- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

টোকিওর এক “স্যালারি ম্যানের” জীবনের একটি সপ্তাহ

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, জাপান, কৌতুক, নাগরিক মাধ্যম, ব্যবসা ও অর্থনীতি, ভাল খবর, শিল্প ও সংস্কৃতি, শ্রম
stu  in tokyo youtube screenshot [1]

“টোকিওর এক “স্যালারি ম্যানের” জীবনের একটি সপ্তাহ” [2] নামক ভিডিওর স্ক্রিনশট থেকে নেওয়া।

ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও আপলোডকারী ভ্লগার (ভিডিও ব্লগার) “স্টু ইন টোকিও [3]”-এর সম্প্রতি আপলোড করা ভিডিও ইউটিউবে ব্যাপক প্রদর্শিত হয়েছে, ইতিমধ্যে পাঁচ লক্ষের বেশী নাগরিক এই ভিডিওটি দেখেছে।

এই ভিডিওর বিষয়বস্তু কি? এর শিরোনাম টোকিওর এক “স্যালারি ম্যানের” জীবনের একটি সপ্তাহ, জাপানে বেতনভুক্ত কর্মচারীদের সাধারণ স্যালারি ম্যান (সাধারণ বেতনভুক্ত এবং স্থায়ী চাকরীজীবী, যারা ঘণ্টা হিসেবে নয়, চুক্তি অনুসারে মাসিক বেতনে কাজ করে) বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে:

স্টু তার ভিডিওতে জানান যে তিনি অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা বৃটিশ কোম্পানিতে চাকুরি করেন। এখানে সাধারণত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ হচ্ছে “গুরুত্বপূর্ণ মাস”, যে মাসগুলোয় একটু বেশী সময় কাজ করার প্রয়োজন হয়।

কাজে স্টু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে সে এক ভিডিও ডায়েরি তৈরী করবে যাতে সে প্রতিদিনের কাজের একটা হিসেব রাখতে পারে এবং কাজ শেষে আদতে তার হাতে ঠিক কতটা সময় অবশিষ্ট থাকে সেটা বের করতে পারে। তবে এর থেকে আদৌ কিছুর প্রাপ্তি ঘটেনি।

কিন্তু স্টু বলেন বিষয়টি এক ভাবে ঠিক আছে, নিঃসন্দেহে টোকিওতে এমন অনেক নাগরিক আছে যারা তাদের পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য সাড়া বছর এই ভাবে কাজ করে যায়। যদি আমারও এই একই ধরনের দায়িত্ব থাকত তারপরেও আমার পক্ষে এই ভাবে কাজ করে যাওয়া আমার কল্পনার বাইরে।

তবে জাপানে অনেক বেশী কাজ করার যে ধরন, তাতে এক পরিবর্তন আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

যদিও জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশটির সর্বোচ্চ শ্রম ঘন্টা কমিয়ে জন্য এক আইন প্রণয়নের চিন্তা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন [4], তবে জাপান সরকার এমন এক পরিকল্পনার চালু করতে যাচ্ছে, যে পরিকল্পনার অধীনে জাপানে বেতনভুক্ত কর্মচারীরা প্রতি বছর বেতন সহকারে পাঁচ দিনের ছুটি ভোগ করতে বাধ্য থাকবে [5]

এখন পর্যন্ত, জাপানের অনেক বেতনভুক্ত কর্মচারী ছুটি গ্রহণ না করলে তার বিনিময়ে অর্থ লাভ করে থাকে, যা তাদের ক্ষতিপূরণ প্যাকেজের এক অংশ। তবে খুব স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী এই সুযোগ গ্রহণ করে থাকে।

কর্মস্থলের কাজের সংস্কৃতির কারণে, জাপানের কর্মীরা প্রায়শ নিজেরা ছুটির সময় হোটেল বুক করতে অনিচ্ছুক, তারা এই ছুটির সুযোগ গ্রহণ করার সময় তাদের অসন্তুষ্ট সহকর্মীদের পেছনে রেখে যায়।

তবে জাপানে কর্মীরা যদি ছুটি নিতে চায়, তাহলে তারা সাধারণত জাপানের জাতীয় ছুটির দিনের সাথে মিলিয়ে বাড়তি একটি দিন ছুটি নিতে চায়।

বর্তমানে জাপানে জাতীয় ছুটির দিন ১৬টি, যা জি-২০ নামক সংস্থার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ [6] [যুক্তরাজ্যে জাতীয় ছুটির দিনের সংখ্যা ৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে–এর সংখ্যা ১০টি]

জাপানে জাতীয় ছুটির এই প্রাচুর্য, সম্ভবত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাওয়া কর্মচারীদের জন্য এক ক্ষতিপূরণ এবং এর ফলে একই পেশায় কাজ করা সহকর্মীদের চাপ ও তাদের ভ্রূকুটি এড়িয়ে ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নেওয়া সম্ভব হয়।

তবে, ১২ কোটি ৬০ লক্ষ নাগরিকের দেশে যখন জাতীয় ছুটির দিনে একই সময়ে সবাই একসঙ্গে ছুটি কাটাতে যায়, এর ফলে তখন রেলের প্রবেশ পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে, এক ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয় এবং বিমানবন্দরে এক দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে।

বেতন সহকারে বাধ্যতামূলক ছুটি ভোগের নতুন নিয়ম এই সমস্যা সমাধানের এক প্রচেষ্টা। একই সাথে আশা করা হচ্ছে যে এই ছুটি, দেশটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাতীয় ছুটির সাথে যোগ হয়ে দেশটির পর্যটনের বিকাশ ঘটাবে এবং ভোক্তাদের চাওয়াকে উৎসাহিত করবে, পাশাপাশি এটি ধীর গতিতে এগুতে থাকা জাপানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।