
ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে নেওয়া গাওদারা উপকূলের ছবি। তালহা বালোচের বেড়ে ওঠা এই গাওদারাতে (সূত্রঃ উইকিমিডিয়া কমন্স)।
পাকভয়েসেস-এর জন্য উর্দুতে এই কাহিনী লিখেছিলেন ফিরোজ যান। সালমান লতিফ এটিকে ইংরেজি প্রেক্ষাপটে সম্পাদনা করেন এবং কন্টেন্ট শেয়ারিং চুক্তি অনুসারে গ্লোবাল ভয়েসেস প্রকাশিত হয়েছে।
পাকিস্তানের করাচি নগরের লইয়ারিতে আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের হাতে এক তরুণ নিহত হয়, যে রেঞ্জার্স পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচির গুণ্ডাদের হানাহানি এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মত সমস্যা মোকাবেলায় গঠন করা হয়েছে । নিহত উক্ত ব্যক্তির পরিচয় পরে জানা যায়, এতে আবিষ্কার হয় যে তার নাম তালহা বালোচ।
লইয়ারি হচ্ছে করাচির সবচেয়ে পুরোনো, ঘনবসতি পূর্ণ এবং রাজনৈতিক এলাকা, তালহা “গাওয়াদারি” মাধ্যমে সে সেখানে গিয়েছিল।.আদতে সে ছিল এক জনপ্রিয় মুষ্টিযোদ্ধা, যে বালুচিস্তানের এক উপকূলীয় শহর গাওদার থেকে এসেছে।
পুলিশের বর্ণনা অনুসারে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে পুলিশের গুলিতে ২৪ বছর বয়স্ক তালহা নিহত হয়। এক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আফতাব নিজামানি দাবী করেন যে তালহা সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) তিন সদস্যের হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্ত ছিল এবং সে উজাইর বালোচের গুণ্ডাদলের সাথে জড়িত ছিল। লইয়ারিতে এই দলকে বর্ণনা করা হয় পাকিস্তান পিপলস পার্টির রাজনৈতিক মুখ হিসেবে, এ এমন এক পরিচয়, যার থেকে পিপিপি নিজেকে দূরে রাখতে অসমর্থ হচ্ছিল”।
তালহার নিজ শহরে তার এই মৃত্যুর ঘটনা অনেককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এই উপকূলীয় শহরে তালহার অনেক আত্মীয় জানায় যে তালহা ছিল এক দক্ষ মুষ্টিযোদ্ধা, কিন্তু সেখানে মুষ্টিযুদ্ধকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার মত সুযোগের অভাব রয়েছে। তারা দাবী করে যে তার সাথে সম্পর্ক ছিল এ রকম অনেকে তালহাকে বক্সিং-রিং প্রবেশের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল, কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি, তাকে হতাশার মাঝে ফেলে রেখে যায়। তালহার এক বন্ধু জানায় সে একই সাথে মুষ্টিযুদ্ধ ছেড়ে দেয় এবং দুই বছর ধরে লেগে থেকেও কোন চাকুরি জোগাড় করতে পারেনি। অবশেষে সে তার নিজের শহর গাওদার ত্যাগ করে এবং ২০০৮ সালে করাচিতে এসে হাজির হয় ও ঘটনাক্রমে লইয়ারিতে এসে বাস করতে শুরু করে।
বছরের পর বছর ধরে লইয়ারি অসাধারণ সব মুষ্টিযোদ্ধাদের জন্ম দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে লইয়ারির এক মুষ্টিযোদ্ধা হুসাইন শাহ অলিম্পিক গেমসে পাকিস্তানের হয়ে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। এই এলাকায় অনেক বক্সিং ক্লাব রয়েছে, কিন্তু সেখানকার কোচেরা আক্ষেপ করে যে সেখানে মুষ্টিযোদ্ধাদের জন্য সুযোগ সুবিধা খুব সামান্য।
লইয়ারিতে গুণ্ডা দলের মারামারির মাঝে প্রতিশ্রুতিশীল কোন মুষ্টিযোদ্ধার নিহত হওয়া এই প্রথম নয়। দারিদ্র্যের মাঝে আটকে যাওয়া এবং লইয়ারির কুখ্যাত গুণ্ডা দলের চলতে থাকা সংঘর্ষ, যার কারণে অনেকে অপরাধীর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয় এবং প্রায়শ নিজের জীবন দিয়ে তার মূল্য পরিশোধ করে। অতীতে স্থানীয় গুণ্ডা এবং রেঞ্জার্সের হাতে লইয়ারির অনেক মুষ্টিযোদ্ধা তার জীবন হারিয়েছে।
এই এলাকায় বিভিন্ন গুণ্ডাদলের একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকার কারণে লইয়ারি খুব কুখ্যাত এক এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা এখানে এক ছায়া যুদ্ধ চালাচ্ছে, যারা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য লইয়ারির গুণ্ডা দলগুলোকে ব্যবহার করা চেষ্টা করে। ডন পত্রিকা সংবাদ প্রদান করেছে ২০০৩-২০০৮ সালের মধ্যে লইয়ারির গুণ্ডা দলের পরস্পরের মারামারিতে ৫০০-৬০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। কেবল ২০১৩ সালে লইয়ারির বিশেষ হানাহানির ঘটনা ১০০-এর বেশী জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে।