
ছবি মিশ্রণ লেখিকার
ইরানের, দেশের ভেতরে গুগলের বিভিন্ন প্লাটফর্ম বন্ধ করা, সেগুলো আবার খুলে দেওয়া এবং কখনো কখনো সেগুলোকে আবার বন্ধ করে দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে।
ইরানের অভ্যন্তরে গুগলের না আছে কোন নিজস্ব অফিস, না আছে তার গুগল.ইর নামের ডোমেইন। কিন্তু ইরানের তথ্য যোগাযোগ মন্ত্রী আজ ঘোষণা প্রদান করেছেন যে দেশটি ইন্টারনেটের সুবিশাল এই প্রতিষ্ঠানের সাথে তার টানাপোড়নের সম্পর্ক নতুন ভাবে গড়তে এবং ইরানের অভ্যন্তরে ততক্ষণ গুগলকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিতে ইচ্ছুক, যতক্ষণ সে দেশটির “সংস্কৃতিক শর্তাবলীর” প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে থাকবে। এই ঘোষণায় পরিষ্কার করা হয়নি যে শর্তাবলী আসলে কি কি, এবং ইরানের অভ্যন্তরে গুগলের কি কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে।
এই রোববার ফার্স নিউজ এজেন্সিকে ( এই সংবাদপত্রের নিজস্ব ওয়েবসাইটের দাবি অনুসারে এটি এক স্বাধীন সংবাদ সংস্থা, কিন্তু সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে এটি সরকারপন্থী পত্রিকা) ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপমন্ত্রী নাসরাল্লাহ জাহানগার্দ বলেন:
আন্তর্জাতিক বাজারে যাদের বিচরণ এবং যারা ইরানে সেবা প্রদান করে চায় আমরা তাদের সকলের বিরোধিতা করি না, ইরানের সংস্কৃতিক শর্তাবলী গ্রহণ করলে আমরা ইরানের বাজারে তাদের সেবা প্রদানের বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত…একই সাথে আমরা এই অঞ্চলে গুগল এবং অন্য যে কোন কোম্পানিকে এদেশের সম্ভাবনা এবং সুবিধা দুটো প্রদানেও ইরান প্রস্তুত।
এক ইরানী ডোমেইন না পাওয়ার বাস্তবতা ছাড়াও গুগলের বিভিন্ন সহযোগী প্লাটফর্ম (অন্যান্য সাইট) বছরের পর বছর ধরে ইরানের সেন্সরশিপের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
সম্পূর্ণ রূপে গুগলের মালিকানাধীন ভিডিও প্রদর্শন করা সাইট ইউটিউব, ২০০৬ সালে প্রথম ইরানে বন্ধ করা হয়, কারণ এই সাইটে রাখা এক জনপ্রিয় ভিডিও যার উপাদান ছিল অনৈতিক উপাদান সমৃদ্ধ- যে ভিডিও ইরানের এক ধারাবাহিক নাটকের তারকাকে দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় তবে ২০০৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর পুনরায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, এরপর বন্ধ করা হয়, এরপর আবার এই ইউটিউব বন্ধের নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয় ২০১২ সালে ইনোসেন্স অফ মুসলিম নামের চলচ্চিত্রের ট্রেলর বা বিজ্ঞাপনের জন্য নির্মিত খণ্ড অংশ ইউটিউবে মুক্তি পাওয়ার পর।
ইনোসেন্স অফ মুসলিম বিতর্ক এক সাথে সরকারকে সাময়িক ভাবে জিমেইল বন্ধের মত ঘটনার দিকে ঠেলে দেয়। বর্তমানে ইরানে জিমেইল চালু রয়েছে, তবে ইউটিউব এখনো সেখানে বন্ধ হয়ে আছে।
উপমন্ত্রী স্বীকার করেন যে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশী কোন কোম্পানির সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে সরকারের ভেতরে সমালোচনা মূলক অবস্থান রয়েছে, কিন্তু তিনি বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নয় এমন কোম্পানির সাথে “ইরানে আসন্ন কার্যক্রম পরিচালনা” নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মে ২০১৩-এ যুক্তরাষ্ট্র, ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত তথ্য যোগাযোগ বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত তথ্য যোগাযোগ বিষয়ক যন্ত্রপাতি, টাকা দিয়ে কিনতে হয় যে সব সফটওয়্যার এবং তৎক্ষণাৎ বার্তা প্রদান সেবা এখন ইরানে বিক্রি করা যাবে। এই সেদিন, আগস্ট ২০১৩-এ গুগল তার নিজস্ব এ্যাপস সেন্টার গুগল প্লে স্টোরকে ইরানের অভ্যন্তরে কার্যক্রম পরিচালনা অনুমতি প্রদান করে।
এই ধরনের ভঙ্গুর অবস্থায় কার্যক্রম পরিচালনা গুগলের জন্য নতুন কিছু নয়। ডিজিটাল অধিকারের সমর্থনে নিজের বিরক্তির খানিকটা প্রকাশ করে, আদতে এই কোম্পানি চীনের কঠোর সেন্সরশীপ নীতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিল, তবে চীনা ভিত্তিক কিছু হ্যাকার কোম্পানির উপাদান বড় আকারে হ্যাক করা শুরু করলে গুগল তার কৌশল পরিবর্তন এবং জিমেইল একাউন্ট ২০১০ সালে উভয়ের সম্পর্কের মাঝে অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।;
হ্যাকিং-এর ঘটনার সাথে সাথে গুগল তার চীনের সকল কার্যক্রম হংকং-এ প্রতিস্থাপন করে যার মধ্যে গুগল.সিন (গুগল চীন) থেকে ডোমেইন গুগল.কম.এইচকে (গুগল হংকং)-এ পরিণত করে, যা চীনের সেন্সরশীপ এবং নজরদারির বিষয়বস্তু নয়।
একই সাথে ইরানের টেলিকমিউনিকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানির (টিসিআই) ঘোষণা নির্দেশ করছে যে ইরান যত তাড়াতড়ি, সম্ভব হলে অক্টোবর ২০১৩-এর মধ্যে গুগলের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ার উদ্যোগ গ্রহণে ইচ্ছুক ছিল। টিসিআই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঘোষণা প্রদান করেছিলেন যে তার এই প্রতিষ্ঠান একটি ডাটা সেন্টার স্থাপনে আগ্রহী যেখানে গুগল এবং ইয়াহু তাদের ইরান ভিত্তিক গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে, যেমনটা তারা তুরস্কের মত রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে করে থাকে।
Nothing new in Jahangard's comments about Google in Iran, TCI requested local caches over a year ago. http://t.co/0CcQLxloU1
— Collin Anderson (@CDA) March 1, 2015
ইরানে গুগলের কার্যক্রমের বিষয়ে জাহানগার্দের মন্তব্যে নতুন কিছু নেই, টিসিআই এক বছর আগেই স্থানীয় এক তথ্য সংরক্ষণাগার স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছিল।