৩০শে মার্চ ২০১৫ তারিখের সকলে ওয়াশিকুর রহমান বাবু নামের একটি যুবককে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা কুপিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ করা হয়। এক মাসের মধ্যে এটি এধরনের দ্বিতীয় হত্যা।
চাপাতী দিয়ে তার মুখমণ্ডল বিকৃত করে তিনজন দুষ্কৃতিকারী তাকে রাস্তার উপর আক্রমণ করার অল্প সময় পরেই সে দ্রুত মারা যায় বলে খবর পাওয়া গেছে। যদিও মূলত সে একটি ভ্রমণ সংস্থার জন্য কাজ করতো, কিন্তু সে অনলাইনে একটি বিশাল উপস্থিতি ধরে রেখেছিল, ফেসবুক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বেনামে (ওয়াশিকুর বাবু নামে) লেখালেখি করতো। তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সে যে যে অনলাইন জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদের বেশীরভাগ সদস্যদের কাছে তার আসল পরিচিতি অজ্ঞাত ছিল।
অযৌক্তিক ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ফেসবুক-এ রহমান বেশ কয়েকটি নোট লেখে এবং নাস্তিক বাংলাদেশ নামের একটি দলের সদস্য ছিল। ইসলামসহ সকল ধর্মের সমালোচনাকারী ধর্মকারী.কম নামের নাস্তিকদের একটি বিদ্রুপাত্বক ওয়েবসাইটসহ বেশ কয়েকটি ব্লগের সাইটে সে সক্রিয় ছিল। ধর্মকারী বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে লজিক্যাল ফোরাম নামের একটি অনলাইন আলোচনা ফোরাম-এরও সদস্য ছিল, এবং স্থানীয় সামহ্যয়ারইনব্লগে প্লাটফর্মে লিখতো।
এই ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশী-আমেরিকান ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করার ঠিক এক মাস পর (গ্লোবল ভয়েস এর প্রতিবেদন দেখুন)। অভিজিৎ এর হত্যার পর রহমানও হত্যার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদে যোগ দেয়, এবং রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ তার ফেসবুকের প্রোফাইল এবং কাভারের ছবির বদলে #iamavijit (#আমিঅভিজিৎ) এবং ‘words cannot be killed’ (শব্দগুলোকে হত্যা করা যায় না) (নীচে দেখুন) শব্দগুলো যুক্ত করে।
রহমানের আক্রমণকারী মূলত তার মাথা ও ঘাড় লক্ষ্য করে মেরেছে, পূর্বে ঠিক যেভাবে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার এবং অভিজিৎ রায়-এর উপর আক্রমণ করা হয়েছিল সেভাবে। দুষ্কৃতিকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে, কিন্তু জনতা ও পুলিশ দুজনকে পাকরাও করে ফেলে। বিডিনিউজ২৪ বলে যে এর একজন চট্টগ্রাম এলাকার হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসার ছাত্র আর অন্যজন ঢাকার মিরপুর এলাকাতে অবস্থিত একটি মাদ্রাসায় যেতো। উগ্রপন্থী দল হেফাজত এ ইসলাম-এর উপস্থিতি চট্টগ্রামে বেশ দৃঢ়।
এই হত্যাটি করার জন্য বেশ ভাল সমন্বয় ও পরিকল্পনা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের একজন হত্যার কথা স্বীকার করে বলেছে:
ব্লগ কী বুঝি না, আর তার লেখাও আমরা দেখিনি। হুজুরের পরামর্শ, সে ইসলামবিরোধী। তাকে হত্যা করা ঈমানি দায়িত্ব। আর সেই ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে ওয়াশিকুরকে হত্যা করেছি।
এই পুনরাবর্তনিয় ঘটনাগুলো নিয়ে অনলাইনের সক্রিয় কর্মী ও লেখকরা তাদের শোক ও হতাশা ব্যক্ত করেছে। নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন টুইট করেছেন:
Another blogger Washikur Rahman Babu was hacked to death today in Bangladesh by Muslim fanatics. Bangladesh is not a place for freethinkers.
— taslima nasreen (@taslimanasreen) March 30, 2015
আজকে বাংলাদেশে আরও একজন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে মুসলমান উগ্রবাদীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে।বাংলাদেশ মুক্ত চিন্তকদের জন্য কোন স্থান নয়।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে তাদের উদ্বিঘ্নতা ব্যক্ত করেছে:
#Bangladesh: Horrifying murder of blogger must be ‘wake-up call’ #humanrights http://t.co/2BCFecqxgw
— AmnestyInternational (@AmnestyOnline) March 30, 2015
বাংলাদেশে ব্লগারের আতঙ্কগ্রস্ত খুন নিশ্চয়ই ‘জেগে-ওঠার ডাক'।
গণজাগরণ মঞ্চের দ্বারা বিভিন্ন সড়কে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে:
‘Protest March’ against #Blogger Rahman killing. Rahman hacked to death today by extremist group in #Bangladesh. pic.twitter.com/V5z1f667hh
— Dr. Imran H Sarker (@ImranHSarker) March 30, 2015
ব্লগার রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদ যাত্রা'। বাংলাদেশে আজকে চরমপন্থী দল রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
গুজব আছে যে ধর্মকারী.কম-এ অবিশ্বাসী ছদ্যনাম দিয়ে রহমান ৫২পর্বের একটি ধারাবাহিকের লেখক ছিল, যার শিরোনাম ছিল ‘নাস্তিকদের কটূক্তির বিরুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গা জবাব।’ সে সেখানে ইসলাম সম্পর্কে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নগুলোকে সন্নিবেশিত করে তার পাশাপাশি সাধারণভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তরে দেয়া উত্তরগুলোকে বসিয়েছিল, কিন্তু উত্তরগুলো প্রায়শই কতো অযৌক্তিক বা একটি আর একটির সাথে কিভাবে স্ববিরোধীতা করে তা দেখানোর জন্য প্রশ্নগুলোকে সে জোড়ায় জোড়ায় সাজিয়েছিল।
এখানে আন্তর্জাতিক মানবতাবাদ ও নৈতিক ইউনিয়ন প্রদত্ত একটি উদাহরণ পোস্ট করা হলো:
Insulting comment 21: Islam is claimed to be ‘the best and the complete way of life’. Does that mean that slavery is valid for eternity?
Jaw-crushing answer: See, Islam is a humane religion. Slavery was not forbidden because of the situation of that time. But there is scope for ‘qiyas and ijma’ (consensus and reconsideration) in Islam. That means any custom can be abolished.
কটূক্তি ২১: ইসলামকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা বলা হয়। তারমানে দাস প্রথা চিরকালের জন্য প্রযোজ্য?
দাঁত ভাঙা জবাব: দেখুন ইসলাম একটা মানবিক ধর্ম। দাস প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়নি তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে। কিন্তু ইসলামে ইজমা-কিয়াসের বিধান রাখা হয়েছে অর্থাৎ যে কোন প্রথা রহিত করা সম্ভব…
২০১৩ সালে চট্টগাম থেকে ধর্মীয় আলেমদের একটি দল হেফাজত এ ইসলামের নেতৃত্বে ৮৪জন ব্লগাররের একটি তালিকা পেশ করেছে যাদেরকে তারা অনলাইনে ধর্মাবমাননাকর লেখা পোস্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। অতি সম্প্রতিকালে একটি অনলাইন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে ঐ তালিকা থেকে অনিবার্য বা রহস্যময় কারণে ৮ জন মারা যাবার বিষয়ে বলা হয়েছে। এটি নিশ্চিত নয় যে রহমানের নাম ঐ তালিকায় ছিল কি না।
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান আছে মানে হলো যে এখানে কোন শরীয়া বা ধর্মাবমাননা আইন নেই। যারা নিজেদেরকে নাস্তিক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরও অন্যান্য নাগরিকদের মতো একই অধিকার আছে। যদিও বাংলাদেশের ফৌজদারী আইনের (১৮৬০) ২৯৫এ অনুচ্ছেদের অধীনে যে কোন ব্যক্তির যদি ‘ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত’ করার ‘ইচ্ছাকৃত’ বা ‘দ্বেষপূর্ণ’ উদ্দেশ্য থাকে তবে সে কারাদণ্ডের জন্য দায়ী হবে। সরকারী আলস্য এবং পুলিশের অকার্যকারীতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামী দলগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণে দায়মুক্তি প্রদান করেছে। গতকালের খবর থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে দেশটি আসলেই মুক্ত চিন্তকদের জন্য একটি মারাত্মক জায়গা হয়ে উঠছে।