ওমানি ব্লগার মুয়াইয়াহ আলরাওয়াহি সংযুক্ত আরব আমিরাত সীমান্তে নিখোঁজ

Muawiyah Alrawahi

মুয়াইয়াহ আলরাওয়াহি। জিলিয়ান সি. ইয়র্কের দেয়া ছবিটি অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত হয়েছে।

কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি অনুযায়ী, ওমান থেকে গাড়িযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশের চেষ্টা করার কারনে ওমানি ব্লগার মুয়াইয়াহ আলরাওয়াহির বিরুদ্ধে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে অভিযোগ এনে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিশ্চিত করেছে যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সীমান্ত রক্ষীরা আলরাওয়াহির সফর সংক্রান্ত কাগজপত্র জব্দ করে নিয়েছে। তবে বর্তমানে তাঁর অবস্থান অজানা। প্রায় ত্রিশ দিনেরও বেশি সময় ধরে তাঁর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব তাঁর কোন খোঁজ পাচ্ছেন না।

সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটির মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শেরিফ মানসুর আলরাওয়াহির নিখোঁজ হওয়াকে “ভয়ংকর” বলে আখ্যায়িত করেছেনঃ  

গত এক মাসে মুয়াইয়াহ আলরাওয়াহির কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সমালোচনাকারী ব্লগারদের দাপ্তরিকভাবে যন্ত্রণা দেওয়ার যে লেখ্যপ্রমান পাওয়া যায় সে অনুযায়ী ঘটনাটি বেশ ভয়ংকর। আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কৈফিয়ত চেয়েছি, কেন আলরাওয়াহিকে পুলিশের হাতে বন্দী করে রাখা হবে এবং তাকে অতিসত্বর কেন মুক্তি দেয়া হবে না?

কর্তৃপক্ষের হাতে আলরাওয়াহির হয়রানি হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মনস্তত্ত্ব বিভাগে ২০১৪ সালে ওমানি কর্তৃপক্ষ তাকে বন্দী রাখে। অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক বিবৃতিতে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছেঃ  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুয়াইয়াহ আল-রুয়াহিকে ওমানে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর ব্লগে তিনি সুলতান কাবুসের সমালোচনা করায় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওমানি রাষ্ট্র নিরাপত্তা সদরদপ্তরে তাঁর বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়। এক সপ্তাহের জন্য তাকে একটি মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে রাখা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছাড়াই তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তাঁর ব্লগে তিনি ওমানি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করার পর ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। “জন শৃঙ্খলা ভঙ্গের” কারনে একজন ওমানি শিক্ষককে বিপুল পরিমাণ অর্থদন্ড দেয়ার দুই দিন পর তিনি প্রতিবাদ জানাতে ধর্মঘট পালন করেন বলে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে মূলত মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হয়। প্রথমে তাকে আল-মাসারাহ মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল এবং এক সপ্তাহ পরে সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মনস্তত্ত্ব ওয়ার্ডে শিকলে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ ছাড়াই গত ১১ আগস্ট ২০১৪ তারিখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

ওমানের শাসক সুলতান কাবুস বিন সাইদের সমালোচনা করার অপরাধে আলরাওয়াহিকে শাস্তি প্রদানের পর গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসিতে ২০১২ সালে তাকে লক্ষ্যনীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়। “পাপমোচনের চুক্তিপত্র” শিরোনামে একটি ব্লগ পোস্ট লেখার পর আলরাওয়াহি বিপদে পড়ে গেছেন। তাঁর সেই লেখাটিতে তিনি কিছু বিতর্কিত চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও তখন থেকেই পোস্টটি ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের ২০১২ গল্প পোস্টটির প্রচার সূচীগুলো বর্ননা করেছেঃ    

অনেকগুলো বিষয় নিয়ে [তিনি] একবারে খোলাখুলি কথা বলেছেন। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে কিশোর হিসেবে যৌন প্রবঞ্চনার শিকার হওয়া, তাঁর কর্মজীবনের শুরুতে ওমানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সেবার (আইএসএস) সাথে জড়িত থাকা, সাবেক আইএসএস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খামিস আল ঘরাইবির (সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগে বর্তমানে কারাবন্দী) প্রতি তাঁর প্রশংসা বাক্য এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক, তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসের অভাব, ওমানের প্রতি তাঁর মোহমুক্তি এবং শাসক সুলতান কাবুসের প্রতি তাঁর আস্থা হারিয়ে ফেলা প্রভৃতি।   

২০১০ সালে গ্লোবাল ভয়েসেসের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আলরাওয়াহি ওমানে ব্লগ লেখা সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। “যে ইস্যু নিয়ে আমরা আলোচনা করি না সে ইস্যু আমরা সমাধান করব না” মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওমানের সেসব ইস্যু নিয়ে তিনি ব্লগ লিখতে শুরু করেন বলে তিনি ব্যাখ্যা করেছে। 

উপসাগরীয় মানবাধিকার কেন্দ্র তাঁর মুক্তির জন্য দাপ্তরিকভাবে আহ্বান জানিয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .