বাংলাদেশে গত একমাসের বেশি সময় ধরে চলছে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি। আর এই কর্মসূচি চলাকালে নাশকতায় প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
এবারের অবরোধ-হরতালে বোমা, পেট্রোল বোমা, আগুন আর সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১০০ জনের ও বেশি লোক৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা আর আগুনে নিহত হয়েছেন। যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে ১০০০ এর ও বেশি। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন আরও শ খানেক৷
সরকারের পদত্যাগ এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট গত ৫ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে অবরোধের ডাক দেয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাছাড়া নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিও কম ছিল। সে সময়েও সহিংসতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। [এ বিষয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস প্রতিবেদন পড়ুন এখানে]
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভাব দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও৷ অবরোধের আগুনে ঝলসে যাওয়া মানুষের আহাজারির প্রতিধ্বনিত হয়েছে নেটিজেনদের কিবোর্ডে।
লেখক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন:
আমরা খুব দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন খবরের কাগজে মানুষ পুড়িয়ে মারার ছবি দেখে, মানুষকে হত্যা করার খবর পড়ে দিন শুরু করতে হয়। মাঝে মাঝে খবরের কাগজটি সরিয়ে রাখি, যেন চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিলেই সেই দুঃসহ ঘটনাগুলো জীবন থেকে সরে যাবে।
অর্থনীতিবিদ শামীম আহমেদ প্রতিদিন আগুনে পোড়ার শঙ্কা নিয়ে যেভাবে রাস্তায় চলাফেরা করেন, তাই তুলে ধরেছেন:
[…] পত্রিকায় পোড়া লাশের ছবি আসে, মনে হয় এইচবিওতে ‘মমি’ মুভিটা দেখছি। অস্থির লাগে। এইসব চিন্তা করতে করতে গাড়ির জানালা তুলে দিই। এসিটা ছেড়ে দিই অন্যমনস্কভাবেই, মনে হয় একটা ফায়ার ডিস্টিংগুইসার কিনতে হবে সহসা। গাড়িতে আগুন লাগলে শুধু তা নেভাতে না, বরং নিজে গাড়ি থেকে নেমে পালানোর একটু সুযোগ তৈরি করে নেবার জন্য।
সামহোয়্যারইনে ব্লগার সুপ্ত আহমেদ মানুষ পুড়িয়ে মারার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন:
[…] আমি রাজনীতি বুঝিনা, মানুষ বুঝি!!আমি ক্ষমতা বুঝি না, একটা নিরাপদ বেঁচে থাকা বুঝি!!
শাওন চৌধুরী ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক সহিংসতাকে বধ্যভুমির সাথে তুলনা করে লিখেছেন:
গুলি আর ক্রসফায়ারের পর এবার বাসে পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ জনগণ হত্যা। এভাবেই কি শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য দেশটা বধ্যভূমিতে পরিণত হবে?
— শাওন চোধুরী (@BdChowdhury) February 3, 2015
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের দাবি, তারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছেন। তবে বাসে বোমা হামলাকে গণতান্ত্রিক অধিকার মনে করেন না মুনাজির হোসাইন সাঈদ:
Throwing bombs at public buses is not a #DemocraticRight
Is #BNP at war with @albd or #Bangladesh?
#shahbag
— Munazir Hussain Syed (@Munazir43rd) February 1, 2015
পাবলিক বাসে বোমা হামলা গণতান্ত্রিক অধিকার নয়। বিএনপি আওয়ামী লীগ অথবা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
শাহ আলী ফরহাদ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন:
As death toll from BNP-Jamaat violence mounts in #Bangladesh, govt must take concrete & immediate steps to ensure people's right to security
— Shah Ali Farhad (@shah_farhad) February 7, 2015
বিএনপি-জামাতের সহিংসতায় প্রতিদিন মানুষ মরছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে দ্রুত, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে সরকারকে পদত্যাগের আহবান করে জালাল তরফদার টুইট করেছেন:
কোন আলোচনায় বাংলাদেশে শান্তি আসবে না যতক্ষন সরকার পদত্যাগ না করছে আর তত্বাবদায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে,… http://t.co/lDMWNH2Qsx
— Jalal Tarafdar (@jalaltarafdar) January 31, 2015
এদিকে টানা অবরোধ-হরতালে শুধু প্রাণহানি নয়, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এই কর্মসূচির কারণে দেশের অর্থনীতির ৭৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ১৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। পণ্য পরিবহন সংকটের কারণে বেড়ে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও।
1 টি মন্তব্য
পুরো বিশ্বে এই সহিংসতা নিয়া এত কথা বার্তা হচ্ছে কিন্তু সমাধানতো এখনও আসলো না। আর কত মৃত্যু দেখবে এই বাংলা????