একদল স্বেচ্ছাসেবক এবং নাগরিক সাংবাদিক ফিলিপাইনের ইলোইলো প্রদেশের এসতানিসয়া এলাকার গ্রামবাসীদের ঘুরে দাঁড়ানো এবং তাদের সংগ্রামের কাহিনী নথিবদ্ধ করছে, মূলত যে এলাকা ২০১৩ সালে টাইফুন হাইয়ান-এর (স্থানীয় ভাবে যা ইয়োলান্ডা নামে পরিচিত) আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
ফিলিপাইনের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত হাইয়ান সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন এবং এর আঘাতে ৬,০০০ জন নাগরিক নিহত হয়, মূলত যা সামার এবং লেয়েতে নামক দ্বীপের উপর দিয়ে বয়ে যায়। এছাড়াও ইলোইলোর মত অন্যান্য দ্বীপেও এটি আঘাত হানে, কিন্তু এই ঘটনায় সেখানে ক্ষতিগ্রস্থদের দুর্দশা খুব কমই মূল ধারার প্রচার মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। বেশীর ভাগ ত্রাণ সংস্থা অথবা বিদেশী সরকার লেয়েতেতে সাহায্য প্রদানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে, এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল এখানে আছড়ে পড়ে। এদিকে এই টাইফুনের ধ্বংস সাধনের পরে প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এসতানসিয়ার মত দ্বীপের প্রতি খুব সামান্য মনোযোগ প্রদান করা হয়েছে অথবা এখানে খুব সামান্য সাহায্য পাঠানো হয়েছে।
এসতানসিয়ার অবস্থান উত্তর ইলোইলোতে, যা এক মাৎস্য বাণিজ্য কেন্দ্র। ৮ নভেম্বর ২০১৩-এ হাইয়ান-এর আঘাতে এই এলাকার প্রায় সকল মাছ ধরার নৌকা ভেসে যায়। একই সাথে এটি এক পাওয়ার বার্জের ক্ষতি করে, যার ফলে এর বাঙ্কার থেকে প্রায় ৮০০,০০০ লিটার তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফিলিপাইনের অনেক নাগরিকের কাছে অজানা-হাইয়ান এবং তেল ছড়িয়ে পড়ার মত দুটি বিপর্যয়- একই দিনে এসতানসিয়ায় আঘাত হানে।
সরকারি সাহায্য এসেছিল, তবে তা এসেছিল অনেক দেরিতে এবং তার পরিমাণ ছিল খুব অপ্রতুল। তবে এই অপেক্ষার সময়, নাগরিকরা নিজেদের সংগঠিত করে এবং সমবেত হয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। ম্যানিলা এবং দেশের অন্য বিভিন্ন অংশে থেকে চার্চ, বিদ্যালয়, এবং বেসরকারি সংস্থা ত্রাণের জন্য অর্থ এবং বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে সরাসরি এসতানসিয়ার বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেয়।
হাইয়ান-এর এই বেদনাদায়ক ঘটনার পর, এসতানসিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং বাড়িঘরের পুনর্নিমাণের সরকারি ব্যর্থতা নিয়ে অনেকে এখনো অভিযোগ করে যাচ্ছে। অনেক বাসিন্দাকে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়নি, যা তাদের জীবিকার উপায় ধ্বংস করে দিয়েছে।
টাইফুন ও তেল ছড়িয়ে পড়ার মত বিপর্যয়ের শিকার এসতানসিয়ার বাসিন্দাদের ন্যায় বিচারের দাবি এবং সাহায্যের জন্য সংগ্রাম ভয়েসেস অফ হোপ নামের প্রকল্প নথিবদ্ধ করছে, যা ২০১৪ সালে রাইজিং ভয়েসেস-এর অনুদান লাভ করেছে।
ভয়েসেস অফ হোপ–এর একজন স্বেচ্ছাসেবক মা আলজানে কারাজোসা, ঘূর্ণিঝড় হাইয়ান-এর আঘাত হানার এক বছর পূর্তিতে এসতানসিয়ার বাসিন্দাদের ন্যায়বিচারের দাবীকে তুলে ধরে :
এসতানসিয়াহানোসরা (এসাতানসিয়ার বাসিন্দারা) সাহায্যের জন্য মাথা কুটে মরছে। তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে যারা বিপর্যয়ের শিকার তারা ন্যায় বিচারের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু সরকার তার নিজের জনগণের আবেগের বেলায় চোখ বন্ধ ও কান বন্ধ করে রয়েছে এবং সে নিষ্ঠুরের মত আচরণ করেছে। কি ভাবে সরকার তার নিজের জনতাকে বেদনা এবং যন্ত্রণা ভোগ করতে দিচ্ছে?
বিপর্যয় পরবর্তীতে মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে বাসিন্দাদের সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েক ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন নাট্য কর্মশালা এবং চিকিৎসা বিষয়ক কর্মকাণ্ড। গত বছরের নভেম্বর মাসে “ন্যায়বিচারের দাবীতে আয়োজিত মিছিলে” ৫০০০ নাগরিক সমবেত হয় এবং ত্রাণ সামগ্রী ও অর্থ সামগ্রী প্রদানের সরকার যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল তা পূরণ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। ভয়েসেস অফ হোপস এই সকল কার্যক্রম নথিবদ্ধ করে, যার মধ্যে রয়েছে স্থানীয় শহরের সংগঠনের উদ্যোগে দুর্যোগ প্রস্তুতি কার্যক্রম অর্ন্তভুক্ত।
অবহেলার ফলে এসতানসিয়ার বাসিন্দারা এখন পর্যন্ত কষ্ট ভোগ করে যাচ্ছে এবং শহরের নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া তেল পুরোপুরি অপসারণে সরকার ব্যর্থ। তবে বাসিন্দারা প্রমাণ করেছে, এমনকি যখন সরকার ত্রাণ সরবরাহে অনেক ধীরে কাজ করছে, সেখানে তারা সঙ্ঘবদ্ধ হতে ও অন্য মাধ্যম থেকে সাহায্য সংগ্রহে কার্যকর ভাবে সংগঠিত হতে পারে।
নীচের এই ছবিটি এসতানসিয়ার বাসিন্দাদের সংগ্রামের প্রতীক। ঐক্য হচ্ছে এক রঙধনু যা নাগরিকদের সেই বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে যা তাদের জীবনকে ধ্বংস করে ফেলার মত এক হুমকি।