মিসরের এল মাহাল্লা এল কুবরা অঞ্চলের শিশুদের একটি ভিডিও টেপ তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, কাঠের লাঠি দিয়ে খেলার সময় একটি শিশু অন্য শিশুকে আইএসআইএস ভঙ্গিতে “হত্যা” করছে। ভয়ঙ্কর এসব ভিডিও শেয়ার করার “প্রশংসনীয় গুণ” নিয়ে উত্তরের চেয়ে অনেক গুণ বেশি প্রশ্ন উঠেছে। এসব ভিডিওতে সন্ত্রাসী গ্রুপের অপরাধগুলোর বর্ননা দেয়া হচ্ছে, বিশেষকরে শিশুদের সাথে।
আল কায়েদা থেকে বেরিয়ে আসা একটি শাখা হচ্ছে আইএসআইএস। ইরাক এবং সিরিয়ার বৃহত্তর একটি অংশ দলটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। এটি মানসম্মত ভিডিও তৈরিতে বেশ পারদর্শী। ভিডিওগুলোতে দেখানো হয়, কি করে দলটির হাতে বন্দীদের শিরশ্ছেদ করা হয়। তাদের গ্রাফিক মতবাদ অনলাইন থেকে সরিয়ে নিতে ইঁদুর বিড়াল ধাওয়া খেলা সত্ত্বেও অনেকেই দলটির ভিডিওগুলো এখনও শেয়ার করে যাচ্ছেন।
এল মাহালা এল কুবরা ভিডিওটি “লিবিয়াতে আইএসআইএস” জঙ্গি দলটি ২১ জন মিসরীয় প্রচলিত খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী কর্মীকে শিরশ্ছেদ করার পর হয়তোবা তৈরি করা হয়েছে। এসব কর্মীকে লিবিয়াতে হত্যার প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় আগে অপহরণ করা হয়েছিল। সন্ত্রাসীরা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে একটি বিভীষিকাময় এবং রক্তাক্ত ভিডিও ইউটিউবে পোস্ট করেছে। ভিডিওটিতে জিম্মিদের শিরশ্ছেদ করা দেখানো হয়েছে। এটি মিসরে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। লিবিয়াতে আইএসআইএস এর বোমা বিস্ফোরণসহ বেশ কিছু ভিডিও দেখানো হয়েছে।
এল মাহাল্লা আল কুবরা মিসরের শিল্প প্রধান এবং কৃষি প্রধান একটি শহর। শহরটি নীল নদ বদ্বীপের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দামিয়েত্তা শাখার পশ্চীম তীরে অবস্থিত। এ শহরে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের বসবাস।
মিসরীয় ব্লগার শোকেইর তাঁর ৪৪১০ জন অনুসারীর উদ্দেশ্যে খুব সাধারন একটি মন্তব্য সহকারে ভিডিওটির একটি ছবি টুইট করেছেন। ছবিটিতে শিশুদের “আইএসআইএস” খেলা করতে দেখা যাচ্ছেঃ
العيال في المحلة بيلعبوا .. داعش pic.twitter.com/dXu6jchFKx
— Ahmed Shokeir (@Shokeir) February 20, 2015
মাহাল্লাতে শিশুরা (আইএসআইএস)… খেলছে।
তাঁর টুইটটি ইতোমধ্যে ১৫০ বার পুনরায় টুইট করা হয়েছে এবং এখনও চলছে।
তামের আবদো আমিন একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। ফেসবুকে মন্তব্য সহ ভিডিওটি ৮৬০০ বার দেখা হয়েছেঃ
قابل يا عم .. آدى تأثير فيديوهات داعش على مجموعة أطفال من المحلة الكبرى .. ذات مومنت لما العيال ف مصر تلعب داعش :))
এটি দেখুন! আল মাহাল্লা আল কুবরাতে আইএসআইএস এর ভিডিওর এমনই এক প্রভাব শিশুদের উপর পরেছে। মিসরে শিশুদের আইএসআইএস খেলার মূহূর্তটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওতে শিশুটি তাঁর “লোককে” অর্থাৎ অন্য আরেকটি শিশুকে হত্যা করতে নির্দেশ দেয়ার আগে আইএসআইএস কে যোদ্ধা হিসেবে বর্ননা করেছে। এমন যোদ্ধা যারা কোন ধর্ম অথবা জাতির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে না। শিশুটি বলেছেঃ
আমাদের কোন ধর্ম বা জাতি নেই। আমরা শিশু, নারী এবং বৃদ্ধদের শিরশ্ছেদ করি। আমরা নিচের কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিঃ (অশ্রাব্য) শহরের সকল তরুণকে শিরশ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত। এরপর হায় মানুষ, শিরশ্ছেদ করা হল!
মিসরীয় সাংবাদিক মুহাম্মাদ এল দাহশান এখনও ফেসবুকে সেই সূত্র ধরে রেখেছেন। তিনি সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন যখন শিশুরা কেবলই … শিশু ছিলঃ
একটা সময় ছিল যখন মিসরের শিশুরা আর সব জায়গার শিশুদের মতোই ছিল। তারা চোর পুলিশ খেলত। আর শেষ পর্যন্ত পুলিশরা জয়ী হত। আর তা দেখে আমি হাসতাম। আমি ভেবে নিতাম এটাই স্বাভাবিক।
তবে ২০১১ সালের পর আমি দেখলাম বাচ্চারা পুলিশ এবং প্রতিবাদকারী সেজে খেলা করত। আর তাদের খেলায় একজন পুলিশ প্রতিবাদকারীদের একজনকে হত্যা (আপনারা জানেন, সংরক্ষিত আসন) করত। এরপর কে বিদ্রোহ করবে এবং পুলিশ সেজে খেলা করা শিশুটিকে ধাওয়া করবে। আর তা দেখে আমি হাসতাম – কারন এটা বেশ মজার ছিল। তবে এটা কোন অংশে কম দুঃখেরও ছিল না। কারন শিশুরা কেবলমাত্র পুলিশের নৃশংসতা নিবিড়ভাবে অবলোকন করবে তা উচিৎ নয়।
আজ রাতে আমি শিশুদের সেই দায়েশ খেলার ভিডিওটি দেখলাম। সেখানে প্রথমে দেখানো বাচ্চাটি একটি বক্তৃতা (ঘটনাক্রমে সে আরবি ভাষায় বেশ ভালো যেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কথা বলছেন, তবে আমি অপ্রাসঙ্গিক মনে করছি) দিয়েছে। এরপর সে তাঁর সহকারীদের উদ্দেশ্যে দুইজন “জিম্মিকে” শিরশ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়।
আর এটা কোন খেলার আসর নয়, যেকোন উপায়েই যার একটি আনন্দময় সমাপ্তি টানা হবে। এ খেলায় কেউই জয়ী হয়নি।
এই দীর্ঘ সময়ে আমি যা দেখেছি তাঁর মাঝে এটি সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার।
পোস্টটিতে “বিরক্তিকর” থেকে শুরু করে “ঘটনার ভুল বিবর্তন” সব ধরনের মন্তব্যই করা হয়েছে।
আইএসআইএস অপরাধ প্রদর্শনকারী গ্রাফিক ভিডিওটি অবশ্যই পূর্নবয়স্কদের মনেও যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে এধরনের ভিডিওগুলো আমাদের শিশুদের উপর আসলেই কি ধরনের প্রভাব ফেলছে? আইএসআইএস অপরাধ নিয়ে শেয়ার করা এই ভিডিওগুলো কি শিশুদের আদৌ দেখা উচিৎ?