- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

যুদ্ধে ইয়েমেনের বিমানবন্দর, বাড়িঘর, কলকারখানা, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, অট্টালিকা এবং অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইয়েমেন, উন্নয়ন, তাজা খবর, দুর্যোগ, নাগরিক মাধ্যম, ব্যবসা ও অর্থনীতি, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ
The biggest airstrike reported shook the capital Sanaa on April 20. On Twitter, @ammar82 shares this photograph from the blast site, in a residential area. The bombing has left dozens of people dead and hundreds injured [1]

এপ্রিলের ২০ তারিখে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ভয়াবহ বিমান হামলা হয়। টুইটার ব্যবহারকারী @আম্মার৮২ আবাসিক এলাকায় বিমান হামলার এই ছবি শেয়ার করেন। হামলায় ডজনখানেক মানুষ নিহত হন। আর আহত হন আরো শ’খানেক মানুষ।

গত এক মাস ধরে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে বিমান হামলা চলছে। তবে এই হামলা শুধু সেনা এলাকায় বা হুতি বিপ্লবীদের উপর সীমাবদ্ধ ছিল না। আবাসিক এলাকাতেও হামলা হচ্ছে। এতে করে ইয়েমেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। হুতিরা গত জানুয়ারি মাসে ইয়েমেনি রাষ্ট্রপতি মন্সুর হাদির কাছ থেকে রাজধানী সানা'কে দখলে নেয়।

তাছাড়া সুন্দর শহর এডেনেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সেখানে হুতিরা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সালেহ বাহিনীর সাথে মিলে এই বিমান হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে।

সালেহ তিন দশক ক্ষমতায় থাকার পর ২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানের পর হাদির কাছে ক্ষমতা তুলে দেয় – যার মধ্যস্থতা করেছিল [2] সৌদি আরবের নেতৃত্বে গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল, সেই একই দেশ এখন বিমান হামলা চালাচ্ছে। সালেহ এখনো ইয়েমেনের অনেক সেনাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিশ্বের এই দরিদ্রতম আরব রাষ্ট্রের উপর তার অনেক প্রভাব রয়েছে [3]। (আমাদের এ সংক্রান্ত পূর্বের প্রতিবেদন [4] পড়ুন)

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ওএইচসিএইচআর ১৭ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়টি উঠে আসে:

যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে যাবতীয় বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে সানা, আল দালি এবং এডেন শহরের পাঁচটি হাসপাতাল; এডেন, আল দালি এবং সানা’র ১৫টি স্কুল; সানা, এডেন এবং হুদাইদাহ’র তিনটি প্রধান বিমানবন্দর; আল দালি’র দু’টি সেতু, দু’টি কারখানা এবং চারটি মসজিদ রয়েছে। তাছাড়া এডেন, হাজ্জাহ এবং সাদা শহরের হাট-বাজার, বিদুৎ কেন্দ্র, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বেসামরিক ঘরবাড়িও বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তবে দক্ষিণে এই ঘটনা বেশি করে ঘটছে।

উদ্দেশ্য সফল হয়েছে দাবি করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট গত ২১ এপ্রিল ইয়েমেনে পরিচালিত অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম হামলা বন্ধের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে তারা অপারেশন রিস্টোরিং হোপ নামের নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। [5] নতুন এই অভিযানের মাধ্যমে দেশটির স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করবে। উল্লেখ্য, গত চার সপ্তাহ ধরে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বিমান হামলা পরিচালনা করে আসছিল। এই হামলায় ৯৪৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৩,৪৮৭ জনের বেশি মানুষ। [6] (আরও পড়ুন ইয়েমেনবাসির দুর্দশা নিয়ে আমাদের প্রতিবেদন [7])

নিচের বেশিরভাগ ছবি ও ভিডিও-ই মার্কিন সমর্থিত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম হামলার। কিছু ছবি অবশ্য হুতি/সালেহ বাহিনীর ট্যাংক হামলার। এগুলোতে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠেছে:

ইয়েমেন আপডেট এবং অন্যান্য টুইটার ব্যবহারকারীরা যুদ্ধের ফলে ইয়েমেনে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ছবি ও খবর শেয়ার করেছেন।

জাতিসংঘ, যুদ্ধের কারণে স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, বাজারঘাট, বিদুৎ কেন্দ্র, গুদামঘর-সহ যাবতীয় অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দু’টি এমইজি২৯ বিমান সানা বিমানবন্দর ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। #ইয়েমেন

হুদাইদাহ বিমানবন্দরের ধ্বংসযজ্ঞের ছবি। গত রাতে #ডিসাইসিভস্টর্মের হামলায় এমন হাল হয়েছে। #ইয়েমেন

#অপারেশনডিসাইসিভস্টর্ম হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে উত্তর ইয়েমেনে নবনির্মিত সাদা বিমানবন্দর। চলতি মাসেই বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

এডেনের ছবি এটি। হুতি/সালেহের বাহিনী ক্রমাগতভাবে আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। #ইয়েমেন #ডিসাইসিভস্টর্ম

ইয়েমেনের এডেনে একজন তার বাড়ির ধ্বংসস্তুপের উপর বসে আছেন। ছবি নেয়া হয়েছে @ওআরহ্যামিলটন-এর কাছে থেকে। আর ছবি তুলেছেন সালেহ বাহেলস।

সানা বিমানবন্দরের কাছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া নিজের বাড়ি দেখছেন এক ব্যক্তি। #ইয়েমেন

আমার বন্ধু মাইদা’র শোবার ঘর এটি। দেখুন আগে কী ছিল, আর এখন কী হয়েছে। এডেনে হুতিদের আক্রমণে এমন অবস্থা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর: আজকের বিমান হামলায় ১৬টির বেশি পেট্রোল পাম্পকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। #ইয়েমন #সাদাহ-এ #অপারেশনডিসাইসিভস্টর্ম

স্থানীয়’রা বলেছে, গতকাল সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল সাদা শহরের উত্তরের পানির ট্যাংকি, বিদ্যুতের জেনারেটর এবং রান্নার গ্যাসের স্টেশনগুলো।

তেইজের পিপল প্যালেস ধ্বংসের ভিডিও। এটা আমার কলেজের খুব কাছেই। এটা ছিল গর্বের প্রতীক। #ইয়েমেন

তেইজের পিপল প্যালেস ধ্বংসের ক্লোজআপ ছবি। প্যালেসটি তৈরি করেছিলেন আলহামদি। #ইয়েমেন

হুতি/সালেহ বাহিনীর আক্রমণে এডেন শহরের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার নমুনা। #ইয়েমেন

গতকাল সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় হুয়েট সাইলোস এবং রাদফান টোবাকো কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা সত্যিই ইয়েমেনকে সহযোগিতা করছে।

ইয়েমেনের এডেনে অবস্থিত প্যালেস হোটেল বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

এডেনের মুয়ালা স্ট্রিটের বাড়িঘরের উপরে এখন কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। #ইয়েমেন #হুতি #ডিসাইসিভ স্টর্ম

সম্প্রতি আমার এক বন্ধু হাজ্জায় তার ফার্মহাউজের নির্মাণ কাজ শেষ করেছিল। কিন্তু সৌদি বিমান সেটা উড়িয়ে দিয়েছে। কোনো হুতি এটা করতে পারে, সেটা সে অস্বীকার করেছে।

পাঁচ বছর আগে এডেনের এই মাঠে গালফ কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল। আজ সেটা ভেঙ্গে দু’টুকরো হয়ে গেছে।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলার আগে এটা ছিল একটা ফুটবল খেলার মাঠ। এখন চেনাই যায় না। পুরো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

গত রাতে হুদাইদার দুধ ও দই কারখানায় সৌদি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৯ জন মারা গেছেন। #ইয়েমেন

সাদাহ প্রদেশের সাহার শহরে সৌদি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে প্রাথমিক স্কুল। #ইয়েমেন #অপারেশনডিসাইসিভস্টর্ম

সৌদি বিমান হামলার পর হুদাইদাহ বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো শিক্ষার্থীই সেসময়ে ছিলেন না। যুদ্ধের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। #ইয়েমেন

সৌদি বিমান হামলায় তেইজ থেকে লাহজ প্রদেশের যাওয়ার সংযোগ সেতু ধ্বংস হয়ে গেছে। #ইয়েমেন #অপারেশনডিসাইসিভস্টর্ম

তবে সবচে’ ভয়াবহ বিমান আক্রমণ হয়েছে গত ২০ এপ্রিলে, ইয়েমেনের রাজধানী শহর সানাতে। এদিন ফাজ আত্তান নামের একটি গোলাবারুদের গুদামে বিমান হামলা চালানো হয়। গুদামটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় বিস্ফোরণে ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক ব্যক্তি। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ সম্পদেরও ক্ষতিসাধন হয়।

কতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠলে জনাকীর্ণ শহরের মধ্যে ব্যাপক বোমা হামলা করা যায়? #অপারেশনডিসাইসিভস্টর্ম

ফাজ আত্তানের গতকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরিষ্কার ছবি। এই বিস্ফোরণে আশেপাশের এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। #ইয়েমেন

ফাজ আত্তানের ভয়াবহ বিস্ফোরণে আমার বাসাও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আমাদের পাঁচতলা ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশীদের দেখলাম রক্তমাখা শরীর নিয়ে বের হতে। #ইয়েমেন

সানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের কাচের দরজা ভেঙ্গে গেছে। এটা বিস্ফোরণস্থল থেতে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

সামারাহ রাস্তার শেষপ্রান্তে আল দালিল সেতুর উপর #অপারেশনডিসাইসিভস্টর্মের বিমান হামলার ছবি। #ইয়েমেন

তেইজ, মারেব এবং দক্ষিণাঞ্চল দখলকারী হুতি এবং সালেহ বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম এবং বিমান হামলা ইয়েমেন জুড়ে ব্যাপক ধ্বংস, ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণনাশের কারণ হচ্ছে। তাছাড়া দু’পক্ষে গোলাগুলির মাঝে পড়েও সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন। (পড়ুন আমাদের রিপোর্ট [100])

বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, অপারেশন রিস্টোর হোপ এদের জন্য কি বয়ে আনবে!

রুবা আলেরয়ানি দেশটির স্থিতিশীলতা চেয়ে টুইট করেছেন:

অন্য কোনো দেশ এসে আমাদের স্থিতিশীলতা এনে দিক, তা চাই না। আমরা সবাই স্বাভাবিক আছি। ইয়েমেনের যা দরকার আমরা সবাই মিলে তা করতে পারবো।