
২০ বছর বয়সী অজ্জিকেন আসলানের ছবি। তুরস্কের মার্সিনে তাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ছবিটি ব্যাপক আকারে শেয়ার হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২০ বছর বয়সী অজ্জিকেন আসলান ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে নিখোঁজ হয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ, শুক্রবারে নদীর পাড়ে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২৬ বছর বয়সী একজন বাস চালক তাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
সুফি আলটিনদোকেন নামের ওই বাস চালকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটি ওই বাস চালকের গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিল। বাস চালকের জবানবন্দি অনুযায়ী, প্রথমে সে মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু মেয়েটি বাধা দেয়। একপর্যায়ে, তাকে ছুরিকাঘাত করে। এতে মেয়েটি মারা যায়।
হত্যা করার পরে আলামত ধ্বংস করার জন্য আলটিনদোকেন, তার বাবা এবং বন্ধু ফাতিহ গোকি মিলে লাশটি পুড়িয়ে ফেলে।
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে
তুরস্কে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন প্রাত্যহিক রুটিনে পরিণত হয়েছে। তবে একজন অল্প বয়সী নারীর এমন দু:খজনক হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। সাধারণ জনতা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। যখন আসলানের লাশ পাওয়া গেল, তখন হাজার হাজার জনতা ন্যায় বিচারের দাবিতে এবং নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন।
আসলানের নৃশংস মৃত্যুর খবর শুনে ট্র্যাবজোন শহরে হাজারো জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। সেই সংক্ষুব্ধ জনতার ছবি রইলো নিচে:
Trabzon'da binler Özgecan Aslan için sokakta.. pic.twitter.com/wCdBOycSOM — BORDO ∞ MAVİ (@1967_TRABZON_) February 15, 2015
অজ্জিকেন আসলানের জন্য ট্র্যবজোনের হাজারো জনতা রাস্তায় নেমেছে।
আসলানের ঘটনার আলোচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা #অজ্জিকেনআসলান, অজ্জিকেনের জন্য কালো কাপড় পরিধান করুন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন।
Can you stand with us? Wear BLACK for #ÖzgecanAslan on FEBRUARY 16 !!! pic.twitter.com/m4mKYBDW48 — Yağmur (@sebihayagmur) February 15, 2015 [Protected tweet]
আপনি কি আমাদের সাথে রাস্তায় নামতে চান? তাহলে ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে #অজ্জিকেনআসলান-এর জন্য কালো কাপড় পরে আসুন।
Kızlara çığlık atmayı öğreteceğinize,erkeklere adam olmayı öğretin #ÖzgecanAslan #OzgecanİcinSiyahGiy — emelço (@emelcanturkan) February 15, 2015
নারীদের কীভাবে প্রতিবাদ করতে হবে তা না শিখিয়ে পুরুষদের কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখান। #অজ্জিকেনআসলান #Ozgecanicinsiyahgiy.
সীমাহীন অন্ধকারের গল্প
আসলানের নৃশংস হত্যাকাণ্ড তুরস্কে একটি হ্যাশট্যাগের জন্ম দেয়। সেটা হলো: আপনার গল্পও বলুন। এটার মাধ্যমে তুরস্কের নারী জীবনের সহিংস অভিজ্ঞতার বয়ান উঠে আসে। টুইটারে পাওয়া কয়েকটি অভিজ্ঞতার বয়ান শুনুন তাহলে:
#sendeanlat Gece geç saatlerde minibüs, dolmuş veya otobüste tek kadın olduğumu farkedince tedirgin oluyorum #TürkiyedeKadınOlmak — Canan Coşkun (@canancoskun) February 15, 2015
রাতের বেলায় বাসে, মিনিবাসে কিংবা ডুলমাসে (এক ধরনের গণপরিবহন) যখন নিজেকে একা আবিস্কার করি, তখন খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। #sendeanlat.
Peki ya durakta otobüs, yol kenarında taksi beklerken arabayla yanaşıp, inatla önünde durup bekleyen herifler #sendeanlat — Hale A. (@hale_akay) February 15, 2015
বাস স্টপেজে কিংবা রাস্তায় আপনি যখন গাড়ির অপেক্ষায় থাকেন, তখন কোনো পুরুষ আপনার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলে কেমন লাগে? #sendeanlat
#sendeanlat Bir de sürekli gelen psikolojik taciz yöntemleri: ‘beceremezsin’, ‘zayıfsın’, vs vs. — Özge Mumcu Aybars (@ozge_mumcu) February 15, 2015
নিজের নির্যাতনের শিকার হওয়ার গল্প বলার পর মানসিক নির্যাতন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়: তুমি এটা করতে পারো না, তুমি দূর্বল ইত্যাদি।
Bu hashtag'de yazılanlara bakıp, bir de yazılıp yazılıp gönderemeden silinen twitleri düşünün. Dilimiz varmaz anlatmaya. #sendeanlat — feyza (@zfeyza) February 15, 2015
এই হ্যাশট্যাগের অধীনে কিছু লেখার বিষয় চিন্তা করলাম। পরে কল্পনায় দেখতে পেলাম, যা টুইট করতে চাই, তা পোস্ট না করে ডিলিট করে দিয়েছি। সহিংসতার গল্প বলা সম্ভব নয়। #sendeanlat
সুশীল সমাজ প্রায়ই নারীর প্রতি সহিংসতা ও লিঙ্গ সমতা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এবং ক্ষমতাসীন জাস্টিস পার্টির সমালোচনা করে থাকে। যদিও ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে আনাতায়ায় আসলানের আয়োজিত সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আহমেত ডাভুতোগলু বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তিনি তাই নিবেন। যদিও এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার এখন পর্যন্ত যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব পেশ করেনি।
রাষ্ট্রের মধ্যে আইডিয়ার অভাব থাকলেও নুরুল্লাহ আরডিকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আলোচনায় যোগ দিয়েছেন। তবে আরডিকের নারীদের জন্য সংরক্ষিত গোলাপি বাসের ধারণা তুর্কি সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত লিঙ্গীয় কুসংস্কার সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখবে না।