
“ফালক্রিক-এ কোন ফ্রাকিং নয়”; শান্তিপূর্ন বিক্ষোভকারী “দি পিপলস ভয়েস”-এর ডাক, রোববার ২ ডিসেম্বর ২০১৪। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী রিক ল্যান্ডার-এর। সিসি বাই-এনসি-এসএ ২০।
৩৫০.অর্গের নামক সংগঠনের জন্য থেলেমা ইয়াং এই প্রবন্ধটি লিখেছে, যা বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনের এক কারিগর এবং প্রবন্ধ শেয়ার করার এক চুক্তি অনুসারে গ্লোবাল ভয়েসেস-এ পুনরায় এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব সম্প্রদায় দীর্ঘ সময় ধরে এবং কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানী উত্তোলন করা কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই এ অর্জন করা জয়কে প্রত্যক্ষ করতে পারল। এখানে এ রকম পাঁচটি বিজয়ের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
১ কার্সন, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
এখানে বসবাসরত সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে লড়াই করে গেছে, এবং অবশেষে এ বছরের জানুয়ারি মাসে ক্যালিফোর্নিয়া রিসোর্স কর্প নামক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাবিত ২০০ জ্বালানি কূপ খনন প্রকল্প বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখানে তাদের কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা যে পানি পান করি তা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হবে না, আমরা যে বিশুদ্ধ বায়ুতে শ্বাস নেই তা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হবে না..। আমরা আমাদের জীবন কি ভাবে কাটবে তা নিয়ে কথা বলছি- ডিয়ানে থমাস, ক্যালিফোর্নিয়া কমিউনিটি গ্রুপ।
২. স্কটল্যান্ড
হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই শুনেছেন–স্কটল্যান্ড ফ্রাকিং-এর ( মাটি, পাথর, ইত্যাদি শক্ত এলাকায় খননের আগে সেখানকার গ্যাসের ভেতরে প্রবল চাপের মাধ্যমে পানি মিশিয়ে দেওয়া) মাধ্যমে খননের বিষয়ে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। স্কটল্যান্ড বুঝতে পেরেছে নিরাপদ ফ্রাকিং-বলে আসলে কিছু নেই- এটি নাগরিক, এই পৃথিবী এবং পরিবেশ করো জন্য নিরাপদ নয়।
তবে এই পদক্ষেপ বিস্তৃত আকারে গ্রহণ করা হয়নি, বিশেষ করে ভুগর্ভস্থ্য কয়লাকে গ্যাসে রুপান্তরিত করা মত বিষয় এতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি- এটা হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে মাটির নীচে কয়লাকে জ্বালানো হয় এবং সেটা থেকে উৎপন্ন হওয়া গ্যাস মাটির উপরে সংগ্রহ করা হয়, তবে তারপরেও এটা বেশ বড় ধরনের এক জয়।
আজকের এই দিনে সরকারের গ্রহণ করা এই সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও সম্প্রদায়ের এক ঐকান্তিক ইচ্ছার ফসল, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলো এই শিল্পের বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে লড়ে গেছে–ফ্রেন্ডস অফ দি আর্থ স্কটল্যান্ড।
৩. চিলির মাউলে এলাকার সমুদ্র উপকূল
২০০৭ সালে এখানে প্রথমে ৭৫০ মেগাওয়েটের এক কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়, এরপর বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলন ও বিভিন্ন নাগরিক উদ্যোগ, মাউলে উপকূল রক্ষায় লড়াই করে গেছে। তারা তারা ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই করে গেছে যতক্ষণ পর্যন্ত না, এইএস জেনার নামক কোম্পানিকে প্রদান করা অনুমতি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় এবং এই প্রকল্পটির ইতি ঘটে। এখানে তাদের কাহিনী উল্লেখ করা হল।
এই সম্প্রদায় তাদের নিজেদের উন্নয়নের ধারা নির্ধারণ-এ সংগঠিত, সক্রিয় এবং জোরালো ছিল- রড্রিগো ডে লা ও, যিনি মাউলে ইটাটা উপকূল রক্ষা পরিষদের আহবায়ক এবং ওয়াটারকিপার এলায়েন্সের একজন সদস্য।
৪. সাও পাওলো, ব্রাজিল।
পশ্চিম সাও পাওলোয় গ্যাস অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ও একই সাথে ফ্রাকিং-এর উপর স্থগিতাদেশ জারির বিষয়টি এক বিচারক নিশ্চিত করেছে। পর্তুগীজ ভাষায় এই কাহিনী পাঠ করুন।
৫. ম্যারিকভিল, অস্ট্রেলিয়া
২৭ জানুয়ারি তারিখে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে-এর এক শহর ম্যারিকভিল কাউন্সিল জীবাশ্ম জ্বালানী খাতে বিনিয়োগ করার বিরুদ্ধে ভোট প্রদান করে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নগর পরিষদ এই বিষয়টি নিশ্চিত করবে যে বিনিয়োগের জন্য সংগৃহীত ১৫ মিলিয়ন ডলার আর এই কাজে বিনিয়োগ করা হবে না, পরিষদের উদ্দেশ্য ছিল বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে তোলা। এখানে তাদের এই কাহিনীটি রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই-এ ম্যারিকভিল পরিষদের এক জোরালো প্রতিশ্রুতি রয়েছে, দূষণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে আমরা সেই সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেব যারা জীবাশ্ম জ্বালানী বিনিয়োগ এড়িয়ে চলে, যেমন দি গ্রেট ব্যারিয়ার রীফের কয়লা বন্দর, অথবা ক্যামডান-এর কয়লা থেকে গ্যাস তৈরীর প্রকল্প, “এই কথা গুলো উচ্চারণ করেছেন পরিষদে সদস্য ম্যাক্স ফিলিপস, যিনি জীবাশ্ম জ্বালানী মুক্ত পৃথিবী নামক আন্দোলন পরিচালনা করেন।
তবে এই লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি, বিশ্বের ছয়টি মহাদেশের ৫৮টি দেশে ৫০০ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৩ ও ১৪ তারিখ “বিশ্ব বিনোয়োগ হ্রাস দিবস” (ওয়ার্ল্ড ডাইভেস্টমেন্ট ডে) উদযাপিত হয়েছে। বিশ্বের নাগরিকরা জীবাশ্ম জ্বালানী শিল্পখাতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে, এক পরিষ্কার বার্তা প্রদান করবে যে জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ শেষ এবং পরিষ্কার, নবায়ন যোগ্য জ্বালানির উৎস গ্রহণে নিজেদের রূপান্তরিত করা দরকার, যাতে পৃথিবী ও তার মানুষদের রক্ষা করা যায়।