- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

দেখুন বড় পরিসরে গ্রহণ করা খনির কার্যক্রম ফিলিপাইনসের এই সকল সুন্দর দ্বীপগুলোর কি হাল করেছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, ফিলিপাইনস, উন্নয়ন, দুর্যোগ, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, ব্যবসা ও অর্থনীতি, রাজনীতি, সরকার
Polluted river in Rapu-Rapu Island caused by mining. Photo from Kalikasan People's Network for the Environment, used with permission

খনির কারণে রাপু রাপু দ্বীপের দূষিত হয়ে পড়া নদী। ছবি কালিকাসান পিপলস নেটওয়ার্ক ফর দি এনভায়রমেন্ট থেকে নেওয়া, অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।

ফিলিপাইনস নামক দেশটিতে ৭,০০০-এর বেশী দ্বীপ রয়েছে, হয়ত তাদের কয়েকটি আপনার কাছে পরিচিত, যেমন বোরাকায়, সেবু, বোহল এবং পালাওয়ান, যার সবকটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু হয়ত আপনি মারিন্দুকুয়ে, রাপু রাপু, মানিকানি, হোমোনহোন ইত্যাদি দ্বীপের নাম শোনেননি, যে চারটি দ্বীপ সাম্প্রতিক সময়ে খনির কার্যক্রমের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ফিলিপাইনস হচ্ছে এক খনি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য সরকার সক্রিয় ভাবে খনিজ সম্পদের আরোহণের বিষয়টি তুলে ধরে থাকে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত, সরকার দেশজুড়ে ৯৯৯টি খনি খননের অনুমতি প্রদান করেছে, কিন্তু পরিবেশের উপর বড় আকারের খনির যে বিপর্যয় প্রভাব, সে বিষয়ে পরিবেশবিদরা উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে কিছু কিছু একটিভিস্ট খনির ক্ষেত্রে বিদেশী কোম্পানির প্রভাব এবং দূর্নীতির সমালোচনায় [1] সোচ্চার।

মারিন্দুকুয়ে, রাপু-রাপু, মানিকানি এবং হোমোনহোন-এর ঘটনা খনি শিল্পের সাথে সম্পর্কিত কিছু সামাজিক বিষয়কে তুলে ধরেছে।

এখন থেকে দশ বছর আগে যখন রাপু-রাপু দ্বীপে খনির কাজ শুরু হয়, তখন সরকার এটির প্রশংসা করে এবং খনি শিল্পের ক্ষেত্রে একে এক দায়িত্বশীল খনির উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু এক বছর পরে খনি এলাকার আশে পাশে ছড়িয়ে পড়া সায়ানাইড বিষ এলাকায় ব্যাপক পরিমাণ মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় [2], যার ফলে সেখানকার জেলেদের জীবিকার উপায় ধ্বংস হয়ে যায়। রাপু-রাপু, বিকল এলাকার একটি ছোট আকারের দ্বীপ, যা মূলত এক পৌর এলাকা, এটি ফিলিপাইনসের পূর্বাংশে অবস্থিত। .

এন্তোনিও কাসিতাস, এক বড় মাপের কৃষক নেতা এবং পরিবেশবিদ একটিভিস্ট, বিকল্প ধারার এক সংবাদ ওয়েবসাইট বুলাতলাত অস্ট্রেলিয়ার খনি কোম্পানি লাফায়েত্তের কার্যক্রমের ফলে দ্বীপের উপর যে প্রভাব পড়ছে [3] সে বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে।:

এক সময় রাপু-রাপু দ্বীপটি ছিল এতটাই সুন্দর, যে দেখে মনে হত যেন এক স্বর্গ। সেখানে আমাদের জীবন ছিল খুব সাধারণ-আমরা প্রকৃতির মাধ্যমে জীবন ধারণ করতাম, আর আমরা সেভাবে এর যত্ন নিতাম, যাতে-এর ক্ষতি না হয়, কারণ এটা হচ্ছে আমাদের জীবিকার উৎস এবং আমাদের টিকে থাকার মাধ্যম। যখন এই সমস্ত খনি কোম্পানিগুলো এখানে এল, সবকিছু পাল্টে গেল। এখন ভার্চুয়ালি রাপু-রাপু দ্বীপের ৯০ শতাংশ অংশ এই পরিবেশ বিনষ্টকারী এই কোম্পানির দখলে, এক সময় যা ছিল স্বর্গ রাজ্য এখন তা এক পতিত এলাকা।

মারিন্দুকুয়ে দ্বীপের এক অংশ যা ফিলিপাইনস দ্বীপপুঞ্জের মাঝখানে অবস্থিত, তা ১৯৯৬ সাল থেকে খনির বিষাক্ত বর্জ্যের দ্বারা ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়ছে, যার কারণ উঁচু করে তৈরী করা খনির বাঁধের ভেঙ্গে পড়া, আর মারকোপার কোম্পানি এই বাঁধটি পরিচালনা করে আসছে (উপরে এর ভিডিও [4] দেখুন)। মারকোপার এই বেদনাদায়ক ঘটনা [5] ছিল সে সময়ে দেশটির সবচেয়ে বিপর্যয়কর খনি দুর্ঘটনা। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং এই দ্বীপের বাসিন্দা জোসেপেন ইজরায়েল লাবান, ফেসবুকে লিখেছে [6] যে এই বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে খনি কোম্পানি ব্যর্থ হয়েছে [7]:

১৮ বছর এবং চারজন রাষ্ট্রপতির মেয়াদকালে, কানাডার খনি কোম্পানি পালসের ডোমা/ বারিক গোল্ড না করেছে নদীটিকে পরিশুদ্ধ করেছে, না করেছে স্থানীয়দের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। আমার জন্য বিষয়টি ব্যক্তিগত। বোয়াক নদী থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বের পথ, এমন এক এলাকায় আমার বেড়ে ওঠা, মারিন্দুকুয়েতে যাওয়ার সময় যখন আমি নদী পথ পাড়ি দেই, তখন আমার মনে পড়ে যায় যে ফিলিপাইনসে কোন ন্যায়বিচার নাই। জনতার জন্য নয়, বরঞ্চ আমরা যারা মারিন্দুকুয়ের অধিবাসী তাদের জন্য। আমরা এটা কোনদিন ভুলবো না।

Open pit mining in Manicani Island. Photo by Kalikasan People's Network for the Environment, used with permission

মানিকানি দ্বীপের এক উন্মুক্ত খনি। ছবি কালিকাসান পিপলস নেটওয়ার্ক ফর দি এনভায়রমেন্ট-এর, অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত।

পূর্ব ভিসায়াসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের ঘটনাটি ছিল টাইফুন হাইয়ান (স্থানীয়ভাবে যা ইয়ালান্ডো [8] নামে পরিচিত)–এর আঘাতে সৃষ্টি ধ্বংসযজ্ঞ, যা ২০১৩ সালে আঘাত হেনেছিল। কিন্তু খনি কার্যক্রমের কারণে এই এলাকায় অন্য বেশ কয়েক ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। ক্ষুদ্র দ্বীপ মানিকানে, নাগরিকরা সেই খনি কোম্পানির আবার ফিরে আসার বিরোধীতা করছে যারা তাদের কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে দ্বীপটির প্রাকৃতিক সম্পদের প্রচণ্ড ক্ষতি করেছে। খনির আগমনের এই বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বোরোনাগানের ক্যাথলিক চার্চের যাজকদের প্রধান, যারা একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যে বিবৃতিতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে [9] যে, এতে বলা হয়েছে,”খনির পরিধি বাড়তে থাকার ঘটনায় বধির এবং অন্ধ হয়ে বসে থাকা যায় না, যেখানে আমাদের নাগরিকরা নিজেদের কারণে নয়, অন্যের কাজের ফলে নিজেরা যন্ত্রনা ভোগ করেছে”।

Open pit mining in Homonhon. Photo by Kalikasan People's Network for the Environment, used with permission

হোমোনহোন-এ উন্মুক্ত কয়লা খনি। ছবি কালিকাসান পিপলস নেটওয়ার্ক ফর দি এনভায়রমেন্ট-এর। অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।

পূর্ব ভিসায়াস-এর আরেকটি দ্বীপ হোমোনহোনে এক খনির খনন কার্য শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে এলাকা এক নোংরা দূষণের শিকার, যা এখন দূষণমুক্ত হওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৩ সালে এখানে খনির কার্যক্রম শুরু হয় এবং এটি এই এলাকায় পরিবেশ ধ্বংসের এক চিহ্ন রেখে যায়, যা এখন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে উক্ত খনির পরিধি আরো বাড়ানো নিয়ে তীব্র বিরোধিতার জন্ম দিয়েছে। বুলাতলাত সংবাদপত্র দ্বীপে এই ঘটনার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে:

এই দলটিকে অপূর্ব সমুদ্রতট অভ্যর্থনা জানায়, কিন্তু যখন সাংবাদিকরা পাহাড়ের কাছে গিয়ে পৌছায়, তখন তারা আগুনের চিহ্ন দেখতে পায়, যা পানি ছাড়াই নিভে গেছে, খনি এলাকার ১০টি গভীর খাদের কয়েক মিটারের মধ্যে বালি নরম হয়ে এসেছে।

বুলাতালাত পত্রিকায় এক স্থানীয় নেতা বলছে যে এখানকার বাসিন্দারা জানাচ্ছে “আমরা এই প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে এবং যদি তাদের কার্যক্রম স্থগিতের জন্য কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরীর প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা তাই করব”।

মারিন্দুকুয়ে, রাপু-রাপু, মানিকানি এবং হোমোহোন-এর পরিবেশ দূষণ এবং সেখানকার অধিবাসীদের জীবিকা ধ্বংসের ফলে অন্য ছোট ছোট দ্বীপের স্থানীয় নেতাদের বড় আকারের কোন খনির কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোম্পানিকে তাদের বসবাসের এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়ার আগে দুবার ভাবা উচিত।