
কাবুলের শাহ ই দো শামশিরা মসজিদ। ঘৃণ্য অপরাধ দেখার সাক্ষী হয়ে রইলো সুন্দর এই মসজিদ। ছবি তুলেছেন জন জাদা। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহার করা হয়েছে।
সতর্কীকরণ: পোস্টে সহিংস ছবি ও ভিডিও রয়েছে
আফগানিস্তানে কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার পর তার শরীরে আগুন দিয়েছে একদল উন্মত্ত জনতা। গত বৃহস্পতিবার কাবুলের শাহ ই দো শামশিরা মসজিদের কাছে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ে প্রায় হাজারখানেক জনতা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে দেশটির ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ঘটনার নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
উন্মত্ত জনতা ফারখুন্দা নামের ২৭ বছর বয়সী ওই নারীকে লাঠি দিয়ে আক্রমণ করে। তার বাবা-মা জানিয়েছেন, ফারখুন্দা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করেনি। তাছাড়া গত ১৬ বছর ধরে সে মানসিকভাবে অসুস্থ। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন:
They beat her to death and then threw her on the river bank and burned her. Firefighters later came and put out the fire and took the body.
তারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করার পর নদীর পাড়ে ফেলে রাখে। তারপর তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে দমকল বাহিনীর কর্মীরা এসে আগুন নিভিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলের কাছে অবস্থিত দোকানের এক কর্মী ক্ষুব্ধভাবে বলেছেন:
Before you take action you have to know what happened. Did she have psychological issues? Only when you know that can you take action. You have to abide by both sets of laws. She should have been subject to the laws of the state and of God. We have no shortage of enemies. How do we know there were not outside forces influencing her?
কোনো কাজ করার আগে আপনার জানা দরকার আসলে কী ঘটেছিল। তার কী মানসিক সমস্যা ছিল? আপনি ঘটনা জানলে তবেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। উভয় আইনের প্রতি আপনাকে বিশ্বস্ত থাকতে হবে। তাকে রাষ্ট্র এবং ঈশ্বরের আইনের অধীনে থাকতে হবে। আমাদের শত্রুর অভাব নেই। আমরা কীভাবে জানতে পারবো, বাইরের কেউ তাকে উৎসাহী করেনি?
ফারখুন্দাকে উন্মত্ত জনতার পেটানোর ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
আফগানিস্তান এবং বিশ্বজুড়েই এ ঘটনার মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সেলিম জুবায়ের নিচের ছবিটি টুইটারে শেয়ার করেছেন, সেখানে ফারখুন্দার রক্তাক্ত মুখ দেখা যাচ্ছে।
Feeling bad, People in Kabul burn this woman, who was accused of burning Quran pic.twitter.com/XtEL2HZ47H
— Salim Zubair (@salim8403) March 19, 2015
খুব খারাপ লাগছে। কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে কাবুলের মানুষ এই নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে।
আহমাদ মুখতার নামের একজন আফগান সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত উন্মত্ত জনতা কর্তৃক ফারখুন্দাকে পিটানোর একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।
Shocking video from todays mob that killed a woman who allegedly burned copies of Quran inside a shrine #Kabul https://t.co/kGpzlyglqc #AFG
— Ahmad Mukhtar (@AhMukhtar) March 19, 2015
দু:খজনক ভিডিও। কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে উন্মত্ত জনতা আজ পবিত্রস্থানের ভিতরে এক নারীকে হত্যা করেছে।
অন্য একটি টুইটে মুখতার লিখেছেন:
What happened in #Kabul today was absolutely against the law, Sharia law and does NOT represent Muslims in in Afghanistan. #AFG
— Ahmad Mukhtar (@AhMukhtar) March 19, 2015
আজ কাবুলে যা হলো তা অবশ্যই রাষ্ট্রীয় আইন, শরীয়া আইনের পরিপন্থী। এটা আফগানিস্তানের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
ওয়াশিংটন ডিসির আফগান-আমেরিকান সাংবাদিক জিলা নাসেরি পোস্ট করেছেন:
I am furious how cruelly a mentally sick #Afghan #woman burned alive in #Kabul,what's diff b/w her burning Quran with men burning her alive?
— Zheela Nasari (@ZheelaJ) March 19, 2015
আমার প্রচণ্ড রাগ হয়েছে। কীভাবে মানসিকভাবে অসুস্থ আফগান নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে পারে? কোরআন পোড়ানোর সাথে তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মধ্যে পার্থক্য রইলো কই তাতে?
সেলিম জাভেদ একটি কার্টুন পোস্ট করেছেন। এতে বর্বরতা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে:
Afghan cartoonist reacts to burning of a mentally ill woman to death in Kabul by an angry mob over Quran burning. pic.twitter.com/mrA8xQJH5D
— Saleem Javed (@mSaleemJaved) March 19, 2015
কাবুলে কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে মানসিকভাবে অসুস্থ নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আফগান কার্টুনিস্টরা।
ফারজাদ লামি ঘটনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি ছবি টুইট করেছেন, সেখানে পুলিশ এবং উন্মত্ত জনতাকে ফারখুন্দার মরদেহ পোড়ার দৃশ্য দেখতে দেখা যাচ্ছে:
SHAME: Kabul police watch after people in downtown Kabul burned a mentally ill woman allegedly over burning Quran. pic.twitter.com/OaWoj10uFV
— Farzad Lami (@FarzadLameh) March 19, 2015
কলঙ্কজনক ঘটনা: জনতার সাথে কাবুল পুলিশও কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে মানসিকভাবে অসুস্থ নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখছে।
আফগান সাংবাদিক এবং অপিয়াম নেশন: চাইল্ড ব্রাইড, ড্রাগ লর্ড অ্যান্ড ওয়ান উইমেন জার্নি থ্রু আফগানিস্তান বইয়ের লেখক ফারিবা নাওয়া-কে ঘটনাটি বেশ নাড়া দিয়েছে। তিনি তার টুইটারে লিখেছেন:
Local Afghans shocked by barbarism that killed and burned woman in Kabul. Let's see if the shock will translate to action. #Afghanistan
— Fariba Nawa (@faribanawa) March 20, 2015
কাবুলে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার করার পর তার মরদেহে আগুন দেয়ার ঘটনাটি স্থানীয় আফগানদের বেশ নাড়া দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই নাড়া কোনো গন্তব্যে পৌঁছায় কিনা!
আক্রমণকারীর দলে শরাফ বাঘলানি নামের একজন লোক ছিলেন। ঘটনার পরে তিনি তার ফেসবুকে গর্বের সাথে লিখেন:
سلام مسلمانان امروز ساعت ۴ عصر زن بی دین قرآن شریف را در زیارت شاهدوشمشیره به آتش زد و بعدتوسط مردم دین دار کابل به شمول خودم اول کشته وبعد آتش زده شد دوزخ جایش انشا الله.
মুসলিম ভাইবোনেরা শুনুন, আজ বিকেল ৪টায়, এক নাস্তিক নারী শাহ ই দো শামশিরায় কোরআনে আগুন দেয়। আমি-সহ অন্যান্য জনতা প্রথমে তাকে হত্যা করি, পরে তার মরদেহে আগুন দিই। নরকে তার স্থান হোক।
নিচের ছবিতে তার মূল পোস্ট দেখা যাচ্ছে। অপরাধ সংঘটনের সময় ছবি নেয়া হয়েছে। বাঘলানিকে এখনো আটক করা হয়নি।

ঘটনার পরে শরাফ বাঘলানির পোস্ট। ছবি নেয়া হয়েছে রিপাবলিক অব সাইলেন্স ফেসবুক পেজ থেকে।
আফগানিস্তানের হজ্জ্ব ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ওই নারী যদি মুসলিম না হন, আর ইসলামিক নিয়মনীতি অমান্য করেন, তাহলে তিনি উন্মত্ত জনতার কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাবেন না।
ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন সাধারণ আফগানরা ফার্সি নববর্ষ নওরোজ পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঘটনাটি তাদের বেশ ধাক্কা দিয়েছে।