মায়ানমারের প্রাক্তন রাজধানী ইয়াঙ্গুনে ছাত্র বিক্ষোভ দমনে সরকার যে নির্মম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তার নিন্দা জানিয়ে আঁকা কার্টুন ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।
নায়ানহিলেন [2] (মস্তিষ্কতরঙ্গ) নামক ফেসবুক পাতা এই সকল কার্টুনের কয়েকটি সংগ্রহ করেছে, যা ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে ২০০ ছাত্র ও একটিভিস্টের উপর পুলিশ হামলা চালানোর [3] ঘটনার প্রেক্ষিতে দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে।
ইয়াঙ্গুনের নগর ভবনের সামনে তরুণ বিক্ষোভকারীরা মান্দালয় থেকে ছাত্রদের আগমনের অপেক্ষায়, যারা শিক্ষা সংস্কারের দাবীতে ২০ জানুয়ারি তারিখ সেখান থেকে দেশটির প্রাক্তন রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করে।
মান্দালয় থেকে ইয়াঙ্গুন অবধি এই ৪০০ মাইল দীর্ঘ এই মিছিলের [4] ঘটনায় দেশ ব্যাপী ছাত্রদের বিভিন্ন দাবীর প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে, যারা দাবি করেছে যে তারা সরকারের শিক্ষা আইন প্রত্যাখান করেছে [5]। সরকার গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই আইন পাশ করে। ছাত্রদের মতে নতুন এই আইন ক্যাম্পাসে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটাবে।
যত এই মিছিল বিভিন্ন মফস্বল ও বড় শহর অতিক্রম করতে থাকে, তত এটি আকারে বড় হতে থাকে। কিন্তু পুলিশ এবং সরকারের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিভিন্ন স্থানে এই যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা [6] সৃষ্টি করেছে অথবা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ভয় দেখিয়েছে।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সরকার ছাত্রদের সাথে এক আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করে [7], এদিকে ছাত্ররা তাদের ইয়াঙ্গুনে পৌছার অধিকার নিশ্চিত করার দাবী জানায়। তবে সরকার এই দাবি প্রত্যাখান করে এবং দেশের বিভিন্ন প্রধান প্রধান শহর থেকে ছাত্র মিছিল যাতে ইয়াঙ্গুনে আসতে না পারে তার জন্য বিভিন্ন স্থানে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার [8] এক আদেশ জারি করে। তবে ইয়াঙ্গুনের নিকটবর্তী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মিছিল এগিয়ে যেতে [9] সক্ষম হয়েছে।
এই মিছিলের সমর্থনে, ইয়াঙ্গুনের ছাত্ররা নগর ভবনের সামনে সমবেত হয়ে এই প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেওয়ার দাবী জানায়।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে সোয়াম আর শিন নামে পরিচিত সাদা পোশাকের একদল পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়, যাদের নামের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ক্ষমতার মালিক।
মায়ানমারের অনেক নাগরিকের কাছে সোয়াম আর শিন হচ্ছে নিছক সরকারি একদল গুণ্ডা, প্রতিপক্ষের সাথে হানাহানিতে লিপ্ত হওয়া এবং বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করার জন্য সরকার যাদের পোষণ করে। তারা তাদের হাতে যে লাল বাহু বন্ধনী পড়ে থাকে, তাতে লেখা থাকে “ দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত”, যা রাষ্ট্রীয় দমন এবং নিপীড়নের প্রতীক। ২০০৭ সালে জাফরান বিপ্লব [10] নামে পরিচিত বিপ্লবের সময় বিক্ষোভ দমনে কুখ্যাত নির্মম আচরণ এবং নিপীড়নের কারণে সোয়াম আর শিন সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে।
আশা করা হয়েছিল যে মায়ানমার নামক এই রাষ্ট্রটি তার তথাকথিত গণতান্ত্রিক রুপান্তরের প্রক্রিয়ার সময়ে এই ধরনের পুলিশ বাহিনীকে ক্রমশ অনেক বেশী অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগে আরো একবার তাদের ব্যবহার করা হয়েছে, যে হামলা ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার ঘটনায় পর্যবেশিত হয়।
অনেকে বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালানোর জন্য সাদা পোষাকের পুলিশের ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে। তরুণ এই সব বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের কারণে যারা সরকারের সমালোচনা করেছে তাদের মধ্যে কার্টুনিস্টরাও রয়েছে, যারা মগজতরঙ্গ [2] (নায়ানহিলেন) নামক ফেসবুক পাতায় সংগঠিত হয়েছে, যা অনেক নাগরিকের ক্ষোভের এবং সেনা সমর্থিত সরকারের রাজনৈতিক সংস্কার বিরুদ্ধে ক্রমেই ছিদ্রান্বেষী হয়ে ওঠার বিষয়টি তুলে ধরছে।
যেমন, কিয়াক থু রাইন নামক কার্টুনিস্ট সোয়াম আর শিনকে দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে।
কার্টুনিস্ট সাও নিয়াং হুতুত বিশ্বাস করে যে পুলিশ বাহিনীর অপব্যবহার হচ্ছে।
কার্টুনিস্ট আআও তাউঙ্গও তার এই ছোট আকারের কার্টুন কাহিনীর মাধ্যমে সরকারের আন্তরিকতা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।কার্টুনিস্ট কার লু পিয়ার ক্ষেত্রে বলা যায়, সে বিশ্বাস করে যে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।