- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের প্রতিবাদ করায় নিষিদ্ধ হলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশ, ভারত, অ্যাক্টিভিজম, চলচ্চিত্র, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, ব্যবসা ও অর্থনীতি, ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি
এফডিসি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র। ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে। [1]

এফডিসি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র। ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে। সি সি বাই ৩.০।

বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন চলচ্চিত্রের শিল্পী ও কর্মীরা। আর এই প্রতিবাদকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির সবচে’ জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা শাকিব খান। এজন্য শাকিব খান অভিনীত সিনেমা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হল মালিকরা [2]

এদিকে ভারতীয় সিনেমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চললেও ৬০টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে সালমান খান অভিনীত ‘ওয়ান্টেড’ সিনেমাটি।

ভারতীয় সিনেমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণ হিসেবে দেশটির চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে। অন্যদিকে সিনেমা হল মালিকরা বলছেন, টিকেট বিক্রি না হওয়ার কারণে তাদের ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এজন্য তারা হিন্দি সিনেমা চালিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চাইছেন।

আগামীতে আর কোনো ভারতীয় সিনেমা আমদানি করা হবে না এমন সরকারি আশ্বাসে [3] আন্দোলন স্থগিত করেছেন চলচ্চিত্রকর্মীরা।

উল্লেখ্য, গত দশকে প্রায় হাজারের মত সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগে যেখানে বছরে ১০০টির মতো সিনেমা তৈরি হতো, এখন সেটা নেমে এসেছে ৩০-৪০টিতে। [এ নিয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস প্রতিবেদন দেখুন [4]]

সিনেমা শিল্পকে বাঁচাতে, সিনেমা হলে আগের মতো দর্শক ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ হিসেবে সরকার ভারতীয় ছবি আমদানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রথম উদ্যোগ নেয় ২০১০ সালে [5]। ১৯৬৫ সাল থেকে বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমা নিষিদ্ধ। তবে স্থানীয় শিল্পী ও নির্মাতাদের চাপে সরকার আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৫ সালে আবার হিন্দি চলচ্চিত্র দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।

এদিকে সিনেমা হল মালিকরা যার ছবি তাদের হলে প্রদর্শনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন সেই শাকিব খান তার ফেসবুক ফ্যান পেজে [6] লিখেছেন:

কোন একটি দেশকে ধ্বংস করার প্রথম শর্ত সেই দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেওয়া। বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমা মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কুচক্রিমহল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নয়, দেশ ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।

কল্লোল মোস্তফা [7] মনে করেন ভারতীয় ছবি আমদানির মধ্যে দিয়ে হিন্দীভাষা আর আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি আরো জাকিয়ে বসবে:

আমি বিদেশী ছবি আমদানীর বিপক্ষে নই। বরং সারা দুনিয়ার মানসম্পন্ন ছবি যেন দেশের মানুষ দেখতে পারে সেটাই আমার কাম্য। কিন্ত সেটা এখন যেভাবে বাজারি প্রতিযোগীতার মাধ্যমে করার কথা বলা হচ্ছে তার পক্ষে নই। কারণ বাজার দেখে মুনাফা, মুনাফার প্রয়োজনে বাজার বাজারি ছবিই আমদানী করবে আর তার সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে এদেশের চলচ্চিত্রের পুরো বিলুপ্তি ঘটবে নতুবা আরও অধগতি হবে আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হিন্দীভাষা আর আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি আরো জাকিয়ে বসবে।

হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াহিদ ইবনে রেজা [8] লিখেছেন:

সিনেমার বড় পর্দায় আমাদের অনেক নিজস্ব গল্প আছে বলার। এই গল্প বলার অধিকার ছিনিয়ে নেবার অধিকার পৃথিবীর কারো নেই।

হিন্দি চলচ্চিত্র দেখানো হলে তা বাংলায় ডাবিং করে প্রদর্শনের দাবি করে ব্লগার হিমু [9]লিখেছেন:

