্যাঁ, ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেনা চৌহদ্দি ফেলে মদ্যশালায় (পাব -এ) হাজির হয়েছিলেন।

এটি ছিল বিশ্বব্যাপী পরিচালিত “রাইজিং দ্য বার” প্রচারণার অংশ। ক্যাম্পেইনের একটা উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষাকে জনপ্রিয় শহুরে সংস্কৃতির অংশ করে নেয়া। তাছাড়া ক্যাম্পেইনের ওয়েবসাইটে লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেইসব মদ্যশালার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, যেখানে গিয়ে শহরবাসীরা তাদের দৈনন্দিন দিনগুলি সুন্দরভাবে কাটাতে পারে।

২০১৪ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময়ে ৫০টি কফি শপ ও মদ্যশালায় ৫০জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বক্তৃতা করেন। এদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজও ছিলেন। তিনি দামের অসমতা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। কার্যক্রমটি খুব দ্রুত সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়ার মধ্যে হংকংয়েই সর্বপ্রথমে এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়। একরাতে ১০জন অধ্যাপক ১০টি স্থানে বক্তৃতা করেন:

We want to revolutionise how the city operates and interacts after sundown by embedding education as part of the city’s popular culture and changing the reputation and misconceptions of Hong Kong’s nightlife by raising the quality of content consumed daily.

শহর কীভাবে পরিচালিত হয়, সূর্য ডোবার পরে পরস্পরের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ধরন কেমন, শহুরে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে শিক্ষা কীভাবে জুড়ে আছে, হংকংয়ের রাতের জীবন সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারনা এবং খ্যাতির পরিবর্তন, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিষয়বস্তুর গুণগত মান বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চাই।

কার্যক্রমের স্লোগান যেখানে “শহরের বৈপ্লবিক পরিবর্তন” সেখানে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনের আলোচনার বিষয় “বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক” হলে আশ্চর্যের কিছু নেই। আলোচনায় চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের অধ্যাপক ড. ক্রিস্টভ ভি.ডি, ট্রোস্ট লেটস দ্য বুলেটস ফ্লাই সিনেমা-সহ বিপ্লব বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।

একটি মদ্যশালায় বিপ্লব নিয়ে আলোচনা হলেও অন্যান্য মদ্যশালায় আরো নানা বিষয়ের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের অধ্যাপক লোকমান টিসুইয়ের আলোচনার বিষয় ছিল: “স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্টারনেট কি মরে যাচ্ছে?”। ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের অধ্যাপক পুজা কাপাই “সম্মান, শরম এবং ক্ষমতায়ন: পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সমতার অভিযান” বিষয়ে বক্তৃতা দেন। হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র অধ্যাপক ডি কাই “সংগীত অনুবাদ: সংগীত ও ভাষাকে আমরা কীভাবে উপলদ্ধি করি তার গণনীয় শিক্ষার ব্যাখ্যা” বিষয়ে বক্তৃতা দেন। ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের অধ্যাপক জেসন এনজি’র বক্তৃতার বিষয় ছিল “মধ্যবিত্তের নবউত্তরণের ছায়ায় হংকংয়ের খাদ্য সংস্কৃতি”।

One night 10 talks in 10 venues. Photo from Raising the Bar. Use with permission.

এক রাত ১০টি স্থানে ১০টি আলোচনা অনুষ্ঠান। ছবি নেয়া হয়েছে রাইজিং দ্য বার থেকে। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

গ্লোবাল ভয়েসেস অনুষ্ঠান আয়োজকদের একজন এলসন টংয়ের সাক্ষাৎকার নেয়। তিনি এই ধরনের উদ্যোগ হংকং-এ কেন দরকার সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন:

Raising the Bar thrives in the context of a large number of grassroots public education initiatives recently launched in Hong Kong. Naturally, political events have been the main catalyst. Each initiative has its own focus, but they all respond to a growing awareness that the city has the potential to become a hub for culture, education and innovative ideas.

Another important aspect is that we’ve brought the event from the grassroots level up, without a blueprint and without any funding. A lot of generous people have helped us out at different stages. In the end we’ve built ‘Raising the Bar’ around a ‘sustainable consumption’ model, where part of our revenue goes back to the local community, in particular local artists and designers.

সম্প্রতি হংকং-এ তৃণমূল পর্যায়ে যেসব গণমুখী শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এদের মধ্যে “রাইজিং দ্য বার” সবচে’ আকর্ষণীয়। বলতে গেলে বেশিরভাগ উদ্যোগই রাজনৈতিক। প্রত্যেক উদ্যোগেরই নিজস্ব এজেন্ডা থাকে। তবে তাদের প্রত্যেকের উচিত শহরের সংস্কৃতি, শিক্ষা ও উদ্ভাবনী ভাবনার প্রতি দায়িত্বশীল থাকা। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

অন্যদিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আমরা কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন ছাড়াই একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এই প্রকল্প পৌছে দিয়েছি। বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ এই কাজে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। অবশেষে আমরা “চিরস্থায়ী ভোগ” মডেলের ভিত্তিতে “রাইজিং দ্য বার” প্রচারণা কার্যক্রম দাঁড় করাতে পেরেছি। কার্যক্রম থেকে আয়ের অর্থের একটা অংশ স্থানীয় মানুষের কাছে বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের শিল্পী ও ডিজাইনারদেরকে দেয়া হয়।

রাইজিং দ্য বার হংকংয়ের সংগঠকরা অনুষ্ঠানের প্রচার ও কমিউনিটি তৈরি করতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এনজিও এবং স্টার্টআপের সাথে অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছেন। অংশীদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এনরিচএইচকে-ও রয়েছে। এরা হংকংয়ের অভিবাসী নারীদের ক্ষমতায়ন ও জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য কাজ করে থাকে। আরেকটি অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হলো প্রজেক্ট লিটল ড্রিম। এটি একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এরা কম্বোডিয়ার তাকিও-র গ্রামাঞ্চলে স্কুল ডিজাইন, নির্মাণ ও পরিচালনা করে।

রাইজিং দ্য বার হংকংয়ের আলোচকদের একজন অধ্যাপক লোকমান সুই। তিনি গ্লোবাল ভয়েসেসকে বলেছেন, তিনি এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন শিক্ষা জনগণের সম্পত্তি, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বন্দী থাকতে পারে না।

I believe that a healthy society is one where ideas can freely flow, where people can debate, discuss and learn from each other. I also believe education doesn't have to be formal or stiff, but can be engaging, empowering and enjoyable — so it wasn't a hard decision for me to accept when ‘Raising the Bar’ asked me.

In the long run we need to start thinking of education as a conversation, rather than just a lecture. This is a cultural transformation, and something Raising the Bar is helping us realize and move forward on.

আমি বিশ্বাস করি, যে সমাজে চিন্তাভাবনার স্বত:স্ফূর্ত প্রকাশ থাকে, মানুষ স্বাধীনভাবে বিতর্ক করতে পারে, যেকোনো বিষয় নিয়ে যে কারো সাথে আলোচনা করা যায়, সেটাই স্বাস্থ্যকর সমাজ। তাছাড়া আমি শিক্ষায় আনুষ্ঠানিকতায় বিশ্বাস করি না। বরং এটা হবে আকর্ষণীয় ও মজাদার- তাই সিদ্ধান্ত নেয়া আমার জন্য কোনো কঠিন কিছু ছিল না।

শিক্ষা নিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী ভাবনা-চিন্তা করার আছে। এটা শুরু বক্তৃতা নির্ভর হতে পারে না। এটা হতে হবে আলোচনামূলক। এইজন্য শিক্ষাদানের সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার। রাইজিং দ্য বার-এর মতো উদ্যোগ আমাদের সেইদিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

লুইজি সেদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই ধরনের পরিচিত জায়গার নতুন ব্যবহার গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন:

When I used to think about a pub, I think about drinking, picking up girls, and getting into a fight after getting drunk. I never imagined that a pub could be a place to have intellectual conversations.

আগে মদ্যশালার কথা ভাবলেই মনে হতো এটা মদপান, মেয়ে পটানো আর বেহেড মাতাল হয়ে মারামারি করার জায়গা। আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি, মদ্যশালা বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনার জায়গা হতে পারে।

এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিসত্যি একটি শহরকে গতিশীল ও সৃজনশীল শহরে রূপান্তরিত করতে পারে। হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, হংকং এমন একটি শহর যেখানে রাতও উজ্জ্বল হয়ে উঠে তরুণদের আকর্ষণীয় ভাবনা-চিন্তা ও অনুপ্রেরণায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .