
আইএসআইএস নামক সংগঠনের “জাতীয় সঙ্গীত” নিয়ে মজার করার জন্য মিশরীয়রা বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করছে যেখানে গানের কথার তালে তালে নৃত্য শিল্পীরা তাদের কোমর দোলাচ্ছে।
যে কোন নিন্দনীয় সন্ত্রাসবাদী দলের মত আইএসআইএস (অথবা আরবিতে যাকে দায়েস নামে অভিহিত করা হয়)–এরও নিজস্ব পতাকা, রাষ্ট্র প্রধান এবং জাতীয় সঙ্গীত ধরনের এক সঙ্গীত রয়েছে। যখনই কোন আইএসআইএস –এর ভিডিওতে দলটিকে কারো শিরচ্ছেদ করতে, কোথাও বোমা মারতে অথবা কাউকে আগুনে জ্বালিয়ে দিতে দেখা যায়, তখনই এই সকল ভিডিওতে আরবী ভাষায় বেজে ওঠে “আল সালেল আল সাওয়ারেম”নামক গানটি, যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ক্ষুরধার তলোয়ারের ঝঙ্কার। এ গানের কথা শ্রোতাদের মনে ভয়ের বীজ বপনের উদ্দেশ্যে লেখা, যার কথাগুলো হচ্ছে এ রকম :
صليلُ الصوارم نشيدُ الأباة
ودربَ القتال طريق الحياة
فبين اقتحام يبيد الطغاة
وكاتمُ صوتِ جميلِ صداه
ধারালো তলোয়ারের ঝঙ্কার, গর্বিত মানুষের জাতীয় সঙ্গীত।
লড়াই করে জীবন ধারণ বাঁধতে হবে ঘর
ঘূর্ণিঝড় হয় আছি এবং স্বৈরাচারের জীবন প্রদীপ নেভাই
ভেসে আসে নিরব বন্দুকের অসাধারণ কণ্ঠস্বর।
এই সংগঠনের অন্য যে চারটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, এই গানটি তার এক অংশ, যার কোনটি একে অন্যের চেয়ে কম নির্মম নয়। তবে সম্প্রতি এই গানটি স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মাঝে এক রসিকতার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই গানটির এক রিমিক্স সংস্করণ তৈরী করা হয়েছে এবং নাচের ভিডিওর এক অংশ হিসেবে এই গানটি উক্ত ভিডিওতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে,আর তা করা হয়েছে আল কায়েদার সাথে যুক্ত আইএসআইএস নামক সংগঠনটিকে উপহাস করার জন্য, যে সংগঠনটি ইরাক এবং সিরিয়ার একটা বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। অন্যভাবে বলতে গেলে মিশরীয় এর মাধ্যমে বলছে যে তারা আইএসআইএসকে মোটেও ভয় পায় না।
কারিম ফারোক এই গানের এক রিমিক্স ভিডিও করেছে যা নিচে তুলে ধরা হল,যার সে নাম দিয়েছে সালেল আল সাওয়ারেম-পপ সংস্করণ।
https://www.youtube.com/watch?v=GZCT6013Skg
অন্যরা এই গানের সাথে বেলী ড্যান্স নামক নৃত্য করেছে, অথবা বেলি ড্যান্স নাচের জন্য বানানো ভিডিওতে অনেকে এই গানটিকে বাজিয়েছে:
https://www.youtube.com/watch?v=nrW8IWQjlVE
কেউ কেউ আবার মিশরীয় চলচ্চিত্রে যে সমস্ত নাচের দৃশ্য আছে, সেই সকল নাচের সাথে এই গানের ব্যবহার করেছে:
এই বিষয়ক আরো ভিডিও এই লিঙ্ক ও এই টুইটার হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
আইএসআইএস, ও যারা তাদের পক্ষাবলম্বন করে তাদের উপহাস করা নতুন কিছু নয়। এই দলে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে এক সাধারণ যুক্তি হচ্ছে দারিদ্র্য এবং নিপীড়নের কারণে আরব বিশ্বের নাগরিকদের এদের দলে যোগ দিচ্ছে। অনেক সময় কিছু কিছু নাগরিক এর চেয়ে একধাপ এগিয়ে যায়, তারা যা করতে চায় তা হচ্ছে এর কারণ হিসেবে নিপীড়নকে এক অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে, যেমন আবু আনাস ছদ্মনামে এই টুইটার ব্যবহারকারী টুইট করেছে:
عندما يسعى المستضعفون في الأرض إلى رفع الظلم والقهر، والقتل عن أنفسهم .. هم بذلك إرهابيون خطرون !!
#الدولة_الإسلامية دولة العز
#داعش.
— أبوأنس (@abuanas572) March 2, 2015
কি ভাবে এই ভাবনা ভাবা সম্ভব, যখন যে অন্যায়ের মাঝে বাস করা নিপীড়িতরা তা দূর করার চেষ্টা করছে, তখন তাদের এক বিপজ্জনক সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আইএসআইএস হচ্ছে গর্বিতদের এক রাজ্য।
কয়েক সপ্তাহ আগে,‘আমি দায়েশে যোগ দিতে ইচ্ছুক’ নামের আরেকটি হ্যাশট্যাগ প্রচণ্ড রকম ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে নাগরিকরা উপরের যুক্তিকে বিদ্রূপ করার জন্য “আমার ভাই আমার মোবাইল চার্জার নিয়ে গেছে এবং আমার ফোনের ব্যাটারি এখন চার্জ শূন্য। আমি দায়েশে যোগ দিতে চাই”–এই ধরনের লেখা টুইট করে।
আইএসআইএসকে নিয়ে এ ধরনের বিদ্রূপ করা কেবল মিশরের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, যুক্তরাষ্ট্রে সাটারডে নাইট লাইভ নামক টিভি অনুষ্ঠানেও আইএসআইএস সম্বন্ধে এ ধরনের এক চিত্র আঁকা হয়েছে।
ঘটনা যাই হোক, সন্ত্রাসী একটি দলকে বিদ্রূপ ও উপহাস করার বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবে দেখা যেতে পারে, কিন্তু অন্যদিকে মিশরে শিশুরা, তাদের স্বভাব সুলভ চোর পুলিশ খেলার বদলে, আইএসআইএস যোদ্ধা এবং তাদের শিকার নাগরিকদের ভূমিকা গ্রহণ করে খেলার দৃশ্যের ভিডিওর সংবাদ এক উদ্বেগ তৈরী করে।
এই বিষয়ে মানালিয়ানা মন্তব্য করেছে:
— Mrs. Nobody (@manaliana) March 2, 2015
আইএসআইএস কোন রসিকতা নয়।