বাংলাদেশের দাপ্তরিক ভাষা দুটি, বাংলা ও ইংরেজি। এর বাইরে অন্য কোনো ভাষার চলচ্চিত্র নিয়ে যদি প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা ব্যবসা করতে চান, সেক্ষেত্রে বাংলায় ডাবিংকে অবশ্যপালনীয় শর্ত হিসেবে রাখা হোক। একই সাথে এ ডাবিং হতে হবে বাংলাদেশের কোনো ডার্বিং স্টুডিওতে, এমন শর্তও আরোপ করা হোক।

এদিকে সাংবাদিক, ব্লগার রেজাউর রহমান রিজভী [10] ভিনদেশি সকল চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কথা বললেও আরেক ব্লগার একুশ তপাদার [11] পৃথিবীর সকল ভাষার সিনেমা হলে প্রদর্শনের দাবি জানিয়েছেন:

নির্লজ্জ নকলবাজরা যখন বলে তমুক দেশের সিনেমা চালালে আমরা সিনেমা বানানো বন্ধ করে দেব তখন সেটা জাতির জন্য আর্শীবাদ 🙂
পৃথিবীর সমস্ত দেশের, সমস্ত ভাষার সিনেমা দেখতে চাই।

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচে' ব্যবসা সফল ছবি। ছবিটি আয় করেছিল ১৫ কোটি টাকা। ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে। [12]

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচে’ ব্যবসা সফল ছবি বেদের মেয়ে জোসনা। ছবিটি আয় করেছিল ১৫ কোটি টাকা। ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে।

বাংলাদেশের অনেক সিনেমার গল্প, গান ভারতীয় সিনেমার নকল, এমনকি নায়কদের উপাধি পর্যন্ত্ও নকল, সেজন্য ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রীতম আহমেদ [13] লিখেছেন:

এদেশে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের দাবি তোলার আগে আমি দাবি জানাই বাংলা সিনেমার নায়কদের নামের পাশে বোম্বে ইন্ডাস্ট্রি থেকে ধার নেয়া “খান” উপাধি লাগানো বন্ধ করেন । যে দাদা ভাইদের নামের অংশ নিজের নামের সাথে জুড়ে দিয়ে নায়ক স্ট্যাটাস নিয়েছেন, যে দাদা ভাইয়ের ব্রেসলেট থেকে শুরু করে চুলের ডিজাইন পর্যন্ত নকল করছেন সেই দাদা ভাইয়ের বিরুদ্ধে লড়বেন কি ধইঞ্চা হাতে ??

ঢালিউড কড়চাও [14] প্রীতম আহমেদের কথার প্রতিধ্বনি করে বলেছেন:

হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনে এতো জোরালো বাধা ও হিন্দি সিনেমার প্রতি এতো তীব্র ঘৃণা থাকার পরেও তাদের সিংহভাগ সিনেমা কেন হিন্দি সিনেমার কপি পেস্ট? এই নকলের ব্যাপারে তাদের জোরালো কোন ভূমিকা কখনো দেখা যায় না কেন? তাহলে প্রতিবাদের কারণ কি নিজেদের অক্ষমতা? ভালো, মৌলিক ও মেধা না খাটিয়ে সিনেমা বানাতে চাওয়া? অথবা নকল ধরা পড়ার ভয়?

সাংবাদিক, ব্লগার মাহবুব মোর্শেদ [15] লিখেছেন:

এইসব টিভি চ্যানেল আর এইসব সিনেমা আর এইসব এফডিসি দিয়া ভারতীয় বিনোদন আধিপত্য ঠেকানো যাবে না। নিজস্ব বাজার সংরক্ষণের নামে আবাল পোষার দিন শেষ। কচু বনের শেয়াল রাজাদের দেখে দেখে হয়রান হয়ে গেলাম।
এবার নতুন কিছু করো।