বিকল্প ধারার /হার্ড রক ব্যান্ড “সিস্টেম অফ এ ডন [1]” নামক ব্যান্ড দলের মূল গায়ক হিসেবে সের্জ তানকিয়ান [2] সুপরিচিত, যে দলটির সাথে তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে গান গেয়ে আসছেন। আর্মেনীয় গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের সাথে এই দলটির সম্পর্ক বলা যায় একেবারে সরাসরিঃ এই দলের সকল সদস্য আর্মেনীয়-আমেরিকান বংশোদ্ভুত নাগরিক, আর এরা সকলে এই গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বংশধর। ইতোমধ্যে তানকিয়ান নানাবিধ কারণে একনিষ্ঠ এক একটিভিস্ট হিসেবে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলেছে, যে তানকিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের কারা ব্যবস্থা পদ্ধতি সহ বিভিন্ন পরিবেশ বিষয়ক সমালোচনায় সোচ্চার।
এই বিষয়টি উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন নেই যে, আর্মেনীয় গণহত্যার ঘটনাটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সংগ্রাম বিশেষত তানকিয়ানের নিজের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা সম্প্রতি রোলিং স্টোন পত্রিকাকে প্রদান করা সাক্ষাৎকারে [3] তানকিয়ান, ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলেন:
আমি মনে করি সত্যিকার অর্থে তুরস্কের নিজের ইতিহাস জানা আমাদের নিজেদের জন্য গুরুত্বপূর্ন। এটা কেবল আর্মেনীয়, গ্রীক এবং অ্যাসিরিয় (ইরাকি) জাতীর গণহত্যা নয়, একই সাথে গণহত্যা নিয়ে যা ঘটে চলছে বিষয়টি সেটা নিয়েও। এই ক্ষেত্রে এমন কোন কার্যকরী আন্তর্জাতিক চুক্তি নেই যা গণহত্যা থামাতে পারে। মহান জাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংস্থা এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থা থাকা সত্ত্বেও, গণহত্যা অথবা ব্যাপকভাবে হত্যা থামানোর ক্ষেত্রে স্থায়ী কোন সংকল্প নেই। আমরা দেখছি এই একই ঘটনা ঘটেই চলেছে। আজকের সংবাদপত্রে আমি পড়লাম যে সিরিয়ার দেইয়ের এজ্জোর-এ এক গণ করব আবিষ্কার হয়েছে যা আইএসআইএস-এর হাতে গণহত্যার শিকার স্থানীয় উপজাতীয় নাগরিকদের, আর এই বিষয়টি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় দেইয়ের এজ্জোরের বালিতে চাপা পড়া সেই সমস্ত হাড়গোড়ের কথা যা বিংশ শতাব্দীতে সংঘঠিত প্রথম গণহত্যার, যা ঠিক এই একই এলাকায় সংঘঠিত হয়েছিল। যদি এই বিষয়টি প্রতীকী না হয়, তাহলে আমি জানি না এটা আর কি হতে পারে।
‘সিস্টেম অফ দি ডনের’ সাম্প্রতিক ধারনার [4] সাথে গ্লোবাল ভয়েসেস যুক্ত ছিল। দলটির “ওয়েক আপ দি সোল [5]” (আত্মার জেগে ওঠা) নামক যাত্রার অংশ হিসেবে- গ্লোবাল ভয়েসেস এর সাথে যুক্ত হয়, যা ছিল আর্মেনীয় গণহত্যার স্মরণে ২৩ এপ্রিল তারিখে (গণহত্যার শতবর্ষ স্মরণে যে দিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে তার আগের রাতে) ইয়েরেভানের রিপাবলিকা স্কয়ারে প্রদর্শীত এক উন্মুক্ত কনসার্ট, যেখানে হাজার হাজার আর্মেনীয় নাগরিক ও অন্যান্য অনেকের মাঝে কিছু জর্জীয়, ইরানী, ইউক্রেনীয় নাগরিকও উপস্থিত ছিল।
যদি মেটাল বা ধাতব সঙ্গীত আপনার পছন্দনীয় না হয়ে থাকে, তাহলে এখান থেকে চলে যাবেন না। তানকিয়ান এক বৈচিত্র্যময় শিল্পী। তার ভিডিও “১০০ বছর”-এ দুদুক [7] (আর্মেনীয় বাঁশী) দাওউলি [8] (আঞ্চলিক ঢোল), লাইরা [9] (আঞ্চলিক তার যন্ত্র যা ধনুকের মত খানিকটা বাঁকানো) এবং কানুন [10] (স্থানীয় তারের বাদ্যযন্ত্র) এর বাজনা তুলে ধরা হয়েছে, আর গানের সাথে রয়েছে গিটার, পিয়ানো এবং বেহালার সুর। তার এই সুন্দর প্রদর্শন ইতিহাসের সেই গভীর যন্ত্রণার এক প্রতিধ্বনি, আর্মেনীয়, গ্রীক এবং অ্যাসিরীয়রা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছে।
যেমনটা এ ভিডিওর বর্ণনা বলছেঃ “এই ভিডিও বিংশ শতকে গণহত্যার শিকার আর্মেনীয়, গ্রীক ও অ্যাসিরিয় নাগরিকদের সম্মানে বিষণ্ণ ভাবে তাদের স্মরণ করা”।