দি ওয়ার্ল্ডের জন্য এই প্রবন্ধ এবং রেডিও প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন জয়েস হ্যাকেল, যা নারীর জীবনের ভেতর দিয়ে (অ্যাক্রোস ওমেন্স লাইফস) নামক প্রকল্পের জন্য লেখা হয়েছে, আর এটি ১২ মার্চ, ২০১৫ তারিখে পিআরআই.অর্গ–এ প্রকাশিত হয়েছে ও লেখা বিনিময় চুক্তি অনুসারে এখানে পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে।
মেমোরি বান্দা হচ্ছে সেই সকল সৌভাগ্যবতীদের একজন।
১৮ বছরের মেমোরি বান্দা সেই চক্র থেকে পালাতে সক্ষম হয়, যা আফ্রিকার দক্ষিণে অবস্থিত মালাউয়ির অর্ধেকের বেশী মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে কনে এবং বেশীর ভাগ সময় মা-এ পরিণত হতে বাধ্য করে।
কিন্তু মেমোরি বান্দার বোন ততটা সৌভাগ্যবতী ছিল না।
মেমোরির বোন মার্সির বয়স যখন ছিল মাত্র ১১ বছর, তখন সে এখানকার প্রথাগত যৌন “শুদ্ধি উৎসব”-এর সময় গর্ভবতী হয়ে পড়ে, যে উৎসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে কিশোরী মেয়েদের নারী হয়ে ওঠার এবং বিবাহের জন্য প্রস্তুত করা। মার্সি যার দ্বারা গর্ভবতী হয়, তাকে সে বিয়ে করতে বাধ্য হয়, কিন্তু তাঁর এই বিয়ে টেকেনি, এমনকি তার পরবর্তী বিয়েটাও। এখন মাত্র ১৬ বছর বয়সে মার্সি তিন সন্তানের জননী, আর তার শিক্ষাও যৎসামান্য, যার ফলে তার যে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, তা এখন তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
এখন থেকে কয়েক বছর আগে, গার্লস এমপাওয়ার নেটওয়ার্ক (নারীর ক্ষমতায়ন কেন্দ্র) নামক এক সংস্থার সাথে মেমোরির পরিচয় ঘটে, যারা কয়েক বছর ধরে দেশটির সংসদের যাতে বাল্যবিবাহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বয়ং এক কিশোরী হিসেবে, মেমোরি তার গ্রামের অন্য মেয়েদের নিজের ভাবনাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাদের উদ্বুদ্ধ করাতে সক্ষম হয়। এই দলের লিখিত কর্মশালা ফলাফল হচ্ছে দূর্দান্ত একগুচ্ছ বিবৃতি, যাকে অভিহিত করা হয়েছে “ আমার ইচ্ছেমত সময়ে, আমার হবে বিয়ে!” নামে। মেমোরি এবং এই দলটি মালাউয়ির বাল্য বিবাহে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করেছেঃ স্বয়ং শিশুদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি।
মেমোরি বিশ্বাস করে যে ভাবে দেশ জুড়ে বিস্তৃত বাল্যবিবাহ এক প্রথায় পরিণত হয়েছে, মেয়েদের এই সকল সাক্ষ্য, আইন প্রণেতারা যে এই বিষয়টিকে অস্বীকার করে, তার ইতি টানতে বাধ্য করবে। মেমোরি বলে “ তারা ধরা পড়ে গেছে”। মালাউয়িতে এক নতুন আইন প্রণয়নের জন্য তদবির করছে যে আইনে বিয়ের বৈধ বয়স বাড়িয়ে ১৮ বছর করা হয়েছে। পাঁচ বছরের এক বিতর্কের পর, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মালাউয়িতে এই আইন পাশ হয়েছে।
মেমোরি বলছে যে এই আইনের প্রয়োগ হচ্ছে এখন মূল বিষয়। “এটা অনেক বড় এক পার্থক্য গড়ে তুলবে এবং বড় ধরনের প্রভাব তৈরী করবে, কিন্তু তা সম্ভব হবে কেবল এই কর্মসূচিকে ভালভাবে প্রয়োগ করার মাধ্যমে, যাতে আরো বেশী বেশী নাগরিক নতুন এই আইনের মাধ্যমে এই বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠে।
সবচেয়ে বড় কথা, তার বোন মার্সির যখন বিয়ে হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর, একই সাথে এটি ছিল এক অবৈধ বিয়ে, কিন্তু তাতে ক্ষতি যা হওয়ার তা রুখতে পারা যায়নি। মেমোরি তার বোনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন সে তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন সে ত্যাগ না করে। মেমোরি বলে যে “ আমি বিশ্বাস করি, তার এখনো বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে”।
আর মেমোরি এখন মালাউয়ির সমাজের মাঝে এক নতুন দিগন্তের সূচনা দেখতে পাচ্ছে, যেহেতু দেশটির মেয়ে শিশুদের যৌনতা এবং তাদের অধিকার সম্বন্ধে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। সে জানে তার বোন নিজের সন্তানদের সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে না দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, যার মধ্যে দিয়ে সে নিজে গিয়েছে। মার্সির সবচেয়ে বড় মেয়েটির বয়স এখন পাঁচ বছর, মার্সির যে বয়সে বিয়ে হয়েছে এটা তার প্রায় অর্ধেক বয়সের সমান।
মেমোরি বলে “এই ছোট্ট শিশুটি জানে, তার মা কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে তার নিজের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে আরো বড় পরিসরে এক আশার জন্ম হয়েছে”।
যদি আপনারা মালাউয়িতে লিঙ্গীয় সমতার লড়াই এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ককে সাহায্য করতে, তাদের তাদের কাজ সম্বন্ধে জানতে চান, তাহলে তাদের ওয়েবসাইটে (http://www.genetmalawi.org/) প্রবেশ করতে পারেন।