আপনার ফোন নষ্ট হয়ে গেছে, হার্ড ড্রাইভ ক্র্যাশড করেছে, ব্যাংকের কর্মী খারাপ ব্যবহার করেছে, অর্ডার দেয়া পণ্য এখনো এসে পৌঁছায়নি? আপনি যদি ভারতে বসবাস করেন, তাহলে এটা কোনো ব্যাপারই না। আপনার দু:খের কথা বলার একটা জায়গা আছে। আর সেটা হলো সামাজিক মিডিয়া।
ভারতে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। আর সেই সাথে বাড়ছে ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য অনলাইন ফোরাম ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এতে করে ভোক্তারা এসব প্ল্যাটফর্মে এসে ব্র্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের কথা বলতে পারেন। ভারতে যারা অনলাইনে কেনাকাটা করেন, তাদের ২৫% ব্র্যান্ডগুলোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতি সম্পর্কে জানেন। [2] তাই তারা ভোক্তা স্বার্থ আদালতে যাওয়ার আগে অনলাইনে তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।
Yo @myntra [3] …stop with the contest and sale nonsense and focus on delivering orders. Still haven't got my order from god knows how long ago
— shahnazb (@shahnazb) January 21, 2015 [4]
শোনেন @মিন্ত্রা… এইসব হাবিজাবি প্রতিযোগিতা বন্ধ করে অর্ডার দেয়া পণ্য পৌঁছানোর উপর মনোযোগ দেন। এখনো আমার অর্ডার করা পণ্য আসেনি। ঈশ্বরই জানেন, কতো দিনে এসে পৌঁছাবে।
So @VodafoneIN [5] won’t pull out incoming number of guys who conned me out of 8k. Says they don’t keep tracking of incoming calls. True?
— mitali parekh (@pMitali) January 11, 2015 [6]
ভোডাফোন ইন্ডিয়া ইনকামিং কলের তথ্য দিতে পারলো না। বললো, তারা ইনকামিং কলের ট্র্যাক রাখে না। এটা কি সত্যি?
After all of it @flipkart [7] offered me a compensation of ₹50 Seriously that's how much you “Value” your customers!! #FlipkartSucks [8] #Flopkart [9]
— kashyap kapoor (@Kashyapkapoor20) January 21, 2015 [10]
অবশেষে ফ্লিপকার্ট আমাকে ৫০ রুপি ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়েছে। সত্যিই, ক্রেতাদের কীভাবে মূল্যায়ন করতে হয়, তার উদাহরণ এটা! #ফ্লিপকার্টপচা
অনলাইনে ভোগান্তির কথা তুলে ধরার কারণ খুব সাধারণ। সন্তুষ্ট ভোক্তারা যেমন পণ্য ও সেবা সম্পর্কে ইতিবাচক কথা লিখেন, তেমনি অসন্তুষ্ট ভোক্তারা তাদের সার্কেলে ব্র্যান্ডের সমালোচনা করে নানা কথা বলেন। এসি নিয়েলসন এবং অ্যাবসলিউটডেটার গবেষণায় দেখা গেছে [11], প্রায় ৪০ মিলিয়ন ভারতীয় তারা কী কিনেছেন, সেটা কেমন সে বিষয়ে অনলাইনে রিভিউ লিখে সবাইকে জানান। তাছাড়া ৬৭% এর বেশি ভারতীয় যারা অনলাইনে আছেন [2], তারা কোনো কিছু কেনার আগে অনলাইনে রিভিউ পড়ে থাকেন।
তাই ভোক্তারা অনলাইনে ব্র্যান্ড সম্পর্কে কী বলছে, তাদের অভিযোগগুলো কীভাবে সমাধা করা হবে, সেটা নিরীক্ষণ করা অতি জরুরি।
Any feedback is good feedback? Companies tracking consumer comments on social media platforms – http://t.co/XzxeVPxmsO [12]
— Business Today (@BT_India) May 7, 2013 [13]
যেকোনো মন্তব্য কি ইতিবাচক সমালোচনা? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোক্তারা কী মন্তব্য করছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তার গতিবিধি অনুসরণ করছেন।
এটা শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল নয়। মাউথশাট.কম (Mouthshut.com), কঞ্জিউমার কমপ্লেইন্টস (Consumercomplaints.in) এবং অনলাইন ফোরামের মতো ভোক্তা পর্যবেক্ষণ এবং সমালোচনা সাইটগুলো [14] অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভোক্তারা এখানে গ্যাজেট থেকে জামাকাপড়, চারাগাছের [15] ডেলিভারি ব্যবস্থা থেকে সবকিছুর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। প্রায় ১ কোটি ভারতীয় অনলাইন ফোরামগুলোতে সক্রিয় রয়েছেন। দেশের অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিচারে এটা অনেক।
Horrible Maternity/Gynecology hospital experience in Bangalore http://t.co/PYVaBv0WoF [16] pic.twitter.com/kGtD7UMOGZ [17]
— Syed Sadiq (@SadiqmPower) January 18, 2015 [18]
ব্যাঙ্গালোরের একটি গাইনোকোলজি হাসপাতালে বীভৎস অভিজ্ঞতা হলো।
Perfect example of paid social media Fail. Read the review and then read the comments: http://t.co/ZNh05wndxB [19]
— Chidiya Rani (@SomeBirdie) January 16, 2015 [20]
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যর্থতায় কী ক্ষতি হয়, তার আদর্শ উদাহরণ। রিভিউ আর মন্তব্যগুলো পড়ুন।
এছাড়া ব্র্যান্ডগুলোর আর কোনো পছন্দ নেই। তারা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো পর্যবেক্ষণে রাখবে, [21] অনলাইন ফোরামগুলোর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে সেবা দেয়ার মাধ্যমে ভোক্তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করবে। যদিও ভোক্তাদের অসন্তুষ্টি নিয়ে ব্র্যান্ডগুলোর উত্তর দেয়ার ক্ষমতা খুব সীমিত। কেন না, যেসব ভোক্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেন, তাদের ৪২% আশা করেন [22], কোম্পানি এক ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিবে।
সোশ্যাল ওয়েভলেন্থের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভোক্তারা কেনাকাটার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো মধ্যে টুইটারকে বেশি প্রাধান্য দেন [23]। আর এ কারণেই ই-কমার্স স্টোরগুলো টুইটারে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ই-কমার্স স্টোরগুলোর টুইটের ৪০% এর বেশি থাকে ভোক্তাদের নানা অভিযোগের জবাব।
হোমশপএইটিনের কথাই ধরুন। এই সাইটটি টুইটারে খুব সক্রিয়। তাদের টুইটের ৫০% এর বেশিই [24] ভোক্তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর। এই গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ইনফিবিম এবং ইন্ডিয়াপ্লাজা ছিল সবচে’ খারাপ অবস্থানে। তাদের টুইটের ৮০% এর বেশিই ছিল কৈফিয়তমূলক উত্তর।
@udian [25] Hi, Kindly share your customer Complaint no with us , so that we can take some action. Regards, Panasonic India
— Panasonic India (@PanasonicIndia) April 15, 2013 [26]
হ্যালো, দয়া করে আপনার ভোক্তা অভিযোগ নম্বর আমাদের সাথে শেয়ার করুন। তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবো। ধন্যবাদ, প্যানাসনিক ইন্ডয়া।
Without even registering a complaint, LG India sends me a complaint id. That's some customer service!
— Nikhil Narayanan (@nikhilnarayanan) April 3, 2013 [27]
অভিযোগ নিবন্ধন ছাড়াই এলজি ইন্ডিয়া আমাকে অভিযোগ আইডি পাঠিয়েছে। একেই বলে গ্রাহক সেবা!
I have, in the past, tweeted about poor customer complaint resolution practises in India. For once, @Airtel_Presence [28] has proved me wrong
— Aman Sharma (@amancool5) May 1, 2013 [29]
এর আগে আমি ভারতের বাজে গ্রাহক সেবার বিষয় নিয়ে টুইট করেছিলাম। এর মধ্যেই এয়ারটেল আমাকে ভুল প্রমাণিত করলো।
ই-কমার্স স্টোরগুলো পণ্যের মান, ফেরত প্রদান নীতি এবং ওয়েবসাইটের কারিগরি ক্রুটির পরেই অসম্পূর্ণ অর্ডার [30] বিষয়ে সবচে’ বেশি অভিযোগ পেয়ে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ তুলে ধরে এবং সেটার সমাধান পাওয়ার মাধ্যমে ভোক্তারা উপকৃত হলেও এটি ব্র্যান্ডের সুনামের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভোক্তাদের এমন অনেক অভিযোগ আছে যার যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই। এবং সে অভিযোগগুলো তারা একই সাথে বিভিন্ন প্লাটফর্মে করে থাকেন। আবার এমন উদাহরণও আছে যেখানে ব্র্যান্ড নিজেই ভোক্তা সেজে ইতিবাচক রিভিউ দেয়ার। [31] তাছাড়া এটাও নিশ্চিত করার উপায় নেই যে, যিনি রিভিউ লিখছেন, তিনি রিভিউ লেখার আগে পণ্যটি ব্যবহার করেছেন কি না।
সম্প্রতি ফ্লিপকার্ট মটো ই [32]বাজারজাতকরণের সময়ে একই ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফোন বাজারে আসার মাত্র বারো ঘণ্টার মধ্যেই ৮০০ এর বেশি রেটিং এবং ২০০ এর বেশি মন্তব্য জমা পড়ে। রিভিউয়ের বেশিরভাগই ছিল ইতিবাচক। তাছাড়া সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ ছিল, যারা মন্তব্য করছিলেন তাদের হাতে এই ফোনসেট ছিল না।
আজকের দিনে বিজনেস টু কনজুমার কোম্পানির ক্ষেত্রে সোশ্যাল কাস্টমার সার্ভিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাই ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগের প্রথম ক্ষেত্র হয়ে উঠে। ভোক্তারা ফোন ও ইমেইলের মাধ্যমে ব্র্যান্ড নিয়ে তাদের সমস্যাগুলো অবহিত করতে পারেন। কিন্তু ঘটনা হলো সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা অনলাইন ফোরামে ভোক্তাদের ভোগান্তির কথা উঠে আসলে ব্র্যান্ডগুলো চাপের মুখে [33]পড়ে। তখন তাদেরকে অতি দ্রুত সমস্যা সমাধানের উপায় বাতলে দিতে হয়। ভারতে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ অনলাইনে এইসব সমস্যার বিষয়গুলো তুলে আনেন। আর তাই সোশ্যাল মিডিয়ার এই ভুমিকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সংকটপূর্ণ হয়ে উঠছে [34]।