এ গল্পগুলো একসঙ্গে যুক্ত করা এবং সম্পাদনা করেছেন জর্জিয়া পোপেলওয়েল, এলেরি রবার্টস বিডল, এবং গ্লোবাল ভয়েসস কমিউনিটি.
উন্নত দেশগুলোর জন্য বিদ্যুৎ সমস্যা বিশেষ করে বড় আকারের লোডশেডিং সমস্যা খুবই নগন্য। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ১৯৬৫ সালে ১৩ ঘন্টার জন্য নিউ ইয়র্ক শহরে বিদ্যুৎ সমস্যা ছিলো যে ঘটনা নিয়ে হলিউডে তৈরি হয়েছে সিনেমা। এবং আজ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও, ইয়েমেনের বিমান ধর্মঘট, সিয়েরা লিউনে ইবোলা সম্পর্কিত লক-ডাউন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক নীতিমালা ইত্যাদি বিষয়গুলো আমস্টারডামের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে ৩০ সেকেন্ড দেরিতে হয়েছে।
এনপিআর এবং আমস্টারডামের তথ্য অনুযায়ী এ সমস্যাটি ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়েছে যার ফলে ইউরোপের চতুর্থ বড় বিমানবন্দরের বিমান উঠানামার কাজগুলো অন্য বিমানবন্দরে করতে হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং লোডশেডিংয়ের ঘটনা অহরহ ঘটছে যা অনেকটা “ডগ বাইটস ম্যান” ক্যাটাগরির মতো। তাদের অবস্থা এমন যে, বিদ্যুৎতের এমন সমস্যার মধ্য দিয়েই তাদের প্রতিদিনের জীবন পরিচালিত হচ্ছে। অবস্থা এমন হয় যে, বিদ্যুৎ চলে গেছে, পানির তোলার মেশিন বন্ধ হয়ে গেছে, তাপমাত্রা এমন ভাবে বেড়েই চলছে যে টেকা মুশকিল। এবং অবস্থাটা এমন হয় যে, হয় ইউক্রেনের মতো ঠাণ্ডায় জমে যেতে হয় না হয় অথবা বাংলাদেশের মতো উত্তপ্ত গরমে ফুটন্ত হয়ে যেতে হয় এবং ইন্টারনেট রাউটারও কাজ বন্ধ করে দেয় এমন অবস্থায়।
আমস্টারডামের এ গল্পের বিষয়ে, গ্লোবাল ভয়েসেস কমিউনিটি সদস্যরা বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং লোডশেডিং বিষয়ে তাদের দেশের অবস্থা নিয়ে মতামত (এবং কিছু মজার ঘটনা) দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই অভিযোগ করেছে এ আলোচনা চলাকালীন ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই তারা লোডশেডিং সমস্যা পড়েছে।
মিশরের একজন লেখক যিনি মিনায়া, মিশর থেকে লিখেছেন, ‘আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই ফেরত আসছি’ বলে একটি বার্তা এসেছে অনেকক্ষণ আগে যখন লোডশেডিং চলছিল। তিনি লিখেছেন, ‘বার্তাটি পেয়ে আমি বসে আছি অন্ধকারে অনেক সময় ধরে, এটা আসলে মজার অভিজ্ঞতা।” রাইজিং ভয়েসের পরিচালক এডি অ্যাভিলা, পুরো এ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়টি মানচিত্রের সাহায্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনার সারসংক্ষেপ:
রেজওয়ান, দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক
স্থান: ঢাকা, বাংলাদেশ
জনসংখ্যা: এক কোটি ৫০ লাখ
সর্বশেষ বিদ্যুৎ সমস্যা: আজ বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ সময় (৪.৫ ঘন্টা আগে)
বিদ্যুৎ সমস্যা কেমন হয়: দিনে একাধিকবার অথবা সপ্তাহে কয়েক বার
নিত্যদিনের দিনযাপনে কি সমস্যা হচ্ছে:
“তীব্র গরম আবহাওয়ায় ঘরে থাকা অসম্ভব ব্যাপার।”
নিহান গুনেলি, লেখক
স্থান: ইস্তানবুল, তুরস্ক
জনসংখ্যা: এক কোটি ৮০ লাখ+
সর্বশেষ বিদ্যুৎ সমস্যা: গতকাল
বিদ্যুৎ সমস্যা কেমন হয়: প্রায় প্রতিদিন
নিত্যদিনের দিনযাপনে কি সমস্যা হচ্ছে:
“যদি আপনার নিজস্ব জেনারেটর সুবিধা না থাকে, তাহলে কাজ করা মুশকিল।”
ইসলাম সাঈদ আবদুল ওয়াহাব, লেখক
স্থান: মিনায়া, মিশর
জনসংখ্যা: ৪০ লাখ
সর্বশেষ বিদ্যুৎ সমস্যা: আজ — আমরা এ সমস্যার মধ্যেই চলছি।
বিদ্যুৎ সমস্যা কেমন হয়: প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা
নিত্যদিনের দিনযাপনে কি সমস্যা হচ্ছে: “আমরা পানি সমস্যায় পড়ে যাই, কারণ এখানকার বেশির ভাগ বাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্ট পানির মেশিনের সাহায্যে পানি পাওয়ার উপর নির্ভরশীল। এছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং অনেক সময় হাসপাতালের কর্মকাণ্ডও বিদ্যুৎ সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়।”
অ্যানি জামান, লেখক
স্থান: ফয়সালাবাদ, পাকিস্তান
জনসংখ্যা: ৩০-৪০ লাখ
সর্বশেষ বিদ্যুৎ সমস্যা: আজ ৫:১৫ মিনিট
বিদ্যুৎ সমস্যা কেমন হয়: প্রতি ১২ ঘন্টায় একবার
নিত্যদিনের দিনযাপনে কি সমস্যা হচ্ছে:
“এটা পানি সরবরাহ থেকে শুরু করে ক্যামেরা কিংবা মোবাইল চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা করছে। এছাড়া যেসব পরিবার ইউপিএস অথবা তেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করছে সেগুলো বাড়তি শব্দ করছে এবং উচ্চ শব্দে সমস্যা হচ্ছে। আমি ইতিমধ্যে ভাবছি এ নিয়ে আমি কথা বলা শুরু করবো।”
ম্যারি বোহনার, লেখক
স্থান: স্ট্রাসবার্গ, ফ্রান্স
জনসংখ্যা: ২৭৬,৭৫০
সর্বশেষ বিদ্যুৎ সমস্যা: ” ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে স্ট্রাসবার্গে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সমস্যা হয়েছে। তবে সেটি মাত্র ৩ মিনিট হয়েছে এবং এটা বড় কোন সমস্যা তৈরি করেনি। আমার স্মরণ অনুযায়ী আমি কখনোই স্ট্রাসবার্গে বড় ধরনের বিদ্যুৎ সমস্যা হতে দেখিনি।”
বিদ্যুৎ সমস্যা কেমন হয়: কখনোই হয়নি
নিত্যদিনের দিনযাপনে কি সমস্যা হচ্ছে: ” আমি কোন ভাবেই স্ট্রাসবার্গে বিদ্যুৎ সমস্যায় কখনোই পড়িনি। “
এর মধ্যে বেশির ভাগই লিখেছেন, এ সমস্যাটি প্রযুক্তি এবং কাজের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, এবং বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করাটাও বেশ ব্যায়বহুল এবং প্রতিদিনের কাজের জন্য পানি পাওয়াটা খুবই সমস্যার হয়। বৈরুতে বসবাসকারী লেখক এবং অনুবাদক থালিয়া রাহমে, লিখেছেন,
একজন লেবানিজ ব্যক্তি হিসেবে, বিদ্যুৎ সমস্যায় একদিনও পড়িনি এমন দিন মনে আসছে না। সকল লেবানিজ বিদ্যুৎতের জন্য দুইবার অর্থ প্রদান করে। প্রথম, বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে এবং দ্বিতীয় বিল দিতে হয় জেনারেটর পরিচালনাকারীদের। আমরা প্রতি ৫ অ্যাম্পিয়ারের জন্য অর্থ দেই। আর এ ৫ অ্যাম্পিয়ারের জন্য আমাদের খরচ হয় ১০০ ডলার। ভাগ্যবান সেইসব ধনী ব্যক্তিরা যারা, ১০ অ্যাম্পিয়ার কিংবা তার চেয়েও বেশি নেয়ার সমর্থ রাখে। গরমের সময়, ৫ অ্যাম্পিয়ারই কয়েকটি বাতি জ্বালানো, রেফ্রিজারেটর চালানো যায়, যার ফলে খাবার নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়। গোসল করার জন্য গরম পানির কথা তো ভাবাই যায় না!
চিন্তা করুন গরমের সময় গভীর রাতে বিদ্যুৎ নেই এবং আপনি চাইলেও এসি চালাতে পারছেন না। এরপর একটা নির্দিষ্ট সময় পর যখন জেনারেটরও আর বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারছে না তখন মশা, ঘুমের অসুবিধাসহ আরো অনেক ঝামেলা শুরু হয় — বিষয়টা সত্যিই বেশ রোমান্টিক!
এবং হ্যাঁ, এটা বৈরুতে প্রতিদিনই হয়। তবে বিদ্যুৎ থাকা না থাকার সময়টা হয়তো এদিক-ওদিক হয় কিছুটা। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকার চেষ্টা করি কখন কাপড় ইস্ত্রি করা হবে আর কখন গোসল করা হবে। এখন সময় ৬:১৫, আর একটু পরেই বিদ্যুৎ চলে যাবে।
এটাই আসলে আমাদের জীবনের গল্প। চাইলে এখানে পানি সমস্যার কথাটিও তুলে ধরা যায়। আমি প্রায়ই সময় গোসল করার জন্য হোটেলে চলে যাই। আমরা এটা প্রয়োজন হয় কারণ আমার চুলের কারণে। চুল নিয়মিত গরম পানিতে পরিস্কার না করলে আমার সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য বাসিন্দাদের এ সমস্যাটি নিয়েই চলতে হয়।
গ্লোবাল ভয়েসের রুনেট ইকো সম্পাদক তানিয়া লোকোট, ১৯৯০ সালে লুহান্সক, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সমস্যার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন:
বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়টি এখানে অনেকটা ‘মজার হরতাল'র মতো, কারণ এ কাজটি পুরো শহরের একাধিক বার হয়। যার ফলে আমার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভিন্ন সময়ে আসে যায়। যার ফলে আমরা বুঝতে পারি এক এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্য এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে। সে অনুযায়ী আমরা তৈরি থাকি রান্না, কাপড় পরিস্কার, বিদ্যালয়ের কাজ ইত্যাদি করার বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে এসি আমাদের জন্য বড় বিষয় নয় কারণ এসি কারোরই নেই 🙂
পারনিল বেরেন্ডটসেন, ডেনমার্কের একজন লেখক যিনি সাংবাদিক হিসেবে পূর্ব আফ্রিকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, তিনি দার-এস-সালামের বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে লিখেছেন:
তানজানিয়ায় আমি আমার দিনটি পার করেছি ভিন্ন ভাবে। কাজের দিনের শেষে, আমার মনে আছে, সন্ধ্যায় যখন দার-এস-সালামে আমি যাই দেখি বিদ্যুৎ সমস্যার চূড়ান্ত নানা বিষয়। ছোট ছোট দোকানগুলো চলছে জেনারেটরের সাহায্যে। বিদ্যুৎ সমস্যা তানজানিয়া বেশ প্রকট — যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সবচেয়ে আলোচিত এক বিষয়।
ইবাদান, নাইজেরিয়ার গ্লোবাল ভয়েসের লেখক ও প্রদায়ক নোয়াচুকু ইগবুনিকি, শেষ করেছেন এভাবে:
সত্যি বলতে কি, আমি এ বিষয়টি পড়ে হেসে ফেলেছি! আমার জন্মের পর থেকেই নাইজেরিয়ায় এ সমস্যা চলছে এবং তা এখনও বহাল আছে। আমার মনে হয়, আমি মারা গেলেও এখানে ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যাবে না